জার্মান-যন্ত্র এখন বিকল!

গোলপোস্টের জাল আর নয়্যারের এই ছবিটি প্রতীকী। জার্মানি এ বছর যেন ব্যর্থতার জালে বন্দী! ছবি: রয়টার্স
গোলপোস্টের জাল আর নয়্যারের এই ছবিটি প্রতীকী। জার্মানি এ বছর যেন ব্যর্থতার জালে বন্দী! ছবি: রয়টার্স
>

উয়েফা নেশনস লিগে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছে জার্মানি। আগের ম্যাচেও নেদারল্যান্ডসের কাছে ৩-০ গোলে উড়ে গিয়েছিল তারা। বিশ্বকাপের ব্যর্থতা এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে ফিরছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।

রাশিয়া বিশ্বকাপে চেপে বসা ‘ভূত’ তাড়াতে পারেনি জার্মানি। ধারাবাহিকভাবে বাজে খেলে চলছে জোয়াকিম লো-র দল। পরিস্থিতি এমন শোচনীয় যে পরিসংখ্যানের পাতা ঘেঁটে দেখতে হচ্ছে, জার্মান দল শেষ কোন বছর এত বাজে খেলেছে। না, পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালটা জার্মানির জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। কাল রাতে সেই দুঃস্বপ্নের আখ্যানে ফ্রান্স কেবল আরেকটি পর্বই যোগ করেছে।

প্যারিসে উয়েফা নেশনস লিগে ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে জার্মানি। বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মতোই খেলেছে দিদিয়ের দেশমের দল। জার্মানি ১-০ গোলে এগিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করলেও ব্যবধানটা ধরে রাখতে পারেনি। বিরতির পর আঁতোয়ান গ্রিজমানের জোড়া গোলে নেশনস লিগে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় ফ্রান্স। আর জার্মানি? যে দলটির খেলার সঙ্গে এত দিন যন্ত্রের তুলনা চলত, সেই জার্মান-যন্ত্র এখন যেন বিকল! টানা তিন ম্যাচেই জয়বঞ্চিত থাকায় চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এখন নেশনস লিগের গ্রুপ-ওয়ান থেকে অবনমনে পড়ার শঙ্কায়।

লো-র এই জার্মানি আসলে বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্নই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাশিয়ায় ৮০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয় তাঁর দল। নেশনস লিগে দলের সেই টানা ব্যর্থতার পাল্লা কেবল ভারীই হচ্ছে। অথচ, ফ্রান্সের বিপক্ষে জার্মানি যে খুব খারাপ খেলেছে তা নয়। বল দখলে (৫৭%) জার্মানরাই এগিয়ে ছিল। ১১টি শট নিয়ে ৩টি পোস্টে রাখলেও ম্যাচ বের করতে পারেনি লো-র শিষ্যরা। ১৪ মিনিটে লেরয় সানের পাস ফরাসি মিডফিল্ডার পল কিমপেম্বের হাতে লাগলে পেনাল্টি পায় জার্মানি। সেটি থেকে টনি ক্রুস এগিয়ে দেন দলকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর রীতিমতো ঝিমিয়ে পড়ে তারা। এই সুযোগেই ৬২ মিনিটে এক ক্রস থেকে নিখুঁত হেডে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান গ্রিজমান।
নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট আগে জার্মানির বিপদ বাড়ান ম্যাট হামেলস। ফরাসি মিডফিল্ডার ব্লেইস মাতুইদিকে ফাউল করেন বক্সের মধ্যে। রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। স্পটকিক থেকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন গ্রিজমান। জার্মান কোচ লো অবশ্য এই পেনাল্টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শিষ্যরা ফ্রান্সের চোখে চোখ রেখেই খেলেছে বলে মনে করেন লো। শুধু দ্বিতীয় গোলটা পায়নি। ম্যাচ শেষে লো বলেন,‘ওটা পেনাল্টি ছিল না। ম্যাট তাঁকে স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলেছি। কিন্তু দ্বিতীয় গোলটা করতে হতো।’

জোড়া গোল করে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করেন গ্রিজমান। ছবি: রয়টার্স
জোড়া গোল করে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করেন গ্রিজমান। ছবি: রয়টার্স

সেই গোলটা না পাওয়ায় জার্মানির ব্যর্থতার খাতাটা আরও ভারী হলো। ম্যাচ হারের হিসেবে এটাই জার্মানির সবচেয়ে বাজে বছর। মোট ছয় ম্যাচ হেরেছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ব্রাজিল, অস্ট্রিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও হল্যান্ডের পর ফ্রান্সের কাছে হারল জার্মানি। জাতীয় দল প্রতিষ্ঠার পর এক বর্ষপঞ্জিতে জার্মানি কখনো এত বেশি ম্যাচ হারেনি। ১৯৫৬ ও ১৯৮৫ সালে পাঁচ ম্যাচ হেরেছিল তারা।

প্রায় ২০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম টানা চারটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে জয়হীন থাকল জার্মানি। সর্বশেষ ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে টানা চার ম্যাচ জয়বঞ্চিত ছিল তারা। আর গত ১৮ বছরের মধ্যে জার্মানি এবারই প্রথম টানা দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে হারল। ওহ, আরেকটা ব্যাপার—এ নিয়ে টানা তিনটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হলো লো-র দল। জার্মান ফুটবল দলের ইতিহাসে যা এই প্রথম!

বোঝাই যাচ্ছে, কী ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছে লো। বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের পরও তাঁর ওপর ভরসা রেখেছিল জার্মানি। কিন্তু বিশ্বকাপে বিধ্বস্ত হওয়ার দুঃস্বপ্ন থেকে দলকে এখনো বের করে আনতে পারেননি কোচ। চাকরিটা তাঁর থাকবে তো!