ইন্দোনেশিয়ার হকিতে নারী জাগরণ

চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে খেলছে ইন্দোনেশিয়া। ছবি: প্রথম আলো
চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে খেলছে ইন্দোনেশিয়া। ছবি: প্রথম আলো

এশিয়ান গেমসের মূল ইভেন্টগুলো প্রায় শেষ। বাকি আছে ফুটবল, হকির মতো বড় দুটি খেলার সেমিফাইনাল-ফাইনাল। সেটিও এক দিন পর। বুধবারকে তাই এক অর্থে বলা যায় এশিয়ান গেমসের বিশ্রামের দিন। অনেকটা শান্ত। গেলোরা বুং কার্নো স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে দর্শকের খুব ভিড় নেই। কোলাহল কিছুটা কম। এর মধ্যেই হকি মাঠ থেকে উল্লাস ভেসে আসছে। স্টেডিয়ামে ঢুঁ মেরে দেখা গেল আসল কারণটা।

খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ নয়। তারপরও গ্যালারিতে ভিড়। ইন্দোনেশিয়ার মেয়েরা যে খেলছেন! চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে স্বাগতিক দলের ২-০ গোলের জয়ে দর্শকদের আনন্দের মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।

পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় মেয়েদের খেলাধুলায় নেই কোনো বাধা। বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও মেয়েদের খেলা বন্ধ করতে মিছিল-মিটিং হয়েছিল! এখানে মেয়েরা দিব্যি সব খেলাই খেলছেন। কেউ বাঁকাচোখে তাকায় না।

ইন্দোনেশিয়ার হকি খেলোয়াড় অনিতা রাহমাদানি। ছবি: প্রথম আলো
ইন্দোনেশিয়ার হকি খেলোয়াড় অনিতা রাহমাদানি। ছবি: প্রথম আলো

মেয়েদের হকিতে ইন্দোনেশিয়া খেলছে বহু বছর ধরে। হয়তো দৃশ্যমান সাফল্য নেই। এই এশিয়ান গেমসের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে ইন্দোনেশিয়ার মেয়েরা ভেসে গেছেন ১৮ গোলে। তাতে কি। এশিয়ান গেমসের দুটি জয় পেয়ে তাঁরা ভীষণ খুশি। প্রথমটি ছিল র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা কাজাখস্তানের বিপক্ষে। যে জয়কে ইন্দোনেশিয়ায় কোচ বলছেন ঐতিহাসিক। কাজাখদের র‍্যাঙ্কিং ৩৪, ইন্দোনেশিয়া ৬৪। ঐতিহাসিক তো হবেই!

সেই জয়ের পর আজকের জয়। ঘরের মেয়েরা ভীষণ খুশি। ম্যাচর পর ইন্দোনেশিয়ার যে খেলোয়াড়টি মিক্সড জোনে কথা বলতে এলেন, তাঁর নাম অনিতা রাহমাদানি। দেখলে প্রথমে মনে হবে স্কুলে পড়েন বুঝি। কিন্তু কথা বলতে গিয়ে ভুল ভাঙল। অনিতার হকি খেলার বয়সই ১০ বছর! ২১ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েটি ইংরেজি ঠিকমতো বলতে পারেন না। প্রশ্ন করলে খিলখিল করে হাসেন। বোঝাই যায় না কালিমানতাং তিমুরের মেয়েটি মালয়েশিয়ান লিগে খেলেন! প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেক মেয়েই হকি খেলে। কোনো সমস্যা হয় না। কেউ আমাদের কিছু বলে না।’

ইন্দোনেশিয়ায় মেয়েদের হকি ক্লাব আছে ১১টি। জাকার্তায় একটি, বাকিগুলো অন্য শহরের। হকি কেন খেলেন, প্রশ্ন করলে অনিতা বলেন, ‘এটা আমার শখ। হকি খেলতে আমার ভালো লাগে।’ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশেও তো সত্তর-আশির দলকে মেয়েরা হকি খেলতেন। তারপর কেন বন্ধ হয়ে গেল! এখন আবার মেয়েদের হকি শুরুর বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ দেখা যায়। কিন্তু পরিকল্পনা করে এগোনোর পথ যেন খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। অথচ ইন্দোনেশিয়া সেই পথ খুঁজে নিয়েছে বহু আগেই। এ দেশে নারী হকির জাগরণ চলছে! এ থেকে প্রেরণা নিতে পারে বাংলাদেশ।