ছেলেদের দল আটকাবে না, আশা মেয়েদের

এ বছরই মালয়েশিয়া থেকে এসেছে মেয়েদের এশিয়া কাপের ট্রফি, ভারতকে হারিয়েই। কাল মাশরাফিদের প্রতি শুভকামনাই জানিয়েছেন এশিয়া কাপ বিজয়ী মেয়েদের দলের তিন ক্রিকেটার। ফাইল ছবি
এ বছরই মালয়েশিয়া থেকে এসেছে মেয়েদের এশিয়া কাপের ট্রফি, ভারতকে হারিয়েই। কাল মাশরাফিদের প্রতি শুভকামনাই জানিয়েছেন এশিয়া কাপ বিজয়ী মেয়েদের দলের তিন ক্রিকেটার। ফাইল ছবি
>জুনে কুয়ালালামপুরে সালমা-জাহানারা-রুমানারা ইতিহাস গড়েছিলেন। ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে জিতেছিলেন এশিয়া কাপ। তিন মাসের ব্যবধানে আরও একটি এশিয়া কাপ। দল দুটিও এক। পার্থক্য হচ্ছে, এবার সালমা-রুমানারা নন, এশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্যে লড়ছেন মাশরাফি-মুশফিকরা। বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল জেতার অভিজ্ঞতা থেকেই ‘ভাই’দের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মেয়েদের দলের তিন ভরসা সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদ ও জাহানারা আলমের।

ইতিহাসটা তাঁরাই গড়েছিলেন আগে। দ্বিপক্ষীয় কিংবা ত্রিদেশীয় সিরিজের বাইরে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বড় কোনো শিরোপা এসেছিল তাঁদেরই হাত ধরে। জুনে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সালমা-জাহানারা-রুমানারা জিতেছিলেন মেয়েদের এশিয়া কাপের শিরোপা। ভারতকে হারিয়ে। তিন মাসের ব্যবধানে আরও একটি এশিয়া কাপ। দল দুটিও এক। পার্থক্য হচ্ছে, এবার সালমা-রুমানারা নন, এশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্যে লড়ছেন মাশরাফি-মুশফিকরা।
ফাইনালের চাপ কেমন, এটা মাশরাফিরা জানেন। কিন্তু সেই চাপকে জয় করতে না পেরে পা হড়কানোর উদাহরণ কম নয়। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল অন্তত এই একটা জায়গায় এগিয়ে থাকবেন মাশরাফিদের চেয়ে, প্রথমবার ফাইনাল উঠেই চ্যাম্পিয়ন! সে ম্যাচে শেষ ৬ বলে দরকার ছিল ৯ রান। তীব্র চাপে ঠান্ডা মাথায় এই সমীকরণ মিলিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন মেয়েরা। জিততে হলে কী করতে হবে, জেতার পর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে—বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল জেতার অভিজ্ঞতা থেকেই ‘ভাই’দের কিছু পরামর্শ মেয়েদের দলের তিন ভরসা সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদ ও জাহানারা আলমের—


‘দুঃখের নয়, এবার আনন্দের মুহূর্ত উপহার দেবে ভাইয়েরা’
সালমা খাতুন, মেয়েদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক

সালমা খাতুন
সালমা খাতুন

আমাদের টপ অর্ডার যদি আরেকটু ভালো করে তবে বড় রান করা সম্ভব। একমাত্র মুশফিক ভাই নিয়মিত রান পাচ্ছেন। টপ অর্ডার থেকে যদি কেউ ৩৫ ওভার খেলে আসতে পারেন তবে বাংলাদেশ ভালো স্কোর পাবে। বোলাররা অনেক ভালো করছে। মাশরাফি ভাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত ম্যাচে তাঁর ক্যাচটা এক কথায় দুর্দান্ত! কী দুর্দান্ত ফিল্ডিং করলেন তিনি! আশা করছি সবাই ভালো খেলবে। আমরা একটা শিরোপা নিয়ে এসেছি। আশা করি কাল ফাইনালে ভালো খেলে ভাইয়েরা আরেকটা ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরবে। আর ফাইনালে চাপ তো থাকেই। মাশরাফি ভাই অনেক অভিজ্ঞ। সে খুব ভালো করে জানে কীভাবে চাপ সামলাতে হয়। নিশ্চয়ই তিনি এটিকে আরেকটা ম্যাচ হিসেবে দেখবেন। গত ম্যাচে বাংলাদেশের শরীরী ভাষাটা ভালো ছিল। এটা কালও থাকলে আশা করি ভালো একটা ফল হবে।
মেয়েদের এশিয়া কাপে আমরা প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিলাম। সেটি জিততেও পেরেছি। ভাইয়েরা এমন অনেক ম্যাচ শেষ দিকে গিয়ে সামান্য ব্যবধানে হেরে গেছেন। অনেক ম্যাচে ভালো খেলে শেষ দিকে হেরে গিয়েছেন। ফাইনালে একটু তো চাপ থাকেই। মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ভাই আছেন, তারা নিশ্চয়ই ট্রফি জেতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। মেয়েদের এশিয়া কাপ জেতার পর আমাদের প্রতিক্রিয়া একরকম ছিল। জিততে পারলে তাঁদের প্রতিক্রিয়া হয়তো আরেকরকম হবে। তারা বারবার খুব কাছে গিয়ে হেরেছে। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে মুহূর্তটা শুধু দেখবেন। আশা করব, দুঃখের নয় আমাদের আনন্দের মুহূর্ত উপহার দেবে ভাইয়েরা। কাল যেন হাসিমুখে শেষ করতে পারি।

