'প্যারালাইজড' হতে পারতেন নেইমার!

আবার অনুশীলনে নেইমার! তবে পোশাকই বলছে, অনুশীলনের জন্য নয়। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের আগে সতীর্থদের উৎসাহ জোগাতে পরশু ব্রাজিলের অনুশীলনে গিয়েছিলেন নেইমার। পরে কাঁদলেন সংবাদ সম্মেলনে l রয়টার্স
আবার অনুশীলনে নেইমার! তবে পোশাকই বলছে, অনুশীলনের জন্য নয়। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের আগে সতীর্থদের উৎসাহ জোগাতে পরশু ব্রাজিলের অনুশীলনে গিয়েছিলেন নেইমার। পরে কাঁদলেন সংবাদ সম্মেলনে l রয়টার্স

লাতিন ফুটবলের সৌন্দর্য দারুণভাবে ফুটে ওঠে তাঁর পায়ে।মন-মানসিকতায়ও তিনি চিরায়ত লাতিন। হাসি-খুশি, ছটফটে, চঞ্চল। জীবনটাকে উপভোগ করতে ভালোবাসেন। আবার ভীষণ আবেগপ্রবণও। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় ঝরঝর করে ঝরে চোখের পানি। দল রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতলে শিশুর মতো কাঁদেন।এই যখন অবস্থা, জীবনের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের খুব কাছ থেকে ফিরে এসে কি না কেঁদে পারেন! পরশু টইটম্বুর সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন নেইমার। অশ্রুসিক্ত হয়ে জানালেন, আঘাতটা আর ২ সেন্টিমিটার নিচে হলেই প্যারালাইজড হতে হতো তাঁকে!
কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার হুয়ান ক্যামিলো জুনিগার আঘাতে যখন স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়লেন নেইমার, তখনো বোঝা যায়নি চোট কতটা গুরুতর। ম্যাচ শেষে একটি টিভি শোতে অবশ্য সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ফ্রান্স ডিফেন্ডার মিকাইল সিলভেস্টার বলছিলেন, পিঠের ওই জায়গায় আঘাত পেয়ে একবার তাঁর এক সতীর্থের কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার খবর আসতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। তবে জানা যায়, মাস দেড়েকের মধ্যেই ফিরতে পারবেন মাঠে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফুটবল-বিশ্ব।
তবে আরেকটু হলে শঙ্কাটাই সত্যি হতে পারত। জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত সতীর্থদের অনুপ্রেরণা জোগাতে পরশু তেরোসোপলিসে ব্রাজিলের অনুশীলনে গিয়েছিলেন নেইমার। কারও সাহায্য ছাড়া একাই হেঁটে যান সেখানে। পরে মুখোমুখি হন সংবাদমাধ্যমের, সেই দুর্ঘটনার পর প্রথমবার। চোটের কথা বলতে বলতে চোখ মুছতে হলো বারবার। শোনালেন শিউরে ওঠার মতো কথা, ‘ভাগ্য আমাকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে। তবু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে রক্ষা করার জন্য। সেদিন ওই আঘাতটা যদি আর দুই সেন্টিমিটার নিচে হতো, তাহলেই আমার প্যারালাইজড হওয়ার ঝুঁকি থাকত। আজ হয়তো আমাকে থাকতে হতো হুইলচেয়ারে।’

নেইমার
নেইমার

নেইমারকে ফাউল করা জুনিগা এখন ব্রাজিলে খলনায়ক। নেইমার অবশ্য জানালেন, কলম্বিয়ান ডিফেন্ডারের ওপর রাগ-ক্ষোভ নেই। তবে মনের কোণে খানিকটা মেঘ যে জমে আছে, সেটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে কথাতেই, ‘জুনিগা আমাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছে। বলেছে যে ইচ্ছা করে আমাকে আঘাত করেনি। আমিও ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তবে ব্যাপারটিকে আমি স্বাভাবিকও মানতে পারি না মোটেও। আমি বলছি না যে সে আমাকে ইচ্ছে করে আঘাত করেছে। কিন্তু ঘটনা সবাই দেখেছে। যাঁরা ফুটবল বোঝে, তাঁরা সবাই বুঝতে পারবে না ওটা স্বাভাবিক কিছু ছিল না। যেভাবে সে পেছনে থেকে আমার ওপর পড়েছে, নিজেকে রক্ষার কোনো উপায় ছিল না আমার।’
শরীরের আঘাতের পর বড় আরেকটা চোট পেয়েছেন মনে। বিছানায় শুয়ে যখন অসহায় চোখে দেখলেন ব্রাজিলের জালে জার্মানির ৭ গোল! ১৯৫০ বিশ্বকাপের মারাকানাজোর পর ব্রাজিলের এই বিপর্যয়কে বলা হচ্ছে মিনেইরাওজো। মারাকানাজোর পর ব্রাজিলের ওই দলের অনেকের দেশে টেকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই দলও এখন তোপের মুখে। তবে সতীর্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নেইমার, ‘১৯৫০ বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে যা করা হয়েছিল, আমার সতীর্থদের সঙ্গে তা হতে পারে না। এভাবে হারা অবশ্যই হতাশার। দলের সবাই বিব্রত, সবাই কষ্ট পাচ্ছে। আমরা পারিনি, কিন্তু সবাই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে।’
ব্রাজিলের সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞাও শোনা গেল নেইমারের কণ্ঠে, ‘টিভিতে ওই ম্যাচ দেখা ছিল ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! তবে ব্রাজিল ব্রাজিলই থেকে যাবে। একটা বাজে হারে সব মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না। ফুটবলে আমরা সমীহ-জাগানিয়া দল হয়েই থাকব। সমীহটা ধরে রাখতে আমরা ফুটবলাররা সম্ভব সবকিছুই করব। জার্মানি ম্যাচ শুরুর আগেও তো লোকে ভাবছিল আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। সম্মান আমাদের প্রাপ্য।’
আজ তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ জিতলে হয়তো সম্মান খানিকটা পুনরুদ্ধার করতে পারবে ব্রাজিল। সতীর্থদের উৎসাহ দিতে তাই আজ দলের সঙ্গেই থাকবেন নেইমার। এএফপি, রয়টার্স, ফিফাডটকম, গোলডটকম, ইএসপিএন।