মাঠে ঢুকে পড়ার আগে একবার ভাবুন

মুশফিককে জড়িয়ে ধরতে মাঠে ঢুকে পড়েছে দর্শক। ছবি: শামসুল হক
মুশফিককে জড়িয়ে ধরতে মাঠে ঢুকে পড়েছে দর্শক। ছবি: শামসুল হক
>

আজও মাঠে ঢুকে পড়েছে দর্শক। সিলেট টেস্টে প্রথম দিনে দেখা গিয়েছে একই দৃশ্য। দৃশ্যটা আবেগময়, কিন্তু পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।


দ্বিতীয় সেশনে পিটার মুরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ দল যখন উদ্‌যাপনে ব্যস্ত, জিম্বাবুয়ের ডাগআউটের পাশ দিয়ে হুট করে এক দর্শক ঢুকে পড়ল মাঠে। জড়িয়ে ধরল মুশফিকুর রহিমকে। সিলেট টেস্টের প্রথম দিনেও ঢুকে পড়েছিল এক কিশোর দর্শক। খেলা চলার সময় বারবার এভাবে দর্শক ঢুকে পড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পরশু জিম্বাবুয়ে ইনিংসে ৪৮তম ওভার শেষের ঘটনা। হঠাৎ পূর্ব গ্যালারির বেষ্টনী টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে এক কিশোর। ওই কিশোরও জড়