এই রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগে থাকবে!

টানা ব্যর্থতায় রিয়াল কোচ হওয়ার চাপটা টের পাচ্ছেন জিদান। ছবি: টুইটার
টানা ব্যর্থতায় রিয়াল কোচ হওয়ার চাপটা টের পাচ্ছেন জিদান। ছবি: টুইটার

২০১৫-১৬ মৌসুম। লা লিগায় ১৮ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে ধুঁকছিল রিয়াল মাদ্রিদ। পরিণামে কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হন রাফায়েল বেনিতেজ। সেবারের তুলনায় এই মৌসুমে অবস্থা আরও খারাপ। এবার ১৮ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট ৩২। জিনেদিন জিদান কি ছাঁটাই হবেন?

স্বয়ং জিদানের কাছেই এই বাজে পারফরম্যান্সের ‘কোনো ব্যাখ্যা নেই’। গতকাল ভিয়া রিয়ালের কাছে হারের পর ডিফেন্ডার মার্সেলোর উক্তি, ‘মনে হচ্ছে আমরা ডুবে যাচ্ছি।’ তা লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শুরু করে এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা দলের সঙ্গে ১৬ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লে ডুবে যাওয়ার মতো লাগাই স্বাভাবিক।

কিন্তু যেটি অস্বাভাবিক, সেটি হচ্ছে দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে রিয়াল পিছিয়ে ১০ পয়েন্টের ব্যবধানে; তৃতীয় ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে সেই ব্যবধানটা ৮ পয়েন্টের। অথচ লা লিগাকে নাকি ‘দুই ঘোড়ার দৌড়’ বলা হয় (রিয়াল ও বার্সা)—এবার অন্তত মৌসুমের মাঝপথ পর্যন্ত কথাটা মিথ্যা।

১৮ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে রিয়াল তালিকার চারে। জিদানের শিষ্যদের এই অধোগতি অব্যাহত থাকলে চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে সফল দলটির এ আসরে যোগ্যতা অর্জন নিয়েই শঙ্কার মুখে পড়ে যাবে। প্রায় দুই দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো লা লিগার শীর্ষ চারে থাকা নিয়ে লড়তে হচ্ছে রিয়ালকে। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত লিগে প্রতিবারই প্রথম বা দ্বিতীয় হয়েছে দলটি। শুধু ২০১৪ সাল বাদে, যেবার অ্যাটলেটিকো শিরোপা জিতল।

সর্বশেষ ৫ ম্যাচে মাত্র ১ জয়ের মুখ দেখা রিয়ালের শঙ্কার এখানেই শেষ নয়। লা লিগায় আজ রাতে রিয়াল সোসিয়েদাদের মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা। আর্নেস্তো ভালভার্দের দল ম্যাচটা জিতলে রিয়ালের সঙ্গে ১৯ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে যাবে। লা লিগার ইতিহাসে মৌসুমের প্রথমভাগে রিয়াল কখনো এত পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থাকেনি, যেটা ঘটবে বার্সার কাছে সোসিয়েদাদ হারলে। সর্বশেষ ২০১২-১৩ মৌসুমে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে ১৮ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল রিয়াল। সেবার কিন্তু বার্সা লিগ জিতেছিল, তাই এবার কী ঘটতে পারে, সেটা দিব্যদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে।

ইউরোপের চ্যাম্পিয়নরা এবার তাদের ঘরোয়া মৌসুমে ঠিক কতটা বাজে খেলছে? একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক—মৌসুমে এ পথ পর্যন্ত চার হার ও পাঁচ ড্র মিলিয়ে মোট ২২ পয়েন্ট হারিয়েছে রিয়াল। অথচ বেশি দিন আগের কথা নয়, গত মৌসুমের গোটা সময় মিলিয়েই ২১ পয়েন্ট হারিয়েছিল সেই একই দল!

ধরে নেওয়া যাক, সোসিয়েদাদের বিপক্ষে বার্সা জিতল। তাতে শীর্ষস্থানীয় দলটির সঙ্গে রিয়ালও ১৯ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল। সেই পিছিয়ে পড়ার আরেকটি লজ্জার দিক হলো, টেবিলে অবনমন অঞ্চলে (১৮তম) থাকা আলাভেসের সঙ্গে রিয়ালের দূরত্ব হবে তার চেয়ে কম পয়েন্ট ব্যবধানের! মানে, শীর্ষস্থানীয় বার্সার সঙ্গে ১৯, আর আলাভেসের সঙ্গে ১৭—বোঝাই যাচ্ছে, জিদানের দল চেপে বসেছে উল্টোরথে!

সেই উল্টোরথে চেপে বসার কারণ কি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলখরা? এবার লিগে তাঁর গোলসংখ্যা মাত্র ৪! পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ২৮৯ মিনিট পর একটি করে গোলের মুখ দেখেছেন রোনালদো—রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর এটাই তাঁর সবচেয়ে বাজে মৌসুম। এভাবে চলতে থাকলে রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনোই কারণ নেই।