বল টেম্পারিংয়ের দায়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপ্রধানের পদত্যাগ

>
সিএ সভাপতির পদ ছাড়লেন পিভার। ছবি: টুইটার
সিএ সভাপতির পদ ছাড়লেন পিভার। ছবি: টুইটার

গত মার্চে কেপটাউনে বল টেম্পারিং–কাণ্ডের স্বাধীন পর্যালোচনা করেছিল সিডনিভিত্তিক নৈতিকতা কেন্দ্র ‘লংস্টাফ’। সেই প্রতিবেদনে জানানো হয়, বল টেম্পারিংয়ের দায় রয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ারও (সিএ)। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে পদত্যাগ করলেন সিএ সভাপতি ডেভিড পিভার

আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) সভাপতির পদ ছেড়েছেন ডেভিড পিভার। সেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার নেপথ্যে রয়েছে গত মার্চে কেপটাউন টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলের বল টেম্পারিং–কলঙ্ক। যে কারণে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে নিষিদ্ধ করেছিল সিএ। কিন্তু গত সোমবার সিডনিভিত্তিক নৈতিকতা কেন্দ্র ‘লংস্টাফ’–এর স্বাধীন পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে হাঁড়ির খবর। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, বল টেম্পারিংয়ের দায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডেরও (সিএ)। যেকোনো মূল্যে জিততে হবে—এমন মানসিকতা বোর্ড খেলোয়াড়দের মাথায় ঢুকিয়েছে বলেই কেপটাউনে বল টেম্পারিং হয়েছে। এ নিয়ে চারপাশ থেকে ধেয়ে আসা তুমুল সমালোচনার মধ্যে সিএ সভাপতির পদ ছাড়লেন পিভার।

অথচ সপ্তাহখানেক আগেই নতুন করে তিন বছর মেয়াদে সিএ সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন পিভার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সংস্কৃতি নিয়ে সেই স্বাধীন প্রতিবেদন তাঁকে নতুন মেয়াদে কয়েক দিনের বেশি টিকতে দিল না। আজ সিএর বোর্ড মিটিংয়ে পিভারের পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থায়ী সভাপতি হিসেবে কেউ নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে সিএর দায়িত্ব পালন করবেন পিভারেরই ডেপুটি আর্ল এডিংস। এক বিবৃতিতে এডিংস বলেন, ‘পিভারকে তাঁর সেবার জন্য ধন্যবাদ। মেয়েদের ক্রিকেট উন্নয়নে তিনি দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। বোর্ড জানে ক্রিকেটমহলের আস্থা ফিরে পেতে অনেক কাজ করতে হবে। আমরা এবং নির্বাহী কমিটি তা করতে বদ্ধপরিকর।’

সেই স্বাধীন পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সাইমন লংস্টাফ ও সাবেক টেস্ট রিক ম্যাককস্কার প্রশ্ন তোলেন, বল টেম্পারিংয়ের দায় শুধু খেলোয়াড়দের কেন? এ নিয়ে সিএর নেতৃবৃন্দও কেন প্রশ্নের মুখে পড়বেন না? সভাপতি হিসেবে নতুন মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে এই প্রতিবেদন রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাগুলোর কাছে প্রকাশ করেনি পিভারের নেতৃত্বাধীন বোর্ড। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন পিভার। এরপর থেকেই সিএর অধীনে চলার ব্যাপারে দ্বিধায় ছিল অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা। এর মধ্যে দেশটির তিনটি রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা—নিউ সাউথ ওয়েলস, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও ভিক্টোরিয়া—সরাসরি বিরোধিতা করেছে পিভারের।

এই ঝামেলার মধ্যেই ‘লংস্টাফ’ প্রতিবেদনের জবাব দিতে ব্যর্থ হন পিভার। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংস্কৃতি নেমে যাওয়ার দায় নেয়নি তাঁর বোর্ড। উল্টো পিভার তখন জানিয়ে দেন, সিএকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনিই যোগ্য লোক। এ ছাড়া একটি সাক্ষাৎকারে কেপটাউনের বল টেম্পারিংকে অতটা গুরুত্বের চোখে না দেখেও সমালোচিত হন পিভার।

বল টেম্পারিংয়ে জড়িত থাকায় স্মিথ ও ওয়ার্নারকে ১২ মাস আর ব্যানক্রফটকে ৯ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল সিএ। ‘লংস্টাফ’ প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশ্ন ওঠে, যেহেতু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডেরও দায় আছে, তাই শুধু খেলোয়াড়েরা শাস্তি পাবেন কেন? তখন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিবি) খেলোয়াড়দের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি করেছিল। কিন্তু পিভারের নেতৃত্বাধীন বোর্ড সেই দাবিতে কান দেয়নি। এ নিয়ে সিএর তুমুল সমালোচনা করেছিলেন ইয়ান চ্যাপেলের মতো অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তিরা।

পিভারের পদত্যাগের মাধ্যমে সিএতে বেশ কিছুদিনের রদবদল–প্রক্রিয়া সম্ভবত শেষ হলো। নতুন অধিনায়ক ও নতুন কোচের নিয়োগ দিয়েছে সিএ। বোর্ডের নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রবার্টস। ১৭ বছর সিএ নির্বাহী পদে থাকা জেমস সাদারল্যান্ডের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। এ ছাড়ার অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ম্যানেজার প্যাট হাওয়ার্ড জানিয়েছেন, তিনি নতুন করে আর চুক্তি নবায়ন করবেন না।