২০২৫ সালটা কেমন কেটেছে?
ইমরানুর রহমান: এটা ছিল খুবই কঠিন একটা বছর। আমি যত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চেয়েছিলাম, ততটা পারিনি।
কেন?
ইমরানুর: ২০২৪ সালটা আমার ক্যারিয়ারকে অনেকটাই থামিয়ে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই বছর চোটে পড়ি। এরপর। মূল লক্ষ্য ছিল ফিটনেস ফিরে পাওয়া এবং গতিটা বাড়ানো। কিন্তু যতটা চেয়েছি, ততটা পারিনি।
বাংলাদেশের অন্য অ্যাথলেটদেরও খুব একটা ভালো যায়নি বছরটা। ঘাটতিটা আসলে কোথায়?
ইমরানুর: পরিস্থিতি একদমই আদর্শ নয়। আমার মতে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আরও অন্তত তিনটি পদক প্রত্যাশিত ছিল। তারপরও যাঁরা পদক জিতেছেন, তাঁদের অভিনন্দন। তাঁদের সাফল্যকে ছোট করে দেখা ঠিক হবে না। তবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, সামগ্রিক ফলাফল খারাপ।
খারাপ হওয়ার কারণ কী?
ইমরানুর: আমি দেখেছি, দল নির্বাচন প্রক্রিয়া, পক্ষপাতসহ নানা বিষয়ে খেলোয়াড়েরা অসন্তুষ্ট ছিল। হয়তো কিছু অ্যাথলেট বারবার খারাপ পারফরম্যান্স দিয়েও দলে থেকে যাওয়ার অধিকার রাখে না—এমন ভাবনাও কারও কারও মধ্যে কাজ করছে। ফেডারেশন নিয়ে আমি সরাসরি মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি তাদের কাছ থেকে আরও কিছু আশা করি। দেখি, তার কতটা পূরণ হয়।
তাহলে দল নির্বাচনটা কেমন হওয়া উচিত?
ইমরানুর: প্রশ্ন হলো, এশিয়ান পর্যায়ে কতজন পদক জিতেছে? খুব বেশি নয়। তাহলে এক–দুইজন ছাড়া আর কাকে বেছে নেবে তারা? বিষয়টি অন্যান্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও একই। তাই র্যাঙ্কিং পদ্ধতি অনুযায়ী, মেধাভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে সবচেয়ে যোগ্য অ্যাথলেটদেরই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাঠানো উচিত।
নতুন বছর নিয়ে কী প্রত্যাশা?
ইমরানুর: এখনই বলতে পারছি না। আমি শুধু চাই প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে এবং দেশের জন্য ভালো ফল আনতে।
আগামী বছর কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমস আছে, কোনো লক্ষ্য কী ঠিক করেছেন?
ইমরানুর: এ মুহূর্তে লক্ষ্য নির্ধারণ করা কঠিন। বছরের শুরু থেকেই প্রতিযোগিতায় নামতে হবে, তখনই লক্ষ্যগুলো স্পষ্ট হবে। আবার প্রতিযোগিতা শুরু হলে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বলতে পারব।
বাংলাদেশে তো টুর্নামেন্টভিত্তিক প্রস্তুতি হয়। এটাকে কি আদর্শ মনে করেন?
ইমরানুর: আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অ্যাথলেটদের প্রস্তুতির জন্য বছরজুড়ে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকা উচিত।
কেমন কাঠামো?
ইমরানুর: শুধু প্রতিযোগিতার কয়েক মাস আগে প্রস্তুতি নেওয়া—এই মডেলটি পুরোনো ও পশ্চাৎপদ এবং খুব কম দেশই এখন এভাবে কাজ করে। এটা বাদ দিতে হবে। প্রস্তুতি নেওয়া উচিত এক বছর আগে থেকেই, ধারাবাহিকভাবে কয়েক মাস আগে নয়। গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্য দুই-তিন মাস নয়, সারা বছরই পড়তে হয়। অ্যাথলেটিকসও সে রকম। এখানে স্বল্প সময়ে খুব বেশি কিছু করা যায় না। আর উন্নতিও এক রাতের মধ্যে হয় না।
তাহলে উন্নতির জন্য কী কী করা দরকার?
ইমরানুর: মেধা ও সম্ভাবনার ভিত্তিতে মনোনীত অ্যাথলেটদের জন্য মাসিক ভাতা ও প্রশিক্ষণ সুবিধা থাকা উচিত। তখনই প্রকৃত ফল আসবে। সহায়তাটি অবশ্যই দেশের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। পাশাপাশি আরও প্রতিযোগিতার আয়োজন দরকার। হাতে গোনা নয়, বরং বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের নিয়ম অনুযায়ী অফিশিয়াল প্রতিযোগিতাও অংশ নিতে হবে। তবেই উন্নতি আশা করা যায়।
দল নির্বাচন বিতর্ক, ‘পুরোনো’ কাঠামো, স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ—এভাবে অ্যাথলেটিকস কত দূর এগোবে?
ইমরানুর: বর্তমান কাঠামোয় অ্যাথলেটিকস এগোবে না। হয়তো তারা সাময়িক ভালো কিছু করবে বা জাতীয় প্রতিযোগিতায় পদক জিতবে। কিন্তু এভাবে চললে ভবিষ্যৎ খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।