'বাবার নাম রেখেছি, এটাই গর্বের'

মোবারক হোসেন ভূঁইয়া
মোবারক হোসেন ভূঁইয়া

‘স্কুটার গফুরের ছেলে’ পরিচয় ছাপিয়ে এবার নিজেই উঠে দাঁড়িয়েছেন। বছর পাঁচেক ঢাকার শীর্ষ ফুটবলে খেলে অবশেষে বড় একটা স্বীকৃতি পেলেন মোবারক হোসেন ভূঁইয়া। সদ্য শেষ হওয়া সুপার কাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়ে নরসিংদীর এই তরুণের পৃথিবীটাই যেন বদলে গেছে
l হঠাৎ করে এই তারকা খ্যাতি পেয়ে কেমন লাগছে?

মোবারক হোসেন: (মোহামেডান ক্লাবে নিজের রুমে বসে) একসময় বড় বড় খেলোয়াড়কে নিয়ে মাতামাতি দেখে ভাবতাম, কবে আমাকে নিয়ে এমন হবে। আল্লাহর রহমতে সেই দিনের দেখা পেয়েছি। এখন সবাই আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, কথা বলে কূল পাচ্ছি না (হাসি)। মাঝেমধ্যে একটু বিরক্তও লাগছে, ফোন বন্ধ রাখছি। সুপার কাপের ফাইনাল শেষে বাড়ি যাওয়ার পর বুঝলাম, আমি বোধ হয় কিছু একটা করেছি।

l তাহলে এবারের বাড়ি যাওয়া একটু অন্যরকম ছিল?

মোবারক: ভীষণ, ভীষণ। আমাদের জনপ্রিয় মেয়র কামরুল হোসেন পর্যন্ত এসেছেন আমাকে বরণ করতে। ঢাকায় পাঁচ বছর ফুটবল খেলে যে পরিচিতি পেয়েছি, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি পেয়েছি এবার। শহরের মোড়ে মোড়ে আমার নামে ব্যানার। ‘...এই সাফল্য নরসিংদীর বিজয়, আমি নরসিংদীর গর্ব।’ চেনা-অচেনা অনেকের এসএমএস পাচ্ছি।

l আপনার পৃথিবীই তো মনে হচ্ছে বদলে গেছে...

মোবারক: আমি সত্যিই যেন ঘোরের মধ্যে আছি। বন্ধুবান্ধব, পাড়ার মুবব্বি, সবাই  বলেছে ‘তোর খেলা দেখেছি টিভিতে। দোয়া করেছি।’ স্বপ্ন ছিল, কোনো টুর্নামেন্টে দেশসেরা হব। সেটা হওয়ার পর কল্পনাতীত সাড়া পেয়েছি। সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন আমার বাবা।

l আপনার বাবা প্রসঙ্গেই আসছিলাম। তিনি কতটা খুশি?

মোবারক: খুব খুশি। আমাকে বুকে টেনে নিয়েছেন। তাঁকে একটা উপহার দিতে পেরে ভাগ্যবান লাগছে নিজেকে। বাবা বললেন, ‘তুমি সেরা প্লেয়ার হয়েছ। তোমার দায়িত্ব বেড়ে গেছে অনেক। মিডিয়ার চোখে আসছ, এখন ভালোভাবে ক্যারিয়ার শেষ করতে হবে। এটাই একজন জাত প্লেয়ারের কাজ।’

l আপনার বাবাকে সবাই ‘স্কুটার গফুর’ নামে চেনে। একসময়ের এই নামী ফুটবলারের ছেলে হিসেবে নিজেকে কীভাবে দেখেন?


মোবারক
: পাড়া-মহল্লায় খেপ খেলতে গেলে অনেকেই আমাকে স্কুটার গফুরের ছেলে বলে ডাকে। ঢাকায় আসলাম-বাবলু স্যারদের সঙ্গে দেখা হলেই বলেন, বাবার মতো খেলতে হবে। মোবারক চেষ্টা করো। বাবার খেলা আমি দেখিনি। আবাহনীর প্রথম গোলদাতা ছিলেন তিনি। পাকিস্তান যুবদলে খেলেছেন। রহমতগঞ্জে খেলার সময় তাঁর স্পিড দেখে আবদুল গফুর ভূঁইয়া হয়ে যান স্কুটার গফুর। সেই বাবার নাম রাখতে পেরেছি, এটাই আমার গর্ব।

l আপনার বাবা আপনার খেলা দেখেন?

মোবারক: শেখ রাসেলে দুই  মৌসুম খেলার সময় মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসতেন খেলা দেখতে। তিনি এখনো ফুটবল-পাগল। কিন্তু এখন তাঁর বয়স ৭৫। চাইলেও আমার খেলা দেখতে পারেন না।

l আপনার একটা বিশেষত্ব আছে, আপনি ছয়বার জাতীয় দলে ডাক পেয়েও চূড়ান্ত দলে আসতে পারেননি। খুবই ধৈর্যশীল আপনি।

মোবারক: বাবার কাছ থেকেই এটা পেয়েছি। ছয়বার ডাক পেয়েও বাদ পড়ে কষ্ট পেয়েছি। জাতীয় দলের প্রতি আর তেমন আগ্রহ নেই। বরং অনেক ক্ষোভ আছে। ফিটনেস না থাকলেও অনেকে সুযোগ পান জাতীয় দলে। আমার ফিটনেস এবং পারফরম্যান্স ভালো হলেও ভাগ্যে শিকে ছেড়েনি আজও।

l আপনার ফুটবলে আসার গল্পটা কেমন?

মোবারক: আমরা ফুটবল ফ্যামিলি। বাবার পর বড় ভাই রহমতগঞ্জে খেলতেন। আমার ফুফাতো ভাই কামাল পাঁঁচ বছর খেলেছেন মোহামেডানে। চিনিশপুর আবু বকর মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়ে আমি খেলায় ঢুকে পড়েছি। অনূর্ধ্ব-১৬ জেএফএফ কাপে সেরা প্লেয়ার হই। নরসিংদী চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ওটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট।