'সবচেয়ে কঠিন ছিল চকলেট খাওয়া বাদ দেওয়া'

সুখী পরিবার—দুই ছেলে থিয়াগো-মাতেও আর স্ত্রী রোকুজ্জোর সঙ্গে লিওনেল মেসি
সুখী পরিবার—দুই ছেলে থিয়াগো-মাতেও আর স্ত্রী রোকুজ্জোর সঙ্গে লিওনেল মেসি

ফুটবলই তো তাঁর পরিচয়। কিন্তু এর বাইরে লিওনেল মেসির জীবনটা কেমন? পরশু স্প্যানিশ দৈনিক মার্কায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের পারিবারিক জীবনই উঠে এসেছে বেশি। তবে মানুষটা যখন মেসি, ফুটবল একেবারেই বাদ থাকে কী করে!

প্রশ্ন: ১৩ বছর বয়সে প্রবল উৎসাহ নিয়ে যে কিশোর বার্সেলোনায় এসেছিল, তার সে উৎসাহের আর কতটা বাকি আছে?

লিওনেল মেসি: অনেক সময় পেরিয়েছে, মাঠে-মাঠের বাইরে অনেক কিছুই ঘটেছে। তবে আমার স্বপ্ন, তাড়না এখনো একই রকম আছে।

প্রশ্ন: আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্কটা পরিণতি পেয়েছে, সন্তানও আছে আপনাদের। পারিবারিক জীবনে কী কী বদল এসেছে?

মেসি: প্রতিটি ক্ষেত্রেই বড় বড় সব বদল এসেছে। সবকিছু ভিন্নভাবে দেখতে শিখছি। বাবা হওয়াটাই আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা। আমাদের দুই সন্তান আছে, আরেক সন্তান আসছে। প্রথম সন্তানের অনুভূতিটা অবিশ্বাস্য ছিল, দ্বিতীয়জনের ক্ষেত্রেও তা-ই ছিল, তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও অনুভূতিটা একই থাকবে।

প্রশ্ন: বাচ্চাদের সঙ্গে আপনার সময়টা কীভাবে কাটে? ওই দিনই একটা ছবি দেখলাম যেখানে আপনি থিয়াগোর (মেসির বড় ছেলে) সঙ্গে গল্পের বই পড়ছিলেন...

মেসি: আমার প্রতিদিনের জীবনই এখন কাটে বাচ্চাদের ঘিরে। সকালে ওদের স্কুলে নিয়ে যাই। অনুশীলন থেকে ফিরেই আবার বেরিয়ে পড়ি থিয়াগোকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য। ওর স্কুলের পর আমরা আন্তোনেল্লা ও মাতেওসহ (মেসির দ্বিতীয় ছেলে) ডিনার পর্যন্ত একসঙ্গে সময় কাটাই। ওদের ঘুম পাড়িয়ে দিই। সবকিছু অন্য যেকোনো পরিবারের মতোই।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে বাসায় ফুটবল খেলে বাচ্চারা?

মেসি: আমাকে ওদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে তেমন একটা ডাকে না। ছোট ছেলে মাতেও মাঝেমধ্যে বলে। থিয়াগো তো এখনই (বার্সেলোনার শিশুদের দলে) অনুশীলনে যাওয়া শুরু করেছে।

প্রশ্ন: আর আপনি যখন মাতেওর দিকে বল ছুড়ে দেন, ও সেটা কোন হাতে ফেরত পাঠায়? ডান না বাঁ?

মেসি: ডান। ওরা দুজনই ডানহাতি।

প্রশ্ন: বাসায় ফেরার পর আন্তোনেল্লা ও বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে কথা হয়? নাকি ওসব দরজার বাইরে রেখে ফুটবল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়েই বাসায় ঢোকেন?

