শেখ কামাল স্টেডিয়ামের কান্না

এটা কোনো গোচারণভূমি না। গোপালগঞ্জের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম! l প্রথম আলো
এটা কোনো গোচারণভূমি না। গোপালগঞ্জের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম! l প্রথম আলো

পাশ ঘেঁষে বইছে বিগতযৌবনা মধুমতী। সামনে পৌর পার্ক। ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য লাগোয়া বিশাল আউটফিল্ড। পাশেই সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম। শহরের প্রাণকেন্দ্রে লঞ্চঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে গোপালগঞ্জ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

প্রধান ফটকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) লোগোটার একটু ওপরেই বঙ্গবন্ধু-তনয় শেখ কামালের নামটা লেখা। হেমন্তের সকালের রোদে স্টিলের পাতটা জ্বলজ্বল করছিল। কিন্তু ইংরেজি অক্ষরগুলো এমন অযত্নেœলাগানো যে কবে শেখ শব্দের ‘কে’ বর্ণটা খুলে পড়েছে তা কেউ খেয়ালই করেনি!

১০ একর জায়গায় গড়ে তোলা শেখ কামাল স্টেডিয়াম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গোপালগঞ্জে এই স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতার পালাবদলে থমকে যায় সব কার্যক্রম। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে নির্মিত হয়েছে এই স্টেডিয়াম। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একই সঙ্গে নির্মাণ করা হয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, সুইমিংপুল ও শেখ কামাল স্টেডিয়াম। ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই দিনে অন্যান্য স্থাপনাসহ স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন।

কিন্তু এই পর্যন্তই! উদ্বোধনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও স্টেডিয়ামে জাতীয় পর্যায়ের কোনো ক্রিকেট ম্যাচই হয়নি। নামকাওয়াস্তে গত বছর মার্চে স্থানীয় ক্রিকেট লিগের আয়োজন করেছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

অথচ একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই রয়েছে এখানে। রয়েছে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড, উন্নত নিষ্কাশনব্যবস্থা, ফ্লাডলাইট, ২০০ সাংবাদিকের বসার উপযোগী প্রেসবক্স, ১৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারি।

খেলাটা চলবে কী করে? আলোর নিচেই যে অন্ধকার! স্টেডিয়ামটা যেন এনএসসির সৎছেলে! কাল মাঠে গিয়ে দেখা গেল হাঁটুসমান ঘাস। এবড়োখেবড়ো মাঠ ক্রিকেট খেলার একেবারে অনুপযোগী হয়ে আছে। মাঠের মাঝখানে একটি মাত্র ক্রিকেট পিচ। সাইটস্ক্রিন দুটির একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। স্টিলের পাতগুলো খসে পড়ছে। রোলার যন্ত্রের কোনো চালক নেই। চেয়ারের রং চটে গেছে। স্টেডিয়ামের ৮৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের বেশির ভাগই অকেজো। ঘাস কাটার আধুনিক মেশিন নেই। স্টেডিয়ামের দুটি লিফটের একটি নষ্ট।

আন্তর্জাতিক ভেন্যু হওয়ার বড় শর্ত উন্নত আবাসনব্যবস্থা। যেটি গোপালগঞ্জ শহরে নেই বললেই চলে। হাতে গোনা সাত-আটটি হোটেল রয়েছে, কিন্তু সেগুলো অভিজাত নয়। কিন্তু এখানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে অধীর আগ্রহে রয়েছেন গোপালগঞ্জবাসী।

শহরের শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামে নিয়মিত ফুটবল চললেও শেখ কামাল স্টেডিয়ামটা যেন গুমরে কাঁদে খেলার অপেক্ষায়। হতাশ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরও এখানে কোনো ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করতে পারছি না। এর চেয়ে দুঃখের কিছু হতে পারে না। খেলা না চলায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এনএসসির এদিকে নজর নেই। আমাদের চাওয়া, বিসিবি অন্তত জাতীয় লিগ বা বিপিএলের মতো আসর যেন এখানে আয়োজনের উদ্যোগ নেয়।’