বাংলাদেশের আমিরাত–ব্যর্থতা: দুঃস্বপ্ন, নাকি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা

কারও কাছে এটা দুঃস্বপ্নের মতো কিছু, কারও মনে হচ্ছে ক্রিকেটাররা খেলাটা উপভোগ করছেন না, কেউবা বলছেন খেলোয়াড়দের মধ্যে ভালো খেলার তাড়নাটাই নেই। আইসিসির সহযোগী সদস্যদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের লজ্জা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররা।

দুঃস্বপ্নের মতো ব্যাপার 

হাবিবুল বাশার, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক


এমন হারের কোনো ব্যাখ্যা শুনতে চাই না। একটা ম্যাচে দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায়। তাই বলে আমিরাতের বিপক্ষে পরপর দুটি ম্যাচে হেরে যাওয়া! প্রথম ম্যাচেও তো অবস্থা ভালো ছিল না। এক ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর বড় দলের যেভাবে খেলা উচিত, শেষ ম্যাচে সেটাও ছিল অনুপস্থিত। এটা শকিং, দুঃস্বপ্নের মতো ব্যাপার।

সিরিজে আরব আমিরাত কেবলই উন্নতি করেছে আর আমরা একই ক্রিকেট খেলে গেছি। পরিকল্পনার ছাপ ছিল না। প্রথম দুটি ম্যাচে শট বল আর ব্যাক অব লেন্থই করে গিয়েছি। কাউকে একটা ইয়র্কার করতে দেখলাম না। দলের শরীরী ভাষাও ছিল হতাশাজনক।

আমিরাতের কাছে হারলে আমার ইগোতে লাগে। আশা করি খেলোয়াড়দেরও লাগবে। যদি তা না হয়, সেটা আরও বড় সমস্যা।

মাঠে থাকাটাই উপভোগ করছে না

খালেদ মাসুদ, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক

এমনটা সত্যিই হতাশার। সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে আরব আমিরাত আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। অভিজ্ঞতায়ও আমরা এগিয়ে ছিলাম। তবে আমাদের খেলোয়াড়েরা অনেক দিন ধরেই ভালো কিছু করতে পারছে না। খেলা দেখে যে ভালো লাগা, তাও আসে না।

তারা যেন মাঠে থাকাটাই উপভোগ করছে না। কিছু একটা করার তাড়নাটা নেই। অষ্টম উইকেট জুটিতে জাকের নিজে ব্যাট না করে তানজিমকে স্ট্রাইক দিচ্ছিল। এটা তো গেম সেন্সের বিষয়। এভাবে সবাই একটা করে ভুল করলে তো অনেকগুলো ভুল হয়ে যায়!

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বলেছেন হারের মূল কারণ শিশির। এমন হলে তো যেকোনো খেলাতেই টসে হারলে ম্যাচও শেষ! দুই দল কাছাকাছি শক্তির হলে শিশির ফ্যাক্টর হতে পারে। কিন্তু আমিরাতের সঙ্গে তেমন হওয়া উচিত নয়।

দায়িত্বটা খেলোয়াড়দেরই নিতে হবে

হাসিবুল হোসেন, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার

খেলোয়াড়দেরই বোঝা উচিত তারা কী খেলেছে, কেন খেলেছে। আপনি যত ভালো কোচিং স্টাফই নিয়ে আসেন, খেলোয়াড়েরা যদি নিজেদের দায়িত্বটা না বোঝে, তাহলে সফল হওয়া কঠিন। ক্রিকেটারদের মধ্যে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কোনো স্পৃহা নেই, এক-দুই ম্যাচ ভালো খেললেও তা ধরে রাখতে পারে না। এটা ঠিক না হলে নিয়মিত এমন ফলই হবে।

ক্রিকেটারদের মধ্যে আন্তরিকতা আর একাত্মতাও কম আছে বলে আমার ধারণা। ওদের মধ্যে দলের জন্য খেলার যে অনুভূতি থাকা উচিত, তা দেখি না। তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তবু যদি নিজেদের দায়িত্বটা না বোঝে তাহলে আর কিছু বলার নেই। এক ম্যাচে ২০৫ রান করেও হারতে হয়, পরের ম্যাচে আবার রানই হয় না। দায়িত্বটা খেলোয়াড়দেরই নিতে হবে।

আমরা এমন দল নই

হান্নান সরকার, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার

জানি না কোচদের কী পরিকল্পনা ছিল, তাঁরা কী কৌশল সাজিয়েছিলেন। আমি যখন কোচিং করাই, আমার একটা কৌশল থাকে, যা অধিনায়কদের সঙ্গে মেলে। আরব আমিরাতে দলের যে পরিকল্পনা ছিল, তা যে সফল হয়নি, সেটা বোঝাই যাচ্ছে

তবে এমন পরিকল্পনা নিশ্চয়ই ছিল না যে ৪০ রানে ৫ উইকেট চলে যাবে। কোচ নিশ্চয়ই সঠিক পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু খেলোয়াড়েরা তা মাঠে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণেই এমন পরিণতি। খেলোয়াড়দের সক্ষমতা, কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ দেখেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

যা হলো, তা খারাপ লাগার মতোই। কেন এ রকম হলো তা দলের ভেতরে যারা আছে, তারাই বলতে পারবে। দূর থেকে দেখে কেবল এটুকুই বলতে পারি, আমরা এমন দল নই।