টাইব্রেকারে জিতবে তো ব্রাজিল?

ব্রাজিলের খেলা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ালে প্রত্যাশার চাপ থাকবে আলিসন বেকারের দিকেই। তিনি যে গোলরক্ষকদের মেসি। ছবি: এএফপি
ব্রাজিলের খেলা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ালে প্রত্যাশার চাপ থাকবে আলিসন বেকারের দিকেই। তিনি যে গোলরক্ষকদের মেসি। ছবি: এএফপি
>মেক্সিকোর চেয়ে টাইব্রেকারের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা বেশি ব্রাজিলেরই। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত চারবার টাইব্রেকার পেয়েছে ব্রাজিল। এর মধ্যে ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে একবারই হেরেছিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। মেক্সিকোর টাইব্রেকারের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই। বিশ্বকাপে দুবার টাইব্রেকার পেয়েছে তারা। আর দুবারই কপালে হার জুটেছে মেক্সিকানদের।

টাইব্রেকারে রাশিয়ার কাছে স্পেনের পরাজয়ের ব্যবচ্ছেদে নাই–বা গেলাম। আজকের খেলায় ব্রাজিল যদি টাইব্রেকারের মুখোমুখি হয়, তবে? নেইমাররা পারবেন তো স্নায়ু চাপ সামলাতে? পারারই কথা। অন্তত রেকর্ড বইয়ের পাতায় থাকা তথ্যগুলো সেলেসাওদের পক্ষেই। রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্বে তৃতীয় দিনের খেলায় সামারাতে ব্রাজিল মুখোমুখি হবে মেক্সিকোর। খেলা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ালে ব্রাজিলের জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু, সেটা সময়ই বলে দেবে। আপাতত এই তথ্য দিয়ে রাখছি—মেক্সিকোর চেয়ে টাইব্রেকারের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা বেশি ব্রাজিলেরই। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত চারবার টাইব্রেকার পেয়েছে ব্রাজিল। এর মধ্যে ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে একবারই হেরেছিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

মেক্সিকোর টাইব্রেকারের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই। বিশ্বকাপে দুবার টাইব্রেকার পেয়েছে তারা। আর দুবারই কপালে হার জুটেছে মেক্সিকানদের। এই তথ্য জানার পর ব্রাজিল–ভক্তরা হয়তো চাইবেন, আর কিছু না হোক, খেলা যেন টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ায়! আর গোলরক্ষকদের মেসি বলা হয় আলিসন বেকারকে। সেই বেকার যে দলের গোলরক্ষক, সেই দলের সমর্থকেরা এমন প্রার্থনা করলে দোষের কিছু হবে না নিশ্চয়!

শুধু ব্রাজিলের খবর রাখলেই তো হবে না! খেলা তো এখনো বাকি রয়ে গেছে মেলা। দ্বিতীয় পর্ব শেষে কোয়ার্টার ফাইনাল। এরপর সেমিফাইনালের বাধা পেরিয়ে ফাইনাল। টাইব্রেকার কিন্তু পিছু ছাড়বে না।

নকআউট পর্বের খেলা মানেই টানটান উত্তেজনা। হারলেই বাড়ি ফেরা। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেও দ্বিতীয় পর্ব থেকে সেই সুযোগ থাকে না। ফলাফল না হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এরপরও কোনো দল এগিয়ে না থাকলে খেলা চলে যায় টাইব্রেকার নামক স্নায়ু পরীক্ষায়।

দ্বিতীয় পর্ব শেষে এর মধ্যেই বাড়ি ফেরাদের তালিকায় উঠে গেছে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, স্পেন ও ডেনমার্কের নাম। প্রথম দিন আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল নির্ধারিত সময়ে হেরেছে। তবে পেনাল্টি শুটআউটে উঠলে রেকর্ড অনুযায়ী দুই দলেরই খুব ভালো সুযোগ ছিল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে আর্জেন্টিনা এ পর্যন্ত টাইব্রেকার পেয়েছিল পাঁচবার। এর মধ্যে চারবারই তারা জিতেছে। আর ২০০৬–এর বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ওই একবারই টাইব্রেকারের মুখ দেখেছিল পর্তুগাল।

ব্রাজিলের খেলা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ালে প্রত্যাশার চাপ থাকবে আলিসন বেকারের দিকেই। তিনি যে গোলরক্ষকদের মেসি। ছবি: এএফপি
ব্রাজিলের খেলা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ালে প্রত্যাশার চাপ থাকবে আলিসন বেকারের দিকেই। তিনি যে গোলরক্ষকদের মেসি। ছবি: এএফপি

শেষ ষোলোর দ্বিতীয় দিনের খেলায় রাশিয়ার কপাল খুলেছে পেনাল্টি শুটআউটে। টাইব্রেকারে স্পেনকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকেরা। পরের ম্যাচেও একই অবস্থা। ক্রোয়েশিয়া-ডেনমার্কের ম্যাচটি অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়েও মীমাংসা না হওয়ায় খেলা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের জয় পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া।

