যে ছবি কাঁদিয়েছিল দেশকে

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

ফাইনাল শেষ। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ হেরে বিষণ্ন মুখে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন মাশরাফি-মুশফিক-সাকিবরা। ম্যাচ শেষের এই ছবিই অফিসে পাঠিয়ে দিই। তবে বরাবরের মতো ক্যামেরা অন করে অপেক্ষা করি—পুরস্কার বিতরণীর আগে যদি আরও ভালো, মানে ক্রিকেটারদের আরও মলিন মুখের ছবি পাওয়া যায়! ড্রেসিংরুম থেকে ফিরে ক্রিকেটারদের কেউ কেউ মাটিতে বসে পড়লেন। কেউ বা শুয়ে। পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা তখনো উদ্যাপনে মত্ত। কাদের জেতার কথা ছিল আর জিতল কারা! ‘কী হতে কী হয়ে গেল’র ঘোর কেটে যেতে বসেছে। পেতে পেতেও না-পাওয়ার হতাশা বাংলাদেশ শিবিরে ক্রমেই ভারী হয়ে আসছে। এবং সেটাই কান্না হয়ে ছেয়ে ফেলল ক্রিকেটারদের। এনামুল হকের চোখে জল; অধিনায়ক মুশফিকুরের চোখেও। অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সাকিবেরও। কে কাকে দেবেন সান্ত্বনা! ক্যামেরার শাটারে চাপ দিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত। দেখলাম, মুশফিক কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলেন সাকিবকে। পরদিন শুধু বড় করে সাকিবের কান্নার ছবিটাই ছাপা হলো প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায়। পরদিন পাঠকদের কী আবেগঘন প্রতিক্রিয়া! একের পর এক ফোন। বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের না চেনা মানুষেরও ফোন এল অফিসে। দেশের বাইরে থেকেও এসেছে কয়েকটি। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে এক ভদ্রলোক ফোন করে আমার টেলিফোন নম্বর নিলেন তাঁর মায়ের জন্য। সাকিবের কান্নার ছবি দেখার পর তাঁর মা নাকি আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন! কথাও বলেছি ভদ্রমহিলার সঙ্গে। ফাইনাল হেরে যাওয়ায় সবাই হতাশ। সেই হতাশারই প্রতীকী ছবি সাকিবের সেই কান্না। মোহাম্মদপুরে আমি যে বাসায় থাকি, সেই ভবনের বাসিন্দারা প্রথম আলোর প্রথম পাতার ছবি দেখে মন খারাপ করে সেদিন আর পত্রিকার পাতাই ওল্টাননি। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছিল সাকিবের সে কান্না ছেয়ে ফেলেছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলকেই।