রোনালদোর গুণমুগ্ধ পিকে

একসময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তাঁরা সতীর্থ ছিলেন। বেশ ভালো বন্ধুও। বন্ধুত্ব হয়তো এখনো আছে। কিন্তু এখন তাঁরা পরস্পরের প্রবল প্রতিপক্ষ!
পরিস্থিতি বদলেছে সত্যি, কিন্তু জেরার্ড পিকে এখনো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গুণমুগ্ধই আছেন। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে কৈশোরের ক্লাব বার্সেলোনায় ফিরে গেছেন ২০০৮ সালে। পরের বছর রোনালদো যোগ দিয়েছেন লা লিগায় বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদে। চিরন্তন বৈরিতার কারণেই দুই ক্লাবের খেলোয়াড়দের মধ্যেও সব সময় একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব থাকে। ‘শত্রু দলের’ প্রশংসা কারও মুখে শোনা যায় না।
তবে জেরার্ড পিকে বোধ হয় বাকি সবার চেয়ে একটু আলাদা। প্রতিপক্ষ হয়েও রোনালদোর প্রশংসা করতে গিয়ে কোনো কার্পণ্য নেই তাঁর, ‘ইউনাইটেডে যেমন দেখেছি রোনালদোকে, তার চেয়ে একটুও বদলায়নি সে। আগের মতোই আছে। আমি সব সময় তার গুণমুগ্ধ, কারণ সে খুবই পরিশ্রমী, সব সময়ই ক্ষুধার্ত। সে খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’
পিকের ধারণা, তাঁর আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বৈরথ, ‘আমার কাছে সে বিশ্বের সেরা দু-তিনজন ফুটবলারের একজন। কিন্তু সে আরও ভালো করতে চায়। আমার মনে হয়, মেসির সঙ্গে দ্বৈরথ তাকে ভালো হয়ে উঠতে সাহায্য করছে।’
রোনালদোর পাশাপাশি তাঁর দল রিয়ালের প্রতিদ্বন্দ্বী মানসিকতারও প্রশংসা করেছেন পিকে। তাঁর চোখে ইউরোপের সবচেয়ে সফল ক্লাবের এই মানসিকতার রসদ হলো আর্থিক শক্তি, ‘দেখুন, ওরা এক মৌসুমে বড় কোনো শিরোপা পায়নি বলে পরের মৌসুমেই ১৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে বেল, ইয়ারামেন্দি আর ইসকোকে কিনে ফেলতে পারে। আমরা বড়জোড় ৬০-৭০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে নেইমারকে কিনতে পারি। আমরা একটা গরিব ক্লাব অথচ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্লাবের সঙ্গে।’
তবে এত কিছুর পরও বার্সেলোনার খেলার ধরন ওদের বাকি সব ক্লাবের চেয়ে আলাদা করে দেয় বলেও বিশ্বাস করেন পিকে, ‘আমরা আমাদের খেলার এই ধরনটার দাস হয়ে গেছি। আমাদের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা কোনো খেলোয়াড় অন্য ক্লাব, যারা আমাদের ধরনে খেলে না, সেখানে গিয়ে তাই মানিয়ে নিতে পারে না।’

বার্সেলোনা টিকি-টাকার সবচেয়ে সুন্দর রূপটা ফুটিয়ে তুলেছিল পেপ গার্দিওলার সময়ে। নতুন কোচ জেরার্ডো মার্টিনো দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আলোচনা হচ্ছে, বার্সেলোনা ওই ধরনটাই অনুসরণ করবে নাকি অন্য কিছু করবে? মার্টিনো অবশ্য এখন পর্যন্ত খুব বেশি বদলাননি বার্সার খেলার ধরন। বার্সা মিডফিল্ডার জাভি মনে করেন এটা বদলানো ঠিক হবে না, ‘এভাবে খেলেই আমরা অনেক সাফল্য পেয়েছি। এটা বদলানোর চিন্তা করা ঠিক হবে না।’ টিকি-টাকার সৌন্দর্য নাকি সাফল্য, বার্সার কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ—এমন প্রশ্নে জাভির জবাব, ‘দুটোই একসঙ্গে হতে পারে। আমরা ভালো ফুটবলও খেলতে চাই, সাফল্যও চাই। অতীতেও আমরা সেটা করে দেখিয়েছি।’ তবে গার্দিওলার সময়ে টিকি-টাকা আর সাফল্যের যে মেলবন্ধন হয়েছিল সেটা এখন কমই দেখেন জাভি, ‘আমরা অসাধারণ একটা সময় পার করে এসেছি। সব সময় এই ছন্দ ধরে রাখা খুব কঠিন। হয়তো আমাদের সেই ছন্দ কিছুটা কমেছে, তবে আমি আশাবাদী আবারও সেখানে পৌঁছাব।’ ওয়েবসাইট।