মেসি: বাসায় এলে ফুটবল নিয়ে খুব কমই কথা হয়। ক্লাবে বা জাতীয় দলে খুব বড় কিছু ঘটলে হয়তো মাঝেমধ্যে বাসায় সেসব নিয়ে কথা হয়।

প্রশ্ন: বাচ্চারা আপনাকে কোন ধরনের প্রশ্ন করে? লিওনেল মেসি কে—ওরা সেটা বোঝে?

মেসি: মাতেও বোঝে না। কেউ এসে অটোগ্রাফ চাইলে বা আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলে ও অনেক অবাক হয়। এখনো ওসব বোঝার বয়সই হয়নি ওর। থিয়াগো পুরোপুরি না হলেও কিছুটা বুঝতে শুরু করেছে। ও স্টেডিয়ামে গিয়ে ম্যাচ দেখতে খুব পছন্দ করে। তবে এখনো ফুটবলের সবকিছু ভালোভাবে বোঝে না। মাঝেমধ্যে বাসায়ও ও আমাকে ‘লিও মেসি’ ডাকে। মাঠে সমর্থকেরা যেভাবে ডাকে, সেভাবে। তবে সেটা কিছু না বুঝে এমনি এমনিই ডাকে।

প্রশ্ন: (খেলা ছাড়ার পর) ভবিষ্যতে কী করার পরিকল্পনা? কোচ হবেন, নাকি সব ছেড়ে ছুড়ে শান্ত জীবনযাপন করবেন...গলফ খেলে সময় কাটাবেন?

মেসি: জানি না কী করব। ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পর আমার সময় কীভাবে কাটবে, এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করেছি। তবে এখনো কিছু ঠিক করিনি। সব সময়ই বলেছি নিজেকে কোচ হিসেবে কল্পনা করি না। কোচিংয়ের ওই অনুভূতিটাই আসে না আমার। কয়েক বছর পর সেটা বদলাতেও পারে।

প্রশ্ন: আপনার একজন সতীর্থই বলেছেন যে আপনি বেশ শক্ত-সমর্থ। এটা কি ব্যায়ামের ফল, নাকি ডায়েট করেন?

মেসি: তেমন বিশেষ কিছুই না। অনেক বছর ধরেই খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মেনে চলি। অনুশীলনের পর পায়ের শক্তি বাড়ানো নিয়ে কাজ করি। তবে আমি ঠিক জিম-টিমে সেভাবে ঘাম ঝরানোর মানুষ নই।

প্রশ্ন: রাঁধতে পারেন?

মেসি: না, সেভাবে কখনো রান্না করিনি। কিছু কিছু খাবার হয়তো বানাতে পারি। তবে সেটা ঠিক মুখ বড় করে বলার মতো কিছু নয়।

প্রশ্ন: খাওয়াদাওয়ার নিয়ম মানতে গিয়ে এমন কিছু বাদ দিয়েছেন, যেটা আপনার খুব পছন্দের?

মেসি: চকলেট। আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল ওটা বাদ দেওয়া। এখনো মাঝেমধ্যে চকলেট খাওয়ার ‘পাপ’টা করি।

প্রশ্ন: টিভিতে ম্যাচ দেখেন?

মেসি: হ্যাঁ, ভালোই লাগে। এখনো অনেক ফুটবল ম্যাচই দেখি।

প্রশ্ন: কোনো নির্দিষ্ট টুর্নামেন্ট আছে, যেটা নিয়মিত দেখেন?

মেসি: সবকিছুই একটু-আধটু দেখি। স্পেন, ইংল্যান্ড আর আর্জেন্টিনা তো দেখিই। অবশ্য কতটা কী দেখব, সেটা নিজের ব্যস্ততার ওপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন: লিগ ওয়ানও (ফ্রেঞ্চ লিগ) দেখেন?

মেসি: হ্যাঁ, আগের চেয়ে এখন একটু বেশি দেখি।

প্রশ্ন: চারটা গোল্ডেন বুট জিতলেন। ট্রফিগুলোর দিকে তাকিয়ে কেমন লাগে?

মেসি: স্বীকৃতি ভালোই লাগে। তবে সব সময়ই বলি, ব্যক্তিগত পুরস্কার কখনোই আমার অগ্রাধিকার নয়। এর চেয়ে আরেকটা চ্যাম্পিয়নস লিগ বা লা লিগা জিততে চাইব।

প্রশ্ন: ম্যানচেস্টার সিটিই এ বছরের সেরা দল?

মেসি: সিটি এই মুহূর্তে সবচেয়ে শক্ত দল। সঙ্গে পিএসজিও আছে। এখন পর্যন্ত এই দুটি দলই সবচেয়ে শক্তিশালী। তবে মৌসুমটা অনেক লম্বা। আমি কখনোই রিয়াল মাদ্রিদকে হিসাব থেকে বাদ দেব না। যদিও এই মুহূর্তে ঠিক প্রত্যাশিত ফল পাচ্ছে না তারা। বায়ার্ন মিউনিখও আছে। এটা আরেকটা দল, যারা মৌসুমের শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনা যে কঠিন পরীক্ষায় পড়েছিল, সেটি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

মেসি: অনেক কঠিন সময় গেছে আমাদের। তিনবার কোচ বদল হয়েছে। একজনের পর আরেকজনের কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। প্রত্যেকেরই তো ফুটবল-দর্শন, ধারণা আলাদা। এখন হোর্হে সাম্পাওলি এসেছেন। তাঁর অধীনে বাছাইপর্বে চারটা ম্যাচ আর কয়েকটা প্রীতি ম্যাচ খেলেছি আমরা। আস্তে আস্তে উন্নতি হবে।

প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরেছিলেন। ২০১৮ বিশ্বকাপেও জার্মানিই ফেবারিট? নাকি স্পেন-পর্তুগালের মতো অন্য দলগুলোও চ্যালেঞ্জ জানাবে?

মেসি: জার্মানি ফেবারিট থাকবেই। সব সময়ই থাকে। এর বাইরে ব্রাজিল, স্পেন, ফ্রান্সের মতো আরও কিছু দল আছে যারা বিশ্বকাপ জিততে পারে।

প্রশ্ন: ব্রাজিলে (২০১৪ বিশ্বকাপ) হল্যান্ডের সঙ্গে সেমিফাইনালে খেলেছেন। কিন্তু আরিয়েন রোবেনের মতো অসাধারণ একজন খেলোয়াড় এবার বিশ্বকাপে থাকছেন না, এতে আশ্চর্য হয়েছেন?

মেসি: বাছাইপর্বে এখন প্রতিটি দলই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ছে। সেটা দক্ষিণ আমেরিকায় হোক বা ইউরোপে। ছোট দলগুলোও গুছিয়ে খেললে তাদের বিপক্ষে জেতা কঠিন হয়ে যায়। হল্যান্ড এবার বাদ পড়েছে। ইতালিও। বিশ্বকাপে যুগ যুগ ধরে থাকা দলগুলো এবার নেই, যেটা কেউ ভাবতেই পারেনি।

প্রশ্ন: কিছুদিন আগে ক্রিস্টিয়ানো বলেছিলেন যে ভবিষ্যতে আপনারা দুজন ভালো বন্ধু হলেও হতে পারেন। আপনারও মনে হয় সেটা সম্ভব?

মেসি: জানি না তেমন কিছু হবে কি না। বন্ধুত্ব হয় একসঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে, একে অন্যকে ভালোভাবে চেনা-জানার পর। আমাদের দুজনের মধ্যে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এর মূল কারণ, শুধু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানগুলোতেই আমাদের দেখা হয়। কথাও যা তখনই হয়। সবকিছু ঠিকঠাকই আছে। তবে আমাদের একে অন্যের সঙ্গে খুব একটা দেখা হয় না।