
হতে চেয়েছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। কিন্তু এখন পুরোদস্তুর ফুটবলার। ২১ মে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপ মহিলা ফুটবলের বাছাইপর্বের জন্য কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন সুইনু প্রু মারমা। প্রথমবারের মতো দলের নেতৃত্বও দিতে যাচ্ছেন রাঙামাটির তরুণী। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে দলের প্রস্তুতি ও নিজের স্বপ্নের কথা বললেন এই মিডফিল্ডার
l আপনাদের প্রস্তুতি কেমন চলছে?
সুইনু প্রু: প্রস্তুতি খুব ভালো হচ্ছে। গত এপ্রিল মাস থেকে ক্যাম্পে আছি। প্রতিদিন দুই বেলা অনুশীলন করছি।
l সম্প্রতি ভারতে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে এসেছেন। এটা কতটুকু কাজে দেবে?
সুইনু: কোনো বড় টুর্নামেন্টের আগে বাইরে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় না আমাদের। এবার সেই সুযোগ করে দেওয়ায় বাফুফেকে ধন্যবাদ। ওখানে পশ্চিমবঙ্গ একাদশকে দুই ম্যাচে হারিয়েছি, একটিতে ড্র করেছি। আগে যেখানে ওই সব দলের কাছে ৭-৮টি করে গোল খেতাম, এবার উল্টো ৫-৬টি করে গোল দিয়েছি। আমরা সত্যিই খুব ভালো খেলেছি ওখানে। ওদের দলে পুরোনো অনেক খেলোয়াড় ছিল, নতুনও কয়েকজন ছিল। ওদের দলটাও ভালো। কিন্তু আমাদের সাম্প্রতিক উন্নতিটা ওদের জানা ছিল না। প্রস্তুতি ম্যাচের ফল আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করবে।
l প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড, ইরান ও ফিলিপাইন সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে আপনাদের?
সুইনু: ওদের সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। ওদের সঙ্গে যেহেতু আগে কখনো খেলিনি, তাই চেষ্টা থাকবে ভালো করার।
l ‘ভালো করা’ মানে কী?
সুইনু: আমরা যে সব ম্যাচে জিতব, সেটা বলছি না। আসলে জেতার ব্যাপারটা পরে। আগে আমরা চেষ্টা করব, আমাদের বিপক্ষে গোল করাটা কঠিন করে তুলতে। থাইল্যান্ড বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, ওদের হারানোর কথা চিন্তাই করতে পারি না। ইরানও আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে ফিলিপাইনকে হারানোর আশা আছে।
l মাত্র দেড় মাসের অনুশীলন কি যথেষ্ট?
সুইনু: এত বড় একটা টুর্নামেন্টে দেড় মাস ট্রেনিং যথেষ্ট নয়। আরেকটু আগে অনুশীলন শুরু হলে ভালো হতো।
l বাংলাদেশের মেয়েরা ৭০ মিনিট খেলার পর আর স্ট্যামিনা ধরে রাখতে পারে না। বেশির ভাগ গোল হজম করে পরের ২০ মিনিটে। এবারও কি তেমনই হবে?
সুইনু: এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। এবার আমরা পুরো ৯০ মিনিট সর্বস্ব দিয়ে খেলার চেষ্টা করব। আমাদের কোচও সেভাবেই অনুশীলন করাচ্ছেন।
l আগেই বলেছেন, অনেক উন্নতি করেছেন। সত্যিই আমাদের মেয়েদের ফুটবল এগিয়েছে?
সুইনু: অবশ্যই এগিয়েছে। এখন আমি বাড়ি গেলে সবাই বলে, ‘দিদি, তোমার মতো খেলতে চাই। তোমার মতো হতে চাই।’ গত লিগে প্রতিটা দল কমপক্ষে ২০ জন করে মেয়ে নিয়ে দল গড়ল। মেয়ে কম হলে তো এটা সম্ভব ছিল না।
l গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীতে খেলে কেমন পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন?
সুইনু: আমি পেয়েছিলাম এক লাখ টাকা। তবে আশা করি, ছেলেদের মতো মেয়েদের পারিশ্রমিকও ভবিষ্যতে বাড়বে।
l আপনি নাকি স্কুলশিক্ষিকা হতে চেয়েছিলেন। তা ফুটবলার হলেন কীভাবে?
সুইনু: ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াব। কিন্তু হঠাৎ করে ২০০৪ সালে ঢাকায় চলে আসি। আনসারের একটি ক্যাম্পে আমাকে নিয়ে আসেন আমার এক বোন। সেখানে বাছাইয়ের পর ফুটবলে মনোনীত হই। ক্যাম্পে আসার আগে কোনো দিন বুটই পায়ে দিইনি। প্রথম প্রথম বুট পায়ে দৌড়াতেও পারতাম না। পড়ে যেতাম। এ নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত। আগে ভাবতাম, মেয়েরা আবার কীভাবে ফুটবল খেলে? এখন নিজেই বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখি (হাসি)।