এশিয়া কাপজয়ী দলের প্রাপ্য আরেকটি ট্রফিও

লাসিথ মালিঙ্গার এই ছবি দিয়েই আরব আমিরাতের গরম বুঝিয়ে দেওয়া যায়। শুরুর দিন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের একপর্যায়ে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ঠান্ডা পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন এই লঙ্কান পেসার। টানা দুই ম্যাচ হেরে শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যাওয়াতে মালিঙ্গাকে এমন গরম খুব বেশিদিন সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু বাকি দলগুলোর সব খেলোয়াড়ের অবস্থাই এখন মালিঙ্গার মতো। তীব্র গরমের সঙ্গে রীতিমতো লড়তে হচ্ছে তাদের। ছবি: এএফপি
লাসিথ মালিঙ্গার এই ছবি দিয়েই আরব আমিরাতের গরম বুঝিয়ে দেওয়া যায়। শুরুর দিন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের একপর্যায়ে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ঠান্ডা পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন এই লঙ্কান পেসার। টানা দুই ম্যাচ হেরে শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যাওয়াতে মালিঙ্গাকে এমন গরম খুব বেশিদিন সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু বাকি দলগুলোর সব খেলোয়াড়ের অবস্থাই এখন মালিঙ্গার মতো। তীব্র গরমের সঙ্গে রীতিমতো লড়তে হচ্ছে তাদের। ছবি: এএফপি
>

এশিয়া কাপে মাঠের লড়াইয়ের চেয়েও কঠিন হয়ে পড়েছে গরমের সঙ্গে যুদ্ধ। এ কারণেই এশিয়া কাপজয়ী দলকে ‘গরম’ জয়ের একটা বিশেষ ট্রফি দেওয়া যেতেই পারে!

স্টিভ রোডস মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘আপনারা যাঁরা এয়ারকন্ডিশনে বসে থাকেন, তাঁদের জন্য সহজ। কিন্তু খেলোয়াড়দের জন্য খুব কঠিন।’ শুধু সাংবাদিকদের কথা বললে যদি খোঁচার মতো শোনায়, হয়তো সে কথা ভেবেই ‘আমাদের জন৵ও সহজ’ কথাটাও যোগ করে দিলেন বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ।

এখানে ‘আমাদের’ মানে কোচিং স্টাফ। তাঁদের জন্যও সহজ শুধু ম্যাচের সময়েই। সাংবাদিকদের মতো তাঁরাও তখন এয়ারকন্ডিশনে বসে থাকার সুযোগ পান। অনুশীলনে তো আর সেই সুযোগ নেই। বরং একদিক থেকে খেলোয়াড়দের চেয়েও বড় ‘সমস্যা’তাঁদের। খেলোয়াড়েরা চাইলেই ঐচ্ছিক অনুশীলন থেকে মুক্তি নিতে পারেন, কিন্তু কোচিং স্টাফের সেই সুযোগ নেই।

গতকালই যেমন বাংলাদেশের ঐচ্ছিক অনুশীলনে এসেছিলেন মাত্র আটজন ক্রিকেটার। কিন্তু স্টিভ রোডসকে তো পুরো দলবল নিয়ে ঠিকই আসতে হয়েছে। পুড়তে হয়েছে অসহ্য গরমে। রোডস মজা করার ভঙ্গিতে বললেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কোচিং স্টাফেরও যে অনেক কষ্ট হয়, সেটি অনেকেরই মনে থাকে না।’

এই এশিয়া কাপে খেলার মতোই আলোচনা দুবাই ও আবুধাবির এই সময়টার আবহাওয়া নিয়ে। আবহাওয়ার কোনো দোষ নেই। হঠাৎ করে সেটি বিগড়ে যায়নি। সেপ্টেম্বরের এই সময়ে দুবাই-আবুধাবির তাপমাত্রা যা থাকার কথা, সেটিই আছে। কিন্তু সেটি ক্রিকেট খেলার উপযুক্ত কি না, এই প্রশ্ন নিয়মিতই উঠছে।

তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে থাকছে প্রায় সারা দিনই। এই টুর্নামেন্টের সময় কখনো কখনো সেটি পৌঁছে গেছে ৪৫/৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্তও। ক্রিকেটারদের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলতে এটাই যথেষ্ট ছিল। এর সঙ্গে ঠাসা সূচি, পরপর দুদিন ম্যাচ। সবকিছু মিলিয়ে ক্রিকেটারদের কাছে এই এশিয়া কাপের অন্য নাম হয়ে গেছে ‘শেষ হলে বাঁচি!’

গত সোমবার আবুধাবিতে আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ খেলে আসার পরদিন মাশরাফি বিন মুর্তজা এভাবে প্রায় বিরতিহীন (আগের চার দিনে তিনটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ) ম্যাচ খেলার কারণটা বুঝতে চাইছিলেন। ‘গরমটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু ম্যাচগুলোর মধ্যে তো আরও গ্যাপ দেওয়া যেত’-এটা বলার একটু আগেই নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বলছিলেন, ‘রাতে মাঠ থেকে হোটেলে ফেরার পর মনে হচ্ছিল, শরীরে যেন মুরগি ঠোকর দিচ্ছে!’

এশিয়া কাপ শেষ হতেই সংযুক্ত আরব আমিরাতেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সিরিজ। অস্ট্রেলিয়া দল বেশ কদিন আগেই দুবাই এসে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও এখন দুবাইয়ে। ভারতে যাওয়ার আগে তারা চূড়ান্ত প্রস্তুতিটা সেরে নিচ্ছে এখানেই। এগুলোর মাঝখানে ঠাসাঠাসি করে ঢোকানো হয়েছে এশিয়া কাপ। শুনে মাশরাফি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘সবই ঠিক আছে। শুধু প্লেয়ারদের কথা কেউ ভাবে না।’

ভারত সব ম্যাচ দুবাই খেলায় বাড়তি একটু সুবিধা পেয়েছে। এটুকু বাদ দিলে এই অসহ্য গরম আর টানা খেলার যন্ত্রণা সইতে হয়েছে সব দলকেই। সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানকে। গতকাল ভারতের বিপক্ষে দুবাইয়ের ম্যাচটির আগে তাদের টানা চারটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে দুবাই থেকে আবুধাবিতে গিয়ে। যেতে হয়েছে পরপর দুদিনও।

দুবাই টু আবুধাবি এমনিতে বাসে দেড় ঘণ্টার জার্নি। তবে ভারত ছাড়া বাকি পাঁচটি দলের ঠিকানা যে হোটেল, সেখান থেকে যাত্রা শুরু করলে আরও আধঘণ্টা যোগ করতে হয়। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে রোডস ‘আমাদের হোটেলটা দুবাইয়ের এক প্রান্তে। যে কারণে আধঘণ্টা বেশি লাগে’ বলার আগে এটি খেয়াল করা হয়নি। সূচি নিয়ে কোনো সমালোচনার পথে অবশ্য যাননি রোডস। ‘সব দলের জন্যই এটি একই রকম’ বলে দিয়েছেন কূটনৈতিক উত্তর।

এই গরম আর ঠাসা সূচিতে খেলোয়াড়দের ফিট রাখতে ট্রেনারদের একটু বাড়তি খাটতে হচ্ছে। বাংলাদেশ দলের ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন জানালেন, মূলত তিনটি জিনিস তিনি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। ক্রিকেটারদের শরীরে যেন প্রচুর ইলেকট্রোলাইড যায়, তাঁদের যথেষ্ট ঘুম হয় এবং খেলা আর অনুশীলনের বাইরে তাঁরা যতটা সম্ভব কম রোদে যান।

আন্তর্জাতিক ব্যস্ত সূচির কারণে এশিয়া কাপের জন্য সময় বের করা বরাবরই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে যে কারণে অসময়ে আয়োজিত হয়েছে এই টুর্নামেন্ট। অসময়ে বলতে বৃষ্টির মৌসুমে। এতে দর্শকদের ক্ষতি হলেও ক্রিকেটারদের জন্য খেলাটা এবারের মতো চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠেনি। ভেন্যুও একটা সমস্যা। ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার কারণে এই দুই দেশ প্রায়ই সমীকরণের বাইরে চলে গেছে। তখন উপায় বলতে বাংলাদেশ অথবা শ্রীলঙ্কা। এ কারণেই পরপর তিনটি এশিয়া কাপ বাংলাদেশে হয়েছে। এবারও এই টুর্নামেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসেছে ভারতের অনাগ্রহ ও সেখানে খেলা হলে পাকিস্তানকে নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে।

এশিয়া কাপ তাতে ‘জন্মভূমি’তে ফেরার সুযোগ পেয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপ যখন হয়েছিল (এপ্রিলে), তখন হলে কোনো সমস্যা হতো না। একসময় শারজায় যখন নিয়ম করে বছরে দুটি টুর্নামেন্ট হতো, এর প্রথমটি হতো এপ্রিলে, দ্বিতীয়টি অক্টোবর অথবা নভেম্বরে। তাপমাত্রা তখন আর এতটা অসহনীয় থাকে না। এই এশিয়া কাপ যারা জিতবে, সব সময় জিতলে যে ট্রফি দেওয়া হয়, সেটি তো তারা পাবেই; সঙ্গে আরেকটি ট্রফিও বোধ হয় দেওয়া উচিত। যেটি হবে খেলার চেয়েও বড় ওই লড়াই জেতার স্বীকৃতি। মরুর গরম!