মেসির দাম কমল ২ কোটি, রোনালদো-নেইমারের ১ কোটি

দাম কমেছে তিনজনেরইফাইল ছবি

দেখতে না দেখতে মৌসুমের অর্ধেক পার হয়ে গেছে। এ মৌসুমে কোন খেলোয়াড় কেমন করছেন, সেটা খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান ও দলের অবস্থানই বলে দিচ্ছে। অবশ্যই প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এভাবে খুঁটিয়ে দেখতে না চাইলে ট্রান্সফারমার্কেটে তাকালেও বোঝা যাচ্ছে সবার অবস্থা। ২০২১ সালে কোন খেলোয়াড়ের সর্বশেষ দাম কত, সেটা প্রকাশ করেছে দলবদলের তথ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য এই ওয়েবসাইটটি।

ট্রান্সফারমার্কেটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ মৌসুমের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। আর সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে লিওনেল মেসি, হ্যারি কেইন, জ্যাক গ্রিলিশের। ট্রান্সফারমার্কেট বলছে, এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত মেসির দাম কমেছে ২ কোটি ইউরো। ওদিকে নেইমার ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মূল্য কমেছে ১ কোটি ইউরো করে।

জনপ্রিয়তায় সবচেয়ে এগিয়ে মেসি, নেইমার ও রোনালদো। কিন্তু মূল্যে পিছিয়েছেন তিনজনই
ফাইল ছবি

ট্রান্সফারমার্কেট কখনো একজন খেলোয়াড়ের দাম নির্ধারণ করে না। বরং তারা বিভিন্ন পরিমাপক ব্যবহার করে একজন খেলোয়াড়ের মূল্য কত হতে পারে, সেটার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে। মানদণ্ডগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো একজন খেলোয়াড় ভবিষ্যতে কেমন করতে পারেন; তাঁর বয়স; ক্লাব ও জাতীয় দলে কেমন খেলছেন; যে লিগে খেলছেন সেটির মর্যাদা; খেলোয়াড়ের খ্যাতি; আরও উন্নতির সুযোগ আছে কি না; ওই খেলোয়াড়ের ব্র্যান্ড মূল্য; কতগুলো ক্লাব তাঁকে পেতে চায়; অভিজ্ঞতা; চোট প্রবণতা; দলবদলের বাজারের অবস্থা; রিলিজ ক্লজ; চুক্তির মেয়াদ; বোনাস ইত্যাদি।

খেলোয়াড়ের দল ছাড়ার ইচ্ছা বা ক্লাবের বিক্রির ইচ্ছাও দামের ওপর প্রভাব ফেলে।
এতগুলো হিসাব–নিকাশ দেখে মাথা ধরতে পারে যে কারও। ট্রান্সফারমার্কেট তাই কদিন পরপরই খেলোয়াড়ের মূল্য বের করে সবাইকে হিসাব–নিকাশের হাত থেকে বাঁচায়। এই ওয়েবসাইট বলছে বর্তমান বাজারে কেউ যদি নেইমারকে কিনতে চায়, তবে সে দলকে ৯০ মিলিয়ন বা ৯ কোটি ইউরো খরচ করতে হবে।

বর্তমানে সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় এমবাপ্পে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এ মৌসুমের শুরুতেই পিএসজি নেইমারকে নতুন করে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে। এতে নেইমারের মূল্য দাঁড়িয়েছিল ১০ কোটি। কিন্তু এ মৌসুমের প্রথমার্ধে তেমন ফর্মে ছিলেন না নেইমার। পাশাপাশি চোটের কারণে বছরের শেষ দিকে মাঠেও নামা হয়নি তাঁর। এ কারণে নেইমারের মূল্য কমে গেছে ১ কোটি।

ওদিকে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার সময় মেসির মূল্য ছিল ৮ কোটি ইউরো। কিন্তু ফ্রেঞ্চ লিগে খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না মেসির। লিগে ১১ ম্যাচে ৮৬৫ মিনিট মাঠে থেকেও মাত্র ১ গোল করেছেন। আর বয়সও ধীরে ধীরে ৩৫–এর দিকে যাচ্ছে তাঁর। এ কারণে ট্রান্সফারমার্কেটে ৬ মাসের মধ্যে তাঁর মূল্য ২০ মিলিয়ন ইউরো কমে গেছে।

