হেরেই চলেছে রিয়াল মাদ্রিদ

দলের একমাত্র গোলটি তাঁর, তবু মার্সেলোর এমন হতাশাই বুঝিয়ে দিচ্ছে রিয়ালের বর্তমান অবস্থা। ছবি: রয়টার্স
দলের একমাত্র গোলটি তাঁর, তবু মার্সেলোর এমন হতাশাই বুঝিয়ে দিচ্ছে রিয়ালের বর্তমান অবস্থা। ছবি: রয়টার্স
>
  • টানা ৫ ম্যাচ জয়হীন রিয়াল
  • ঘরের মাঠে এ মৌসুমে প্রথম হার রিয়ালের

৪৩ মিনিটে হুলেন লোপেতেগি যে ঈশ্বরকে ডেকেছেন এ নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। হাজার মাইল দূরে থাকা ব্যক্তি, যাঁকে টিভি পর্দায়ও দেখানো হচ্ছিল না; তাঁর ব্যাপারে এমন মন্তব্য করার ভিত্তি আছে। ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিং এর সাহায্য নিয়েছেন রেফারি। আগের দুই সিদ্ধান্ত রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গেছে, তৃতীয়টিও যদি সে পথে যায়! সে ক্ষেত্রে নিজেদের মাঠে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ত রিয়াল। অতীতের লস ব্লাঙ্কোরা এমন অবস্থায় কী করত সেটা ভুলে যান, লোপেতেগির দল যে আর ম্যাচে ফিরতে পারত না এ নিয়ে বাজি ধরতে কারও আপত্তি নেই! ভিএআরকে সে মুহূর্তে পক্ষে পেয়েও লাভ হয়নি রিয়ালের। লেভান্তের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে রিয়াল।

চার শ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে গোল করছে না রিয়াল। ৪২৫ মিনিটে সে অপেক্ষা শেষ হয়েছিল। কিন্তু ১৬ মিনিটে মার্কো অ্যাসেনসিওর হেড প্রথমে গোল ঘোষণা করেও ভিএআরের সহযোগিতায় বাতিল করেন রেফারি। সার্জিও রামোসের হেড ক্রসবারে লেগে ফিরে আসা বলে হেড করেছিলেন অ্যাসেনসিও। কিন্তু রামোসের হেড নেওয়ার মুহূর্তে অফসাইডে ছিলেন এই উইঙ্গার।

রিয়ালকে ভিএআর হতাশ করেছে এর ৪ মিনিট আগেই। ডি বক্সের বাইরে বল রাফায়েল ভারানের হাতে বল লাগায় ফ্রি কিকের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন রেফারি। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু সে শোরগোলে কান না দিয়ে রেফারি তখন ব্যস্ত ভিএআরের সাহায্য নিতে। রিপ্লেতে দেখা গেল হ্যান্ডবলের সময় ভারানে বক্সের মধ্যেই ছিলেন। পেনাল্টি! রজারের শট থিবো কোর্তোয়ার হাতের ছোঁয়া নিয়েই জালে গেল। ২-০ গোলে এগিয়ে গেল লেভান্তে।

লেভান্তের প্রথম গোলেও ভারানের নাম যুক্ত থাকবে। সার্জিও পোস্তিগোর থ্রু বল বুঝতেই পারেননি এই ডিফেন্ডার। সে সুবাদে এগিয়ে আসা কোর্তোয়াকে কাটিয়ে এগিয়ে গেলেন হোসে মোরালেস। ৬ মিনিটের মধ্যেই বার্নাব্যুকে হতভম্ব করে এগিয়ে গেল লেভান্তে। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে রিয়ালের রক্ষণে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছেন এই স্ট্রাইকার। উল্টো দিকে রিয়ালের ফরোয়ার্ডরা রীতিমতো হতাশ করেছেন। ৪২ মিনিটেই গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি লুকাস ভাসকেজ।

রিয়ালের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ গোলখরার পেছনে অবশ্য ভাগ্যও ভূমিকা রেখেছে। ১৬ মিনিটে রামোসের হেড ক্রসবারে লাগার পর আরও দুবার বার অথবা পোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রিয়ালের সামনে। আর যখনই বার বা পোস্ট থেকে দূরে বল পাঠিয়েছে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা, তখনই অবিশ্বাস্য দক্ষতায় সব ঠেকিয়ে দিয়েছেন লেভান্তে গোলরক্ষক ওয়ের।

দ্বিতীয়ার্ধে বেল, বেনজেমা ও সেবায়োসকে নামিয়ে খেলার ধরন পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লোপেতেগি। ধীরে ধীরে বলের দখল বাড়তে লাগল রিয়ালের। একের পর এক সুযোগও। কিন্তু ওয়েরকে হারাতে পারছিলেন না কেউ। অবশেষে ৭১ মিনিটে রিয়ালের কপাল ফিরল। ডান প্রান্ত থেকে ভাসকেজের ক্রস হেড করে বেনজেমার কাছে পাঠালেন বেল। বেনজেমা সে বল সতীর্থ ফরোয়ার্ড মারিয়ানোর দিকে না পাঠিয়ে দিলেন মার্সোলোর কাছে। এমন সিদ্ধান্তই দ্বিধায় ফেলে দিল লেভান্তেকে। ফাঁকায় বল পেয়ে দুর্দান্ত এক শটে গোল করলেন মার্সেলো। ৪৮০ মিনিট পর গোল পেল রিয়াল!

৭৫ মিনিটেই সমতা প্রায় ফিরিয়ে এনেছিলেন বেনজেমা। কিন্তু তাঁর বাঁকানো শট ওয়েরকে ফাঁকি দিয়েও গিয়ে লাগল পোস্টে! এরপরও একের পর এক আক্রমণ করে গেছে রিয়াল। কিন্তু ৪৮০ মিনিট পরে প্রথম গোল পাওয়া দলটি পরের ১৯ মিনিটে আরেকটি গোল করতে পারেনি। ৮৭ মিনিটে মারিয়ানো জালে বল পাঠিয়েছেন কিন্তু সেটাও অফসাইডে বাতিল হয়েছে। বেনজেমার হেড ওয়ের ঠেকিয়ে দিলে মারিয়ানো ফিরতি বল জালে পাঠান। কিন্তু বেনজেমার হেডের সময় অফসাইডে ছিলেন মারিয়ানো।

শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধান ধরে রেখেই মাঠ ছেড়েছে লেভান্তে। আর ৯ ম্যাচে তৃতীয় হারে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে পাঁচে রিয়াল। আগামীকালের মধ্যেই সাত বা আটে নেমে যেতে পারে তারা। এমন অবস্থায় লিগে পরের ম্যাচই এল ক্লাসিকো। লোপেতেগি এ দল নিয়েই ন্যু ক্যাম্পে যাবেন বার্সেলোনার মুখোমুখি হতে। যদি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত রিয়ালের কোচ থাকার সৌভাগ্য তাঁর হয়!