মনের জানালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
১৭ বছর বয়সে প্রায় জোর করেই আমাকে বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাই। এখন আমার বয়স ২৮, মাস্টার্স পাস করে চাকরি করছি। আমি দেখতে বেশ সুন্দরী হওয়ায় অনেক ছেলেই বন্ধুত্ব করতে চায়, প্রেম করতে চায়। কিন্তু আগে আমার বিয়ে হয়েছিল শুনে সবাই পিছিয়ে যায়। অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসে, যাঁদের বাচ্চা আছে। আবার বাচ্চা না থাকলেও বয়স অনেক বেশি, যাঁদের সঙ্গে মানিয়ে চলার মতো মানসিকতা আমার নেই। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি কি ডিভোর্স দিয়ে ভুল করেছি? স্বামীর শারীরিক নির্যাতন ও অপবাদ সহ্য করেও কি আর দশটা মেয়ের মতো সংসার করার দরকার ছিল; নাকি আগের বিয়ে গোপন করে কাউকে বিয়ে করা দরকার? কাউকে ঠকানো কি ঠিক হবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তোমার সমস্যার পুরো দায়িত্ব আসলে তোমার অভিভাবকদের। তাঁরা শুধু তোমাকে এত বড় দ্বন্দ্বের মুখোমুখি করেননি, আইনের দৃষ্টিতেও এটি অপরাধ। কারণ, ১৮ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়ে হতে পারে না। তাঁরা তোমার অমতে জোর করে বিয়ে দিয়ে অনেক বড় অন্যায় করেছেন। তোমাকে অনেক অভিনন্দন যে তুমি এই প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছ। তোমার বয়সও খুব বেশি হয়নি এবং তুমি ইচ্ছে করলে আরও কোনো উচ্চতর ডিগ্রিও নিতে পারো। তোমার মনে এখন যে প্রশ্নগুলো ভিড় করছে, তা এই অসুস্থ সমাজের একটি মেয়ের মনে আসা খুব স্বাভাবিক। তবে আমি বলব, সারা জীবন নির্যাতন ও অপবাদ সহ্য করলে সেটি কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনে না। মিথ্যা কথা বলে একটি সম্পর্ক তৈরি করলে তার ভিত্তিটা গোড়া থেকেই নড়বড়ে হয়ে যায়। কাউকে এভাবে ঠকানো নীতিবিরোধী একটি কাজ। তুমি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো, যেখানে তোমার মূল্যায়ন হবে না, নামমাত্র একটি সংসারের সদস্য হয়ে তুমি তোমার মূল্যবান জীবনটি কাটাতে চাও কি না? আজকাল অনেকেরই অল্প দিনের মাথায় বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। এমন কোনো মানুষের সঙ্গে তোমার পরিচয় ঘটতে পারে, যার অতীতটিও তোমার মতো। সে যদি তোমাকে একটি মানুষ হিসেবে সম্মান করতে পারবে বলে মনে হয়, তাহলে তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ো, তাকে জীবনসঙ্গী করা যায় কি না। সঙ্গীটির বয়সের চেয়ে তাকে একজন মানুষ হিসেবে যাচাই করে নেওয়া বেশি প্রয়োজন।
সমস্যা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে, আমি আসলে প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে চাই না। আমার এই বিষয়ের কিছুই ভালো লাগে না, মাথায় ঢোকে না। তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি যেন আমি পড়তে পারি। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। আমি নিজে থেকেই এই পথ বেছে নিয়েছিলাম। পরিবার থেকে আমার ওপর কোনো চাপ ছিল না। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সারাক্ষণ শুধু কান্না পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে। বাসা থেকে দূরে গিয়ে আমি আর থাকতে পারছি না। একজন বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর বুঝতে পারি, আমার গাণিতিক দক্ষতা কম। কিন্তু আমার ফিরে আসার উপায় কী?
ছন্দা (ছদ্মনাম)
পরামর্শ
আমাদের দক্ষতা, প্রবণতা ও আগ্রহের সমন্বয় না ঘটলে অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে গেলেও ফলাফল কখনো ভালো হয় না। তোমার এই সমস্যা নিয়ে কি মা-বাবার সঙ্গে আলোচনা করেছ? তাঁরা তো তোমাকে ভালোবাসেন, তাই না? তোমার সুস্থতাকে নিশ্চয়ই তাঁরা প্রাধান্য দেবেন। সামাজিক সম্মানের চেয়ে তোমার জীবনকে বেশি মূল্য দেওয়া প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস, তুমি যেখানে, যা-ই পড়ো না কেন, যদি আন্তরিকভাবে নিজেকে সেই বিষয়ে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হও, কর্মজীবনে অনেক সাফল্য পাবে। এভাবে এখানে নিজেকে অত্যাচার করতে থাকলে শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে কি না, সেটা ভেবে দেখো। তুমি একেবারে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি ছেড়ে না দিয়ে কিছুদিন বিরতি নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নাও। জানি না, তোমার অভিভাবকেরা কোথায় আছেন। এই সেবা নেওয়ার জন্য কিন্তু তোমাকে ঢাকায় আসতে হবে। ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ এবং বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে গিয়ে কিছুদিন কাউন্সেলিং নিলে খুব ভালো হয়।