বিদেশের মাটিতে স্পিনারদের বলে আউট হওয়া ‘ক্রাইম’: মুমিনুল

ডারবানে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশফাইল ছবি

বিদেশের মাটিতে স্পিনারদের বিপক্ষে আউট হওয়াটা ‘ক্রাইম’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। সে ‘ক্রাইম’টা অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন তাঁর দলের সব ব্যাটসম্যানই। কেশব মহারাজ ও সাইমন হারমার মিলেই নিয়েছেন বাংলাদেশের ১০ উইকেট। কোনো ইনিংসে সব উইকেটই নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনাররা, এমন ঘটনা ঘটল ১৯৫০ সালের পর প্রথমবারের মতো! সব মিলিয়ে ম্যাচে বাংলাদেশের ২০ উইকেটের ১৪টিই নিয়েছেন মহারাজ ও হারমার।

ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা বাংলাদেশকে টেস্ট সিরিজে আশা জুগিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ সারির পেসারদের না থাকাও। আইপিএলের কারণে অনভিজ্ঞ এক পেস আক্রমণ নিয়েই নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে টসে জিতে বাংলাদেশ নিয়েছিল বোলিং, সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে যারা নেমেছিল একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে। চতুর্থ ইনিংসে মহারাজ-হারমারের হুমকিটা ছিল তখন থেকেই।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ
এএফপি

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম ৪ উইকেট নিয়েই ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছিলেন অফ স্পিনার হারমার—ডারবানের এ উইকেটে কাজটা সহজ হবে না মুমিনুলদের। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য মূল ক্ষতিটা করেছেন মহারাজই, ৩২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনারের এটি সেরা বোলিং বিশ্লেষণ, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর চেয়ে ভালো বোলিংয়ের রেকর্ড আছে মাত্র দুজন স্পিনারের। দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যেতে মাত্র ১৯ ওভার সময় লেগেছে বাংলাদেশের—১৯ ওভারই করেছেন দুই স্পিনার।

দেশের বাইরে, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কন্ডিশনে পেসই মূল হুমকি থাকে বাংলাদেশের জন্য। এ ক্ষেত্রে হলো উল্টোটা। মুমিনুল ব্যাপারটিকে দেখছেন আরও বড় করেই, ‘আমার কাছে মনে হয়, বিদেশের মাটিতে এসে স্পিনারদের উইকেট দেওয়াটা অনেক বড় “ক্রাইম”। আমার কাছে মনে হয়, বিদেশে এসে স্পিনারদের উইকেট দিতে পারবেন না। ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেট দিতে পারবেন না স্পিনারদের, কারণ তাদের বিপক্ষে রান করার সুযোগ বেশি থাকে। আমার মনে হয় ব্যাটিং–ব্যর্থতা এটি।’

৩২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন কেশব মহারাজ
এএফপি

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং–ব্যর্থতার কোনো অজুহাতও খুঁজছেন না মুমিনুল, ‘হ্যাঁ, (এখানে এমন) উইকেট দেখে একটু বিস্মিত হয়েছি। তবে খুব বেশি বল ঘোরেওনি। আমরা বেশির ভাগ আউট হয়েছি সোজা বলেই, টার্ন করা বলে না। সত্যি বলতে দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক বাজে ব্যাটিং করেছি আমরা, এর কোনো অজুহাত নেই।’

বাংলাদেশ এ টেস্টে খেলেছে সাতজন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে চারজন বোলার নিয়ে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না বলেও মনে করেন মুমিনুল, ‘রিসোর্সটা বুঝতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়তো চার বা পাঁচ নম্বর দিনে গিয়ে বল ঘুরতে পারে। আমার হাতে যে কম্বিনেশন ছিল, তাতে আর কোনো অপশন ছিল না। একটা ব্যাটসম্যান বা বোলার কমাতেই হতো।’

বাংলাদেশের মতো দলের জন্য বিদেশের মাটিতে ছয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার সামর্থ্য এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করেন মুমিনুল
এএফপি

বাংলাদেশের মতো দলের জন্য বিদেশের মাটিতে ছয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার সামর্থ্য এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করেন মুমিনুল। অবশ্য ডারবানে হারের পেছনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং–ব্যর্থতার সঙ্গে প্রথম ইনিংসে বোলিংয়ের ‘দায়’ও দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘চার দিন আমরা অনেক ভালো চাপ তৈরি করতে পেরেছিলাম। তবে প্রথম ইনিংসে ৫০-৬০ রান বেশি দিয়ে ফেলেছি বলে মনে হয় আমার। ওই জায়গায় হয়তো একটু হড়কে গেছি। আর কালকের দিনে তিনটা উইকেট হারানোটা একটু ঝামেলা হয়ে গেছে, যেকোনো ফরম্যাটেই নতুন বলে তিনটা উইকেট হারানো অনেক চাপ তৈরি করে।’

প্রথম টেস্টে বড় হারের পরও দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ই জানিয়েছেন মুমিনুল। এ টেস্টে পেটের পীড়ায় খেলতে না পারা তামিম ইকবাল ফিরলে দলের শক্তিমত্তা বাড়বে বলে আশা করেছেন। অবশ্য পোর্ট এলিজাবেথে ৭ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে শরীফুল ইসলামের সঙ্গে তাসকিন আহমেদকেও পাবে না বাংলাদেশ। চোটের কারণে আগেভাগেই দেশে ফিরে আসছেন দুই পেসার।