‘শক্তি অনুযায়ী খেললে ভারতকে হারানো সম্ভব’
রুমানা আহমেদ, মেয়েদের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক

রুমানা আহমেদ
রুমানা আহমেদ

ফাইনালে চাপ থাকবে। টেনশন থাকবে। টুর্নামেন্টে একটা ম্যাচও না হারায় এগিয়ে থাকবে ভারত। এসব চিন্তা না করে নিজেদের সেরাটা খেলাই ভালো। এশিয়া কাপে ভারতই বেশির ভাগ সময়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে আছে। এসব ভাবনায় আনার দরকারই নেই। আমাদের শক্তিও কম নয়। নিজেদের শক্তি যদি কাজে লাগাতে পারি মনে হয় না ওরা জিততে পারবে। এমন তো নয় যে বাংলাদেশ অতীতে ভারতকে হারায়নি। নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেললে ভারতকে হারানো খুবই সম্ভব।
মেয়েদের এশিয়া কাপের ফাইনালে নামার আগে ভারতের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা ছিল। কাল বাংলাদেশ যদি নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলতে পারি, সমস্যা হবে না। মেয়েদের এশিয়া কাপের ফাইনালে দলের ১১ জনই অবদান রেখেছিল জয়ে। কাল ছেলেদের দলে লাগবে এটাই। একই কৌশলে খেললে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এবারই চ্যাম্পিয়ন হবে। শেষ দিকে কঠিন পরিস্থিতি থাকে। একটু ঠান্ডা মাথায় খেললে এটা সামলে ওঠা যায়। ব্যাটসম্যানের দিকে বেশি দায়িত্ব চলে আসে। শেষ দিকে প্রতি বলেই বাউন্ডারি মারা কঠিন। সে ক্ষেত্রে এক-দুইয়েও সমীকরণ মেলানো যায় অনেক সময়। যেটা আমাদের ভাইয়েরা করতে পারেনি গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (ভারতের বিপক্ষে)। টানা মেরে যাচ্ছিল। এক-দুই করে নিলেই হয়ে যেত । আর বোলিংয়ে আমাদের বোলাররা ভালো ছন্দে আছে। এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তার নেই। শেষ দিকে সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। দেশে ক্রিকেট নিয়ে অনেক উন্মাদনা। খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক থাকাই ভালো। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কারও উত্তেজিত হওয়া যাবে না। হারি আর জিতি সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে।

‘ট্রফি একটা এসে গেছে, আরেকটা আসছে’
জাহানারা আলম, পেসার

জাহানারা আলম
জাহানারা আলম

‘মেয়েদের এশিয়া কাপের শুরুতে ভাবতে পারিনি ফাইনালে উঠব। যখন উঠলাম তখন ভেবেছিলাম একটু ভালো খেললে জিততে পারব। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এবার দুটি এশিয়া কাপের ট্রফি আসবে দেশে। একটা এসে গেছে, আরেকটা আসছে। একটা ইতিহাসই হবে আশা করি। প্রতিপক্ষ হিসেবে আমাদের বিপক্ষে (মেয়েদের এশিয়া কাপ) ভারত অনেক অনেক শক্তিশালী দল ছিল। ওদের আগে কখনো হারাতে পারিনি আমরা। ২০০৮ থেকে যদি ধরি গত ১০ বছরে ওদের কখনো হারাতে পারিনি। ছেলেদের কথা যদি বলি, ভারত অবশ্যই শক্তিশালী দল। তবে ছেলেদের দলে ওদের অনেকবারই হারিয়েছে। সিরিজও জেতা হয়েছে ওদের বিপক্ষে। তবে বাংলাদেশের দুজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় থাকছে না এ ম্যাচে। দুজন না থাকার পরও মুশফিক ভাইয়ের দুর্দান্ত একটা ইনিংস আমাদের ফাইনাল তুলেছে। আশা করি এবার আর ছেলেদের দল আটকে থাকবে না। এবার আশা করি জিতবে।
চ্যাম্পিয়ন হতে আসলে ভাগ্যও লাগে। ছেলেদের দল ভারতের বিপক্ষে যে ক্লোজ ম্যাচগুলো হেরেছে সেগুলো যদি ম্যাচের আগে বিশ্লেষণ করে, তাহলে বুঝতে পারবে কখন কী করতে হবে। মাথা ঠান্ডা রেখে খেললেই হবে। দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে তারা নিয়মিত খেলে। আশা করি এবার সমস্যা হবে না। আশা করি ভাগ্য আমাদের সহায় হবে। ভালো খেললে সবাই মাথায় তুলে রাখবে, খারাপ করলে মাটিতে নামিয়ে দেবে। ট্রফি জিতলে একটা মাতামাতি তো হবেই। এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। আমরা সব সময়ই চাই বাংলাদেশ জিতবে, আনন্দের উপলক্ষে তৈরি হবে।’