বয়স প্রভাব ফেলেছে মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দামেও। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পর ১৪ গোল করেছেন ইউনাইটেড। তবু মৌসুমের শুরুতে ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর রোনালদোর বর্তমান মূল্য ৩ কোটি ৫০ লাখ বলছে ট্রান্সফারমার্কেট।

দিন দিন গোলমেশিন হয়ে উঠছেন হরলান্ড
ছবি: টুইটার

শুধু মৌসুম চিন্তা না করে পুরো ২০২১ সাল চিন্তা করলে রোনালদোর দামই বেশি কমেছে। ২০২১ সালে মেসির মূল্য ২ কোটি ইউরো কমিয়েছে ট্রান্সফারমার্কেট। নেইমারের মূল্যও কমেছে ২ কোটি (বছরের শুরুতে ১১ কোটি ছিল)। ওদিকে রোনালদোর মূল্য কমেছে আড়াই কোটি! ৬ কোটি থেকে কমে হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি, সেটাও নতুন করে চুক্তি করার পরও। আর কদিন পরই ৩৭ পূর্ণ হবে রোনালদোর, সেটিই সম্ভবত রোনালদোর দাম এভাবে কমিয়ে দিচ্ছে।

ট্রান্সফারমার্কেটের মানদণ্ডই বলছে, এখানে শীর্ষে থাকতে হলে খেলোয়াড়ের ফর্ম ও বয়স সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে শীর্ষে থাকা তিন খেলোয়াড়ের বয়সই ২৩ বা এর নিচে। শীর্ষে অবধারিতভাবে আছেন ২৩ বছরের কিলিয়ান এমবাপ্পে। চুক্তির আর মাত্র ৬ মাস বাকি থাকলেও ক্লাবের হয়ে ২৪ ম্যাচে ৩০ গোলের সঙ্গে জড়িত থাকা এমবাপ্পের দাম কমানোর সুযোগ পায়নি ট্রান্সফারমার্কেট। আগের মতোই ১৬ কোটি ইউরো দাম তাঁর।

ওদিকে ২১ বছর বয়সী আর্লিং হরলান্ড ১৬ ম্যাচে ২৪ গোলে অবদান রেখেছেন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডর্টমুন্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এ গোলমেশিন। যত দিন যাচ্ছে, ততই গোলের ক্ষুধা বাড়ছে তাঁর। এ কারণেই মৌসুমের শুরুতে ১৩ কোটি ইউরোর হরলান্ডের বর্তমান মূল্য ১৫ কোটি বলছে ট্রান্সফারমার্কেট। ২০২১ সাল ১১ কোটি ইউরো মূল্য থেকে শুরু করেছিলেন হরলান্ড। অর্থাৎ এ বছরে ৪ কোটি ইউরো দাম বেড়েছে তাঁর।

এবার দারুণ ফর্মে আছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
ফাইল ছবি: রয়টার্স

হরলান্ডের চেয়ে ২১ দিন ছোট ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আছেন তালিকার ৩ নম্বরে। টানা তিন বছর প্রতিশ্রুতিশীল এই উইঙ্গার হতাশই করেছেন বেশি। কিন্তু এই মৌসুমে ব্রাজিলিয়ান তরুণ চমকে দিয়েছেন সবাইকে। ২৫ ম্যাচে ২১টি গোলে অবদান রাখায় তাঁর মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। গত জুনেও তাঁর মূল্য ৪ কোটি ইউরো বলছিল ট্রান্সফারমার্কেট। সেই ভিনিসিয়ুসকে বছরের শেষ ভাগে ১০ কোটি ইউরোর তালিকায় তুলে এনেছে ওয়েবসাইটটি।

ওদিকে লিভারপুলে গোলের পর গোল করছেন মোহাম্মদ সালাহ। ২৫ ম্যাচে ৩১টি গোলে অবদান রাখা এই ফরোয়ার্ডের চুক্তির মেয়াদ আর মাত্র দেড় বছর। এ কারণেই তাঁর মূল্য মৌসুমের শুরুর মতোই ১০ কোটি ইউরোতে আটকে আছে। ওদিকে টটেনহামের হয়ে মৌসুমের শুরুটা খুব একটা ভালো করেননি হ্যারি কেইন। লিগে মাত্র ৪ গোল করা ইংলিশ স্ট্রাইকারের দাম ২ কোটি ইউরো কমে এখন ১০ কোটি হয়েছে।