সাঁতারে নেই আশার কূল!

>
মাহফিজুর রহমান ও   শাজাহান আল​ী রনি
মাহফিজুর রহমান ও শাজাহান আল​ী রনি
১২তম দক্ষিণ এশীয় গেমসের পর্দা উঠবে ৫ ফেব্রুয়ারি। ভারতের গুয়াহাটি ও শিলংয়ে অনুষ্ঠেয় এই প্রতিযোগিতা ঘিরে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন? গেমসের বিভিন্ন খেলায় আমাদের সাফল্যই বা কী? এসএ গেমসের প্রস্তুতি নিয়ে এই ধারাবাহিকে আজ সাঁতার

পার্ক তে গুনের হাতে ধরা একগাদা কাগজ। ক্লিপ ফাইল থেকে খুলে কাগজগুলো আলাদা করে টেবিলে রাখা। কাকডাকা ভোরে ক্রীড়াপল্লী থেকে সাঁতারুরা এসে জড়ো হয়েছেন মিরপুরের সুইমিংপুলে। প্রতিদিনের সূচি লেখা কাগজগুলো সবার হাতে ধরিয়ে দিলেন কোরিয়ান কোচ। কে কীভাবে, কতক্ষণ অনুশীলন করবেন—এসবই লেখা কাগজের টুকরোয়। তাতে চোখ বুলিয়েই শুরু হলো রুবেল রানাদের নীল জলে নামার প্রস্তুতি।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে এসএ গেমস। শেষ পর্যন্ত প্রস্তুতি কতখানি মনের মতো হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে কোচের। ঢাকায় গত এসএ গেমসেও দায়িত্বে ছিলেন পার্ক। সেবার বছর খানেকের বেশি অনুশীলনে ৬টি রুপা ও ১০টি ব্রোঞ্জ জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার ফেডারেশনের গড়িমসিতে সাঁতারুরা বিদেশি কোচ পেয়েছেন নভেম্বরে। এত অল্প সময়ে সোনা জয়ের সম্ভাবনার কথাও তাই বলতে পারছেন না পার্ক, ‘অন্য দেশের সাঁতারুরা সারা বছর অনুশীলন করে। কিন্তু আমি শুরু করেছি অনেক দেরিতে। তাই সোনা জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।’
১০ আগস্ট ২৮ সাঁতারু নিয়ে মিরপুরে শুরু হয়েছে আবাসিক ক্যাম্প। ২২ ডিসেম্বর হয়েছে চূড়ান্ত বাছাই। ১১ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলার চূড়ান্ত দলটিই ভারতে লড়বে ৩৮টি ইভেন্টে।
বাংলাদেশের সাঁতারে বরাবরই সম্ভাবনাময় ইভেন্ট ব্রেস্ট স্ট্রোক। এসএ গেমসে জেতা ১৫টি সোনার মধ্যে ব্রেস্ট স্ট্রোক থেকেই এসেছে ৭টি। ভারতে ১৯৮৭ গেমসে ব্রেস্ট স্ট্রোকে প্রথম সোনা জেতেন বজলুর রহমান, ১০০ মিটারে। এরপর একটানা ৩টি গেমসে ব্রেস্ট স্ট্রোকে দাপট দেখিয়েছেন মোখলেসুর রহমান। ১৯৮৯ পাকিস্তান গেমসে মোখলেসুর ১০০ মিটারে সোনা জেতার পর ১৯৯১ শ্রীলঙ্কা গেমসে জেতেন ২০০ মিটারে। এরপর ঢাকায় ১৯৯৩ গেমসে ১০০ মিটারে জেতেন মোখলেসুর, কারার মিজান ২০০ মিটারে। ভারতে ১৯৯৫ গেমসেও কারার মিজান সোনা জিতেছিলেন ২০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে। সাঁতারে বাংলাদেশের সর্বশেষ সোনাটিও এসেছে ব্রেস্ট স্ট্রোকেই। ১০ বছর আগে শ্রীলঙ্কা গেমসে ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে জিতেছিলেন শাজাহান আলী রনি। গত গেমসের আগে জন্ডিসের ধাক্কা সামলে পুলে নেমেও সেকেন্ডের ভগ্নাংশ ব্যবধানে রুপা জেতেন। বরং সোনার পদক হারান লেখাই ভালো।
এবার কি ব্রেস্ট স্ট্রোকে সোনার পদক আসবে? রনির মুখে শুকনো হাসি, ‘আপাতত আমি ফিট আছি। অনুশীলনও ছয় মাস ধরে ভালোই হচ্ছে। কিন্তু আরও বেশি সময় ধরে অনুশীলন হলেই ভালো হতো। তাই সোনার আশা করতে সাহস পাচ্ছি না।’
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) বৃত্তি নিয়ে পাঁচ মাস থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যাম্পে ফিরেছেন মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমা খাতুন। থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন মাহফিজুর, ‘যেহেতু সেখানে ভালো অনুশীলনের মধ্যে ছিলাম, তাই সোনা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আমি তো চাই গেমসের রেকর্ড ভাঙতে।’ সাগরের ক্যারিয়ার-সেরা টাইমিং গত বাংলাদেশ গেমসে ৫২.৮৮ সেকেন্ড। নিজেকে যাচাইয়ের সুযোগ কম পান বলে আফসোস তাঁর, ‘অনুশীলনের ফাঁকে যদি কোনো প্রতিযোগিতায় নামতে পারতাম, তাহলে বোঝা যেত কতটুক উন্নতি করেছি। আমার সঙ্গে থাইল্যান্ডে যাঁরা আছে, ওরা অন্তত ৫-৬টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। যেখানে আমি শুধু কাজানে বিশ্ব সাঁতারে অংশ নিয়েছি।’
থাইল্যান্ডে সাগরের রুমমেট ভারতীয় সাঁতারু সাজন প্রকাশ। ভারতের গত জাতীয় গেমসে ৭টি সোনা জিতেছেন সাজন, রেকর্ড ভেঙেছেন ৪টিতে। অন্যরা যখন এগিয়ে যাচ্ছে রকেটের গতিতে, সেখানে বাংলাদেশ যেন এগোচ্ছে গরুর গাড়িতে চড়ে!
এত না পাওয়ার মাঝেও জীবন ‘বাজি’ রেখেই অনুশীলনে ব্যস্ত রুবেল, রনি, শিলারা। কিন্তু সোনা জেতার ব্যাপারে ‘বাজি’ ধরতে রাজি নন কেউই!
সাঁতারে বাংলাদেশের পদক
সোনা: ১৫
রুপা: ৫৩
ব্রোঞ্জ: ৭৪