বাংলাদেশের কাছে ৮ গোল খাওয়া ফিলিপাইনই আজ...

বাংলাদেশের ফুটবলে খেলোয়াড়েরা এত টাকা পান জেনে বিস্মিত ফিলিপাইনের গোলরক্ষক মাইকেল কাসার। ছবি: মাসুদ আলম
বাংলাদেশের ফুটবলে খেলোয়াড়েরা এত টাকা পান জেনে বিস্মিত ফিলিপাইনের গোলরক্ষক মাইকেল কাসার। ছবি: মাসুদ আলম
>১৯৯১ সালে প্রাক–অলিম্পিক বাছাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে ফিলিপাইনকে ৮–০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব একাই করেছিলেন ৫ গোল। সেই ফিলিপাইনের ফুটবলই এখন পৌঁছে গেছে অন্য উচ্চতায়।

‘বলেন কী, আপনাদের ফুটবলাররা বছরে ৫০-৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত পায়!’
মাইকেল কাসারের কণ্ঠে বিস্ময়। ফিলিপাইন ফুটবল দলের গোলরক্ষকের বিস্ময়ের মাত্রা আরও বাড়ল, যখন শুনলেন, চুক্তির ৮০-৯০ শতাংশ টাকা খেলা শুরুর অনেক আগেই একবারে পেয়ে যান বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
সিলেট শহরে দরগা গেটে টিম হোটেলের লবিতে বসে ফিলিপাইন গোলরক্ষক এরপর নিজেই বলেন, ‘একবারে টাকা পাওয়া মানে তো খেলার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে যেতে পারে। চোটসহ নানা কারণ দেখিয়ে সে না-ও খেলতে পারে।’ তাঁর কথায় সত্যতা আছে। বাংলাদেশে অনেক ফুটবলারই একবারে প্রায় সব টাকা পেয়ে সারা বছরই বলতে গেলে মাঠের বাইরে কাটান। কথাটা বলতেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলতে আসা কাসার বলেন, ‘আমাদের দেশে একবারে টাকা দেওয়া হয় না। প্রতি মাসে বেতন দেয় ক্লাব।’

বেতনের অঙ্কটা শুনে চোখ কপালে তুলবেন অনেকে। ৩২ বছর বয়সী গোলরক্ষক মুঠোফোনের ক্যালকুলেটরে একটা হিসাব কষেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের একেক জনের একেক রকম পেমেন্ট। ক্লাব আমাকে প্রতি মাসে ১ হাজার ডলারের মতো বেতন দেয়।’ হিসাব ঠিক আছে তো? আবার ক্যালকুলেটরে গিয়ে এই অঙ্কটাই বলেন কাসার। মাত্র ১ হাজার ডলার। সেটি মাত্র ছয় মাসের জন্য।

অথচ এই কাসাররাই চূড়ান্ত ম্যাচে তাজিকিস্তানকে হারিয়ে এই প্রথম এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে গেছে ফিলিপাইনকে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে টাকার প্রবাহ বাড়লেও জাতীয় দল এশিয়ার সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে গত চারবার গ্রুপ থেকেই নিয়েছে বিদায়। বাংলাদেশের ফিফা র্যাঙ্কিং ২০০ ছুঁই-ছুঁই। ফিলিপাইনের র্যাঙ্কিং ১৯৯৬ সালে ছিল ১৯৫, এখন ১১৪!

অথচ এই ফিলিপাইনকেই ১৯৯১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অলিম্পিকের প্রাক-বাছাইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল ৮-০ গোলে ভাসিয়ে দিয়েছিল। সাব্বিরের নেতৃত্বে মুন, আলমগীররা ছিলেন দলে। স্ট্রাইকার নকীব করেন ৫ গোল। ২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে সেটি এখন অলীক মনে হয়।

৫ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সিলেটে ফিলিপাইনকে সামনে পাবে বাংলাদেশ। ফিলিপাইন যা দল, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপটা নিয়ে যেতে পারে। যদিও এশিয়ান কাপের প্রস্তুতির জন্য ফিলিপাইনের মূল দলটা এখন কাতারে, ১৩ অক্টোবর সেখানে দলটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলবে ওমানের সঙ্গে। এখানে জাতীয় দলের কয়েকজন মূল খেলোয়াড়সহ অবশিষ্ট ফুটবলাররা এসেছেন। এঁদের ফিটনেস, উচ্চতা, শারীরিক সামর্থ্যও মামুনুলদের চেয়ে অনেক বেশি।
ফিলিপাইনের ১ নম্বর গোলরক্ষক নিল আলটেগ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কার্ডিফ সিটিতে খেলেন। গত পরশুও বার্নলির বিপক্ষে ছিলেন পোস্টের নিচে। দেশটির পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ গোল করা ফিল ইয়ংহাসবেন্ড এবং তাঁর ভাই টমাস ইয়ংহাসবেন্ড একসময় ছিলেন চেলসির যুব ক্যাম্পে।

বাংলাদেশে আসা দলটির অধিনায়ক ও স্ট্রাইকার মিসহাক খেলেন মালয়েশিয়ান লিগে। পরশু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মিসহাক বলছিলেন, ‘আমাদের অনেক ফুটবলারই দেশের বাইরে খেলে। আমাদের জাতীয় দলটা এখন অনেক শক্তিশালী। এটাই আমাদের সাফল্যের রহস্য।’এখানে আসা স্ট্রাইকার গেরাডো খেলেন মালয়েশিয়ান লিগে। কাসার নিজেও খেলেছেন বাহরাইনে।

তবে ফিলিপাইনের ঘরোয়া ফুটবল-কাঠামো এখনো নড়বড়ে। বাংলাদেশ পেশাদার লিগ চালু হয়েছে ১১ বছর আগে (যদিও তা কাগজে-কলমে) কিন্তু ফিলিপাইন পেশাদার ফুটবলে প্রবেশ করেছে বছর দুয়েক আগেই। তখন পর্যন্ত তাদের প্রিমিয়ার লিগে দল ছিল আটটি। এখন ছয়টি। দল কমার কারণ কী? কাসার বলে যান, ‘আর্থিক সমস্যায় দুই-তিনটি ক্লাব বন্ধ হয়ে গেছে।’এই ছয়টি দল একে অন্যের সঙ্গে চারবার করে খেলে। অবশ্যই হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। ঠিক এই জায়গাতেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে গেছে ফিলিপাইন। আছে কাপ টুর্নামেন্ট। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে নিয়মিত ফুটবল হয় ফিলিপাইনে, বাংলাদেশে যেটি এখন হারিয়ে গেছে।

তবে ঢাকার মতো ম্যানিলায়ও ক্লাব ফুটবলে দর্শক তেমন নেই। এ নিয়ে কাসারের একটু আক্ষেপ আছে, ‘আমি বছর কয়েক আগে ঢাকায় শেখ জামালের বিপক্ষে এএফসি কাপে ম্যানিলার ক্লাবের হয়ে খেলে গেছি। তখন শুনেছি ঢাকার বাইরে ফুটবলে প্রচুর দর্শক হয়। আমাদের দেশেও ম্যানিলার বাইরে প্রদেশগুলোয় দর্শক আসে প্রচুর। কিন্তু ম্যানিলায় বেশি লোক হয় না।’

ফিলিপাইনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে বাস্কেটবল। ঠিক যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন এক নম্বর। এখন জাতীয় দল এশিয়ান কাপে ওঠায় ফিলিপাইনের
ফুটবলে স্পনসর এগিয়ে আসছে। দিন বদলাচ্ছে ফিলিপাইনের ফুটবলে। বাংলাদেশে সেই দিন কবে আসবে?