রাশিয়া বিশ্বকাপে বাকি রইল যারা

আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। ফরাসিরা ২০১৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টাইব্রেকারে অংশ নিয়েছে চারবার। জিতেছে দুবার। একই সময়ের মধ্যে বেলজিয়াম, সুইডেন ও উরুগুয়ের আলাদাভাবে টাইব্রেকারে অংশ নেওয়া হয়েছে একবার করে। সবাই-ই পেয়েছে জয়ের দেখা। সুইজারল্যান্ড ও জাপান একবার করে টাইব্রেকারে অংশ নিয়েছে। তবে টাইব্রেকার–বাধা পার হতে পারেনি কেউই।

টাইব্রেকার যেবার এল

বিশ্বকাপে এই টাইব্রেকারের নিয়ম কিন্তু শুরুতে ছিল না। ১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে প্রথম চালু হয়েছিল টাইব্রেকার। সেবার অবশ্য টাইব্রেকারের প্রয়োজন হয়নি। দমবন্ধ হওয়া টাইব্রেকারে মিসের সংখ্যা খুব বেশি নেই। ১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপ থেকে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ পর্যন্ত টাইব্রেকারে মোট শট নেওয়া হয়েছে ২৪০টি। এর মধ্যে ১৭০টি বল জালে জড়িয়েছে।

শটটা ঠিক যেদিক দিয়ে নিলে ভালো

তো টাইব্রেকারে গোলরক্ষকের কোন পাশ দিয়ে শট নিলে গোলের সম্ভাবনা বেশি থাকে? খেলাধুলা নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান অপ্টা স্পোর্টসের তথ্যমতে, গোলরক্ষকের বাঁ পাশ দিয়ে নিচু শটগুলোতেই গোলের সুযোগ বেশি থাকে। তবে গোলপোস্টের মাঝ বরাবর নিচু শটগুলোর গোলের সুযোগ তুলনামূলক কম। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গোলপোস্টের মাঝ বরাবর নিচু শটগুলোর ৫৮ শতাংশই হয়েছে মিস। তবে সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে হাওয়ায় ভাসানো শটগুলো। ফিফার তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত (২০১৮ বিশ্বকাপের আগে) ৯০ শতাংশ হাওয়ায় ভাসানো শটই ঠিকানামতো পৌঁছেছে।

টাইব্রেকারে আটকে দেওয়া শটগুলো

টাইব্রেকারে এ পর্যন্ত ২৪০টি শটের মধ্যে মাত্র ৪৯টি শট আটকাতে পেরেছেন গোলরক্ষকেরা। এর মধ্যে ২৪টি শট বাঁ দিকে আর ২৫টি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকেছেন। ১২টি শট গোলপোস্টে কিংবা ক্রসবারে লেগে ফিরে গেছে। বাকি ৯টি শট গোলপোস্টের আশপাশ কিংবা ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ পর্যন্ত টাইব্রেকারে নেওয়া ২৪০টি শটের মধ্যে মিস হয়েছে ৭০টি।

টাইব্রেকারে কারা বেশি সফল

টাইব্রেকার সবচেয়ে বেশি সফল জার্মানি। বিশ্বকাপ টাইব্রেকারের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর জার্মানি–ফ্রান্স প্রথম টাইব্রেকারে অংশ নিয়েছিল। সেবার ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ফ্রান্স হেরে গিয়েছিল টাইব্রেকারে। ২০১৪ পর্যন্ত চারবার টাইব্রেকারে অংশ নিয়ে চারবারই জয় পেয়েছে জার্মানি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই চারবারের টাইব্রেকারে জার্মানির শট মিস হয়েছিল মাত্র ১টি। তা–ও সেটা ওই ১৯৮২ সালের প্রথম টাইব্রেকারে। পেনাল্টি মিস করা খেলোয়াড়টির নাম ইউলি স্টেইলাইক।

সবচেয়ে বেশি কিংবা কম যাদের

টাইব্রেকারে সবচেয়ে বেশি—পাঁচবার অংশ নিয়েছে আর্জেন্টিনা। টাইব্রেকারে তারাই করেছে সবচেয়ে বেশি গোল। টাইব্রেকারে একবারই হেরেছে আর্জেন্টিনা। সেটা ২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে। ইংল্যান্ডের টাইব্রেকার ভাগ্যটা ভালো না। টাইব্রেকার পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি হার ইংলিশদেরই। তিনবার টাইব্রেকারের মুখোমুখি হয়ে তিনবারই হার! সবচেয়ে বেশি মিসও ইংল্যান্ডের।

কুফা অষ্টম

টাইব্রেকারে ৮ নম্বর শটটিকে অলক্ষুনে বলা যেতে পারে। বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বেন লেয়টন নামক এক ফুটবল গবেষক ও লেখকের বরাত দিয়ে বলা হয়, ১০টি শটের ৮ নম্বরটি মিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। বেন লেয়টনের গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে নেওয়া ৮ নম্বর শটের ৫টির মধ্যে ২টিরই মিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।