কৌশলের লড়াইয়ে শেষ হাসিটা দেশমেরই

ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতল ফ্রান্স। ছবি: রয়টার্স
ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতল ফ্রান্স। ছবি: রয়টার্স
>ফুটবল মাঠে এখন কত ধরনের প্রযুক্তিরই না ব্যবহার হয়। এসবের সাহায্য নিয়ে চলে খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। প্রযুক্তি-সাহায্য নিয়ে প্রথম আলো ডিজিটালও বিশ্বকাপের বড় ও আলোচিত ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। নতুন ধারাবাহিক ‘প্রযুক্তির চোখে’র বিশ্বকাপের শেষ পর্বে থাকছে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ফাইনালের বিশ্লেষণ। লিখেছেন নিশাত আহমেদ

অপেক্ষাটা ছিল একটা ম্যাচের। জিতলেই খুবই অনন্য একটা ক্লাবের সদস্য হবেন দিদিয়ের দেশম। সেই পরম আরাধ্য একটা ম্যাচ জিতে নিজেকে সেই ক্লাবের সদস্য বানিয়ে তবেই বিশ্বকাপটা শেষ করলেন দেশম। ব্রাজিলের মারিও জাগালো ও জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের সঙ্গে এখন উচ্চারিত হবে দেশমেরও নাম, যারা খেলোয়াড় ও কোচ উভয় ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জয় করেছেন। পুরো টুর্নামেন্টেই হার-না-মানা মানসিকতা দেখানো ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়েই দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে দেশমের ফ্রান্স।

এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যে কয়জনের আছে, তাঁর মধ্যে সর্বাগ্রে থাকবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। কালকেও গোল করেছেন এমবাপ্পে। ১৯ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করার কৃতিত্ব গড়েছেন।

কাল ফ্রান্স যেভাবে রক্ষণাত্মক ও কৌশলী হয়ে খেলেছে, সে কৌশলে ফ্রান্সের কেউই অত বেশি বল পায়ে রেখে খেলেননি। বল পায়ে বেশিক্ষণ রাখেননি এমবাপ্পেও। কিন্তু বল যখনই পায়ে পেয়েছেন, তাঁকে নজরে রাখা ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার দোমাগয় ভিদার প্রাণ অতিষ্ঠ করে ফেলেছেন। ডান উইং দিয়ে দুর্দান্ত কয়েকটা টান দিয়েছিলেন বল নিয়ে। ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণের ক্ষণিক অমনোযোগিতার সুযোগ নিয়ে বুলেটগতির এক শটে পরাস্ত করেছেন ড্যানিয়েল সুবাসিচকে।

একই কথা বলা যায় গ্রিজমানের ক্ষেত্রেও, পেনাল্টিতে দ্বিতীয় গোল করা এই তারকাকে এই বিশ্বকাপের প্রত্যেক ম্যাচে দেখা গিয়েছিল বল পায়ে রেখে খেলা বানিয়ে দিতে। কিন্তু এই ম্যাচে কোচের কৌশলের কারণেই আগে দলকে বিপদমুক্ত করেছেন, পরে প্রয়োজনে আক্রমণে গিয়েছেন। এমবাপ্পে ও গ্রিজমান, দুজনেরই সফল পাস দেওয়ার হার এই কারণেই যথাক্রমে মাত্র ৬১.৫% ও ৬৭.৯%। গ্রিজমান, এমবাপ্পেসহ অন্যান্য খেলোয়াড়দের পরিসংখ্যান দেখে নিন এক নজরে -

ম্যাচের প্রথম দুটো গোল সম্পূর্ণ ক্রোয়েশিয়ার অনভিজ্ঞতার কারণেই হয়েছে। গ্রিজমানের ফ্রি কিকটা ক্লিয়ার করার জন্য মাথা ঠেকিয়ে পরে নিজের জালেই বল জড়িয়েছেন মারিও মানজুকিচ। ডি-বক্সে ইভান পেরিসিচের দায়িত্বজ্ঞানহীন এক হ্যান্ডবলের কারণেই পেনাল্টিতে দ্বিতীয় গোল পায় ফ্রান্স। পরে যদিও হুগো লরিসের এক ভুলের সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে নিজের দোষটা একটু হলেও কাটিয়েছেন মানজুকিচ। ওদিকে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরানো গোল করে পরে নিজেই ফ্রান্সকে এক পেনাল্টি উপহার দিয়ে নায়ক থেকে খলনায়ক বনে গিয়েছেন পেরিসিচ। দেখে নিন ম্যাচের গোলগুলো -

সমতায় ফেরার পরেও পেনাল্টিতে আবার পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়ার মনোবল একটু হলেও ভেঙে যায়। এরই ফল হিসেবে দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটো গোল খেয়ে বসে ক্রোয়েশিয়া।
পুরো ম্যাচ ফ্রান্সের তুলনায় ক্রোয়েশিয়া বেশ ভালো খেলেছে, কিন্তু ওই যে, ফুটবল মানেই গোলের খেলা। আপনার সফল পাসের হার কত হলো, কতটুকু দৌড়ালেন, কতক্ষণ বল পায়ে রেখে আক্রমণ করতে পারলেন এসব পরিসংখ্যানের কোনো দামই নেই যদি না গোল করে ম্যাচ জিততে না পারেন। আর এখানেই কপাল পুড়েছে ক্রোয়েশিয়ার। ইভান রাকিতিচ, পেরিসিচ, লুকা মদরিচ ও মার্সেলো ব্রোজোভিচরা পুরো ম্যাচটা দুর্দান্ত খেলেও শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন খালি হাতে। ওদিকে নিজেদের পক্ষে আসা প্রত্যেকটা সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে ফরাসিরা। সবশেষে, ক্রোয়েশিয়ার প্রথম শিরোপা নয়, বরং ফ্রান্সের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের আসর হিসেবে রাশিয়াকে মনে রাখবে বিশ্ব।