ভাই, আমাকে খেলতে দেন: ইমরুল

ইমরুল কায়েস। দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর। ছবি: শামসুল হক
ইমরুল কায়েস। দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর। ছবি: শামসুল হক

ধারাবাহিকতা নেই—এ কথা শুনতে শুনতে ইমরুল কায়েসের কান পচে গেছে! লোকের কথায় ইমরুল আর কান দেন না। কান পেতে থাকেন নিজের হৃদয়ের দাবিতে। সেটি অবশ্যই রান করা এবং দেশের হয়ে ভালো খেলা। ইমরুল যে ভালো খেলতে মরিয়া, সেটি এর আগেও যেমন বোঝা গেছে, তেমনি আরেকবার বোঝা গেল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজেও। কী ভীষণ ধারাবাহিক!

তিন ম্যাচের সিরিজে ইমরুলের স্কোর সবার মুখস্থ। নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়াটা তাই বাহুল্য। কিন্তু তারপরও মনে করিয়ে দিতে হবে। কারণ, এই ইমরুলকে নিয়ে চায়ের কাপে কম ঝড় ওঠেনি। তাঁর সামর্থ্য নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের এই সিরিজে তাঁর স্কোর যথাক্রমে ১৪৪, ৯০ ও ১১৫। তিনটি ম্যাচেই দলের জয়ে অসামান্য ভূমিকা রয়েছে তাঁর ইনিংসের। আর এই সুবাদে ‘ইমরুল মোটেও ধারাবাহিক নয়’—বহুদিনের এই চর্বিতচর্বণ কথাটারও কি অপমৃত্যু ঘটল?

জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করার পর সংবাদ সম্মেলনে ইমরুলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁর ব্যাটের ধারাবাহিকতা নিয়ে। জবাবটা ফ্রন্ট ফুটে সপাটে ড্রাইভ করে দিতে পারতেন এই ওপেনার। অমন দুর্দান্ত তিনটি ইনিংস খেলার পর সেই সুযোগ ছিল। কিন্তু ইমরুল বরাবরই পাদপ্রদীপের আলো এড়িয়ে চলা ক্রিকেটার। প্রশ্নের জবাবটা দিলেন তাই নিখুঁত ফরোয়ার্ড ডিফেন্সে। ইমরুল যেন বোঝাতে চাইলেন, আমাকে নিয়ে আবার এত কথার কী আছে!

জবাবটা শুনুন ইমরুলের মুখেই, ‘ভাই, আমাকে খেলতে দেন। আমি অত কিছু জানি না। এত বড় খেলোয়াড় হইনি এখনো। তিনটা ম্যাচ ভালো খেলেছি, চেষ্টা করব বাকি ম্যাচগুলো ভালো খেলার।’ চাইলে ইমরুলের এই কথাকে বিনয়ের মোড়কে সুপ্ত আর্তনাদ হিসেবেও ধরা যায়। ইমরুল সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার শিকার হওয়া ক্রিকেটারদের একজন। আবার দল কোনো বিপদে পড়লে তাঁকেই স্মরণ করা হয়।

এশিয়া কাপে যেমন টপ অর্ডার ক্রমাগত ব্যর্থ হওয়ায় ইমরুলের শরণ নেওয়া হয়েছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ৭২ রানের সেই ইনিংসটা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও দলে জায়গা পাইয়ে দেয়। বাকিটা ইতিহাস। দেশের হয়ে তিন ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রান করার হিরণ্ময় ইতিহাস। এই পথে আরেকটু হাঁটলেই ভাঙতে পারতেন বিশ্ব রেকর্ডও। সেটি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, যা দখল করে আছেন বাবর আজম (৩৬০ রান)।

এই সিরিজে ইমরুলের রান ৩৪৯। অর্থাৎ আর ১২ রান করলেই ভাঙতে পারতেন বিশ্ব রেকর্ড। তৃতীয় ম্যাচে ইমরুল (১১৫) যখন আউট হলেন জয় থেকে দল তখন ১৩ রানের দূরত্বে। অর্থাৎ নিজের ইনিংসের মাঝপথে আরেকটু চালিয়ে খেলে শেষ পর্যন্ত থাকলে রেকর্ডটি হয়ে যেত ইমরুলের। কিংবা সৌম্য সরকার যদি আরেকটি কম স্ট্রোক খেলতেন আর ইমরুল শেষ পর্যন্ত থাকতেন? তাহলেও হয়ে যেত। মজার ব্যাপার, সংবাদকর্মীদের এত সব সমীকরণ নিয়ে ইমরুলের কোনো মাথাব্যথাই নেই! তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, ‘এটা (রেকর্ড) মাথায় ছিল না। জানতাম না। আসলে খেলার সময় কোনটা রেকর্ড হচ্ছে, কী হচ্ছে, এসব মাথায় থাকে না। জাস্ট ফোকাস করি বল টু বল।’

এশিয়া কাপে সৌম্য আর ইমরুল দুজনেই হুট করে দলে ডাক পেয়েছিলেন। তার আগে বাদ পড়েছিলেন রানখরার জন্য। বোঝাই যায়, দুজনের মনেই ভালো করার প্রতিজ্ঞা ছিল। আর একসঙ্গে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়ায় সেই প্রতিজ্ঞা অনূদিত হয়েছে রানের ফোয়ারা হয়ে। সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সৌম্যও। ইমরুল জানালেন, সৌম্যর সঙ্গে ব্যাটিংটা তিনি বরাবরই উপভোগ করেন, ‘সৌম্যর সঙ্গে যখন ব্যাট করি, নিজের খুব ভালো লাগে। ওর সঙ্গে ব্যাট করলে চাপ জিনিসটা থাকে না। ও অনেক স্ট্রোক খেলে। আমি এক পাশ থেকে যদি রান নাও করতে পারি, ও আরেক পাশ থেকে পুষিয়ে দেয়।’