সৌম্যর নিজেকে ফিরে পাওয়া আর ফজলের 'দুঃখ'

সেঞ্চুরির পর সৌম্য সরকার। সৌজন্য ছবি
সেঞ্চুরির পর সৌম্য সরকার। সৌজন্য ছবি
>জাতীয় লিগের প্রথম পর্বে ব্যাটসম্যানদের দাপট আর সেঞ্চুরির মেলা। সবুজ উইকেটের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও প্রথম পর্বে সেঞ্চুরি হয়েছে ১৩টি। সেঞ্চুরির এই মেলায় শেষ দিনে যোগ দিয়েছেন সৌম্য সরকার। 

সেঞ্চুরির মেলা বসেছে জাতীয় লিগের প্রথম পর্বে। প্রথম পর্বেই সেঞ্চুরি হয়েছে ১৩টি। সেঞ্চুরির এই মেলায় সৌম্য সরকার যোগ দিলেন একেবারে শেষ দিনের বিকেলে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সৌম্য সবশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ২০১৫ বিসিএলে। দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ১২৭ করেছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা পেতে সময় লেগে গেল সাড়ে তিন বছর। সৌম্য অবশ্য জানালেন, কদিন বেশ ভ্রমণ ধকল সইতে হয়েছে তাঁকে। হঠাৎ দুবাই উড়ে যাওয়া, সেখান থেকে ফিরে রাজশাহীতে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা সহজ কাজ নয়। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩ রান করলেও তাঁর তৃপ্তি ছিল ৫০টা বল খেলেছেন। সৌম্য আসলে এটাই চেষ্টা করছেন। উইকেটে থিতু হয়ে ধীরে ধীরে স্কোর সচল করতে চাইছেন।

আজ যদিও রাজশাহীর বোলারদের বিপক্ষে শুরুতে বেশ চড়াও হয়েছিলেন। বিশেষ করে জাতীয় দলের দুই সতীর্থ বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও সানজামুল ইসলামকে বেশ মেরেছেন। ১২০ বলে অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংসে ৮ চারের বিপরীতে ৭টা ছক্কা এসেছে এ কারণেই। স্ট্রাইকরেট ৮৫.৮৩ বলে দিচ্ছে চেনা সৌম্যকেই আজ দেখেছে রাজশাহী। দুঃসময় পেরিয়ে সৌম্য যে নিজেকে ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছেন, সেটি দেখা গেছে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে (করেছিলেন ১৫৪)। কিছুদিন আগে 'এ' দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দারুণ করেছেন। সবশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে ব্যাটিং বিপর্যয়ে উইকেটে টিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা ( করেছেন মূল্যবান ৩৩ রান)। সামনে হোম সিরিজের আগে প্রস্তুতির এই সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে চান সৌম্য, 'চেষ্টা করছি। রানের চেয়ে উইকেটে বেশি থাকার চেষ্টা করছি। উইকেটে থাকা মানে নিজের খেলার ধরনে খুব বেশি বদলায়নি। আগে একটু তাড়াহুড়ো করে অনেক ভুল করে ফেলতাম। এখন সেভাবে মারি না। যেটা মারার দরকার সেটাই মারি।'

সৌম্যর সেঞ্চুরি তো আছেই, রাজশাহীর বিপক্ষে আজ সেঞ্চুরি পেয়েছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা ওপেনার এনামুল হকও। ফরহাদ হোসেনের বলে এলবিডব্লু হওয়ার আগে করেছেন ১১৩। কাল ১০০ রানে অপরাজিত তুষার ইমরানের ইনিংসটা আজ থেমেছে ১৫৯ রানে। শেষদিনে খুলনার স্কোর ৭ উইকেটে ৪৬৭। ৩৪২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা খুলনার তাই ম্যাচটা ড্র করতে অসুবিধা হয়নি।

এবং ফজলের 'দুঃখ'
বগুড়ায় ফজলে মাহমুদের আফসোসের শেষ নেই। একটা যোগ্য সঙ্গীর অভাবে মাত্র ৫ রানের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছে বরিশাল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের। রংপুরের বিপক্ষে আগের দিনের ৫ উইকেটে ৩৮৪ রান নিয়ে আজ শুরু করে বরিশাল। তৃতীয় দিনে ১৩০ রানে অপরাজিত থাকা ফজলের সামনে সুযোগ ছিল ইনিংসটা ডাবলে রূপ দেওয়া। কিন্তু সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের যাওয়া হাসার মিছিলে হারিয়ে গেল তাঁর ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন। দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলে তাঁর রান ১৯৫। বরিশাল অলআউট ৪৫৮ রানে।

ডাবল সেঞ্চুরির আফসোস কিছুতেই ভুলতে পারছেন না ফজলে, 'আজ সারা দিন আমাদের ব্যাটসম্যানরা তেমন রান করতে পারেনি। শেষ দিকে আমাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো তেমন কেউ ছিল না। ৮ উইকেট থাকলেও হয়ে যেত। যখন ৯ উইকেট পড়ল ভয় ভয় লাগছিল। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আসা রাব্বীর (কামরুল ইসলাম) বিপক্ষে ওরা জোরালো আবেদন করেছিল। ৫০-৫০ সুযোগ ছিল। আমি আর অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানের ওপর ভরসা রাখতে পারলাম না। ভাবলাম, আউট যদি হই আমিই হই। একটা সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন। পারিনি। ৫ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছি, এই দুঃখ কোথায় রাখি! তিন দিন ব্যাটিং করলাম। অথচ ডাবল সেঞ্চুরি ফসকে গেল অল্পের জন্য!’

ফজলে অল্পের জন্য ডাবল সেঞ্চুরির হতাশায় পুড়লেও রংপুরের নাঈম ইসলাম জাতীয় লিগের প্রথম পর্ব শেষ করেছেন সেঞ্চুরির আনন্দ নিয়ে। বরিশাল-রংপুর ম্যাচের ফল? অবশ্যই ড্র। ফল এসেছে বাকি দুটিতে। দুটিতে জিতেছে দুই ঢাকা---একটি বিভাগ, আরেকটি মহানগর! সিলেট বিভাগকে ঢাকা মহানগর হারিয়েছে ইনিংস ও ৪১ রানে। আর ফতুল্লায় চট্টগ্রাম বিভাগকে ২১৪ রানে হারিয়েছে ঢাকা বিভাগ।