আম-ছালা দুই-ই যাচ্ছে লোপেতেগির

হাজার চেষ্টাতেও কপালের চিন্তার ভাঁজ সরছে না লোপেতেগির। ছবি: রয়টার্স
হাজার চেষ্টাতেও কপালের চিন্তার ভাঁজ সরছে না লোপেতেগির। ছবি: রয়টার্স
>বিশ্বকাপের একদিন আগে স্পেন থেকে বহিষ্কার। সেখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ, কিন্তু মধুচন্দ্রিমা শেষ হতে না হতেই আবারও বহিষ্কারের সম্মুখীন হতে চলেছেন লোপেতেগি।

আম-ছালা দুই-এই গেল, বাংলা প্রবাদবাক্যটা নিজের জীবনের সঙ্গে মেলাতেই পারেন হুলেন লোপেতেগি। এই মৌসুমে তার ওপর দিয়ে ঝড় যাচ্ছে ভালোই। সামলানো ফুরসতই পাচ্ছেন না তিনি। এক ঝড় সামলে যে-ই না একটু নিজেকে একটু হালকা করতে যাবেন, সেই মুহূর্তে আরেক ঝড়ে উথাল-পাতাল তার জীবন। রিয়াল মাদ্রিদের কোচের পদে হয়তো আর বেশি দিন থাকা হচ্ছে না তাঁর।

এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা আর কাউকে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। একের পর এক দুর্যোগ মৌসুমের শুরু থেকেই সঙ্গী রিয়াল আর কোচ হুলেন লোপেতেগির। মৌসুমের শুরুতেই বিদায় বলে দেওয়া ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেন দলকে ফেলে রেখে গেছেন অথই সাগরে। বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে স্পেন জাতীয় দলের কোচের চাকরি হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে কোচিং করতে আসা লোপেতেগি প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই হজম করেন চার গোল। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে উয়েফা সুপার কাপ হেরে মৌসুম শুরু হয় লোপেতেগির।

কিন্তু প্রথম ম্যাচের পরেই দলকে ঠিকই সামলে নিয়েছিলেন। এক হারের পর তিন ম্যাচে গোলের বন্যা বইয়ে দিয়ে জয় তুলে এনেছেন। এক ম্যাচ ড্রয়ের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে সেই চিরচেনা রিয়াল মাদ্রিদ। ক্ষুধার্ত এই রিয়াল মাদ্রিদকে যেন আগে কেউ কখনো দেখেনি। কিন্তু তারপর থেকেই অধঃপতনের শুরু।

খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা যে নিজেরও ব্যর্থতা। ছবি: রয়টার্স
খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা যে নিজেরও ব্যর্থতা। ছবি: রয়টার্স

টানা সাড়ে সাত ঘণ্টা গোলশূন্য থাকা। টানা ৫ ম্যাচ হার। দলের ভঙ্গুর কম্বিনেশন, সব মিলিয়ে তাকে এনে দাঁড় করিয়েছে খাদের কিনারায়। রিয়ালকে যেভাবে সাজিয়েছিলেন, তার পুরোটাই জলাঞ্জলি গিয়েছে প্রতিপক্ষ দলের সামনে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আর সেভিয়া বাদ দিয়ে আলাভেস, এসপানিওলের বিপক্ষে পর্যন্ত ড্র করতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়নস লিগে অপ্রতিরোধ্য রিয়াল মাদ্রিদও খেই হারিয়েছে সিএসকেএ মস্কোর কাছে। এত দিন হয়তো দলের কম্বিনেশন কিংবা গোল না পাওয়ার ওপর দায় চাপিয়েছেন সমর্থকেরা। কিন্তু এখন পুরো দায়টাই বর্তাচ্ছে লোপেতেগির ওপর। রিয়ালের মতো দলের কোচ হয়েছেন, আর দলের ব্যর্থার দায় নেবেন না, সেটি কীভাবে হয়!
স্পেনের কোচ হিসেবে ভালোই ছিলেন লোপেতেগি। ‘লা রোজা’দের নিয়ে দুই বছরে হারের মুখ দেখেননি লোপেতেগি। বিশ্বকাপে তার হাত ধরেই বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন বুনছিল সকলে, কিন্তু ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের একটি ফোন স্পেন জাতীয় দলের কোচের পদে থেকেই তাঁকে রাজি করিয়েছিল রিয়ালের কোচ হতে। কিন্তু সেই ভুল পদক্ষেপ লোপেতেগির জীবনের দুই কূলই বরবাদ করে দিতে বসেছে। স্পেনের কোচ থেকে বরখাস্ত হয়ে নিজের প্রিয় ক্লাবে ফিরেছিলেন। কিন্তু সে চাকরিও টিকছে না।

রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের কাছে আবেগের মূল্য খুবই কম। তার কাছে শেষ কথা সাফল্য। সাফল্য নেই তো বিদায়। সেখানে বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা শোচনীয়। লা লিগায় দলের অবস্থান বর্তমানে সাতে। চ্যাম্পিয়নস লিগেও ইতিমধ্যে হার দেখেছেন লোপেতেগি। এই দলের হারাবার আর কিছুই নেই। সামনে এল ক্লাসিকো, হারাবার বলতে সামনে এই এল ক্লাসিকোই। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে ভিক্টোরিয়া প্লাজেনের ম্যাচের আগে সম্ভবত ট্যাকটিকস বোর্ড নিয়ে বসবার শেষ সুযোগ পাচ্ছেন লোপেতেগি।

লোপেতেগি সমর্থকদের মন হারিয়েছেন নিজের পজেশন বেসড ফুটবল দিয়েই। রিয়াল মাদ্রিদের মতো গতিময় ও প্রতি আক্রমণনির্ভর দলের সমর্থকদের মন হারাতে সময় লাগেনি লোপেতেগির। বোর্ডের আস্থাও হারিয়েছেন এস্পানিওলের বিপক্ষে হারের পর। মার্কার ভোটে ৫৩ শতাংশ সমর্থকও চান এল ক্লাসিকোর আগেই বিদেয় হোন লোপেতেগি। এক মৌসুমে দুইবার বহিষ্কার হওয়ার খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন লোপেতেগি। তবে যাওয়ার আগে একটা কথা ভেবেই সান্ত্বনা পেতে পারেন লোপেতেগি, তিনিই রিয়াল মাদ্রিদের ডাগ আউটে সবচেয়ে কম সময় থাকা কোচ নন। মারিয়ানো গার্সিয়া ২০০৪ সালে রিয়ালের কোচ হয়েছিলেন মাত্র ৩ মাসের জন্য। সেবার এক বছরে তিন কোচকে বহিষ্কার করেছিলেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ।