তাইজুলের জন্য মন খারাপ হবে আপনার

৬ উইকেট নিয়েও তাইজুল যেদিন কাঠগড়ায়! ছবি: শামসুল হক
৬ উইকেট নিয়েও তাইজুল যেদিন কাঠগড়ায়! ছবি: শামসুল হক
>২০ টেস্টে ৭৫ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে ম্যাচ সংখ্যায় দ্রুততম সময়ে এই মাইলফলক। কিন্তু তাইজুলের মুখে হাসি নেই!

বেচারা তাইজুল ইসলাম! ইনিংসে ৬ উইকেট পেয়েছেন। আজ জিম্বাবুয়ে যে ২১ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারাল, ৪ উইকেট তুলে নিয়ে এর মূল কৃতিত্ব ছিল তাইজুলেরই। ২০তম টেস্টে ৭৫ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ম্যাচ সংখ্যায় দ্রুততম। এমন দিনে সংবাদ সম্মেলনে এলেন, যেদিন তাঁর উদ্দেশে ছুড়ে দেওয়া বাক্যের প্রথম শব্দটাই হওয়া উচিত ছিল ‘অভিনন্দন’! এর বদলে তাইজুলকে এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো, যার দায় তাঁর নয়। সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ভয়াবহ ব্যর্থতায় নিজেও মুখ কালো করে বসে থাকলেন, চেষ্টা করে গেলেন সতীর্থদের আড়াল করার।

নিজের এমন পারফরম্যান্স যে দলের ব্যর্থতায় ম্লান হয়ে গেল, এ ব্যাপারে তাইজুল দার্শনিক হয়ে থাকার চেষ্টা করলেন, ‘আসলে ক্রিকেটে কখনো ভালো হবে, আবার কখনো খারাপ হবে। এমন সময় কিন্তু আসে। সকালে হয়তো আমাদের সময়টা ভালো কেটেছে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর থেকে দুই সেশন আমাদের পক্ষে আসেনি। আমাদের হাতে আরও তিন দিন সময় আছে, আমরা চেষ্টা করব ওদের দ্রুত অলআউট করার।’

তাইজুল নিজেও স্বীকার করলেন, দলের অবস্থা বিবেচনায় ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ৫ উইকেট পাওয়া নিয়ে আনন্দ করার উপায় নেই, ‘৬ উইকেট পাওয়ার অনুভূতিটা ভালোই। আসলে পাঁচ উইকেট-ছয় উইকেট তো সব সময় আসে না। অবশ্যই ভালো লাগছে। কিন্তু আমি আসলে দলের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাইব। দল ভালো করলে ভালো লাগবে।’

বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে টেস্টে ৭৫ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন। আর চার উইকেট পেলে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে (৭৮ উইকেট) টপকে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা বোলার হয়ে যাবেন। এই সিরিজেই সেটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই টেস্টে হলে তো আরও ভালো হয়। বাংলাদেশ ১৪০ রানে পিছিয়ে। জিম্বাবুয়েকে ১৫০ রানের মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট করতে চায় দল। তা পারলেও চতুর্থ ইনিংসে তিন শর মতো রান তাড়া করে জিততে হবে।

এই টেস্ট ফল দেখছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে দ্বিতীয় দিনেই। খেলা পঞ্চম দিনে গড়াবে কি না, তা নিয়েই এখন সন্দেহ। জিম্বাবুয়ে কাল সারা দিন ব্যাটিং করতে চায়। আর তাদের চাওয়া পূরণ হলে বাংলাদেশকে বেশ লম্বা পাহাড় টপকাতে হবে। মৃদুভাষী তাইজুল অবশ্য দলকে আশার কথাই শুনিয়ে গেলেন, ‘টেস্ট রেকর্ডের খেলা। টেস্টেই বেশি রেকর্ড হয়। আমরা তাই চাচ্ছি বাংলাদেশ এমন কোনো রেকর্ড করুক।’

তবে আপাতত প্রধান লক্ষ্য জিম্বাবুয়েকে যত দ্রুত সম্ভব অলআউট করা। আর সেই দায়িত্ব মূলত তাঁকেই নিতে হবে। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বোলিংয়ে মূল ভারটা প্রায় তাঁর একার কাঁধে চেপেছে। এই টেস্টেই যেমন এরই মধ্যে ৪০ ওভারের বেশি বোলিং করেছেন। এ নিয়ে তাঁর কোনো আপত্তিও নেই।

আপত্তি করার বিলাসিতাই বা কোথায়। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েও যে তাইজুলকে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। এমনিতেই আরও অনেক সতীর্থের মতো তাঁর মধ্যে গ্ল্যামারের ছটা নেই। উইকেট পেলেও সেই উদ্‌যাপনে বাড়াবাড়ি কিছু থাকে না, কেউ কেউ যেখানে এক উইকেট পেলেই সাপের ফণা তোলে। তাইজুল জানেন, ছোবল তোলার কাজটা নীরবে করে যেতে হয়। তিনি যে এই দলের তারকা নন, নীরব শ্রমিক একজন!
তবে সতীর্থদের কাছ থেকে একটা স্যরি পাওনা পড়ে রইল। মুখে বলতে হবে না। মাঠে দারুণ খেলে ভুল শুধরে নিলেই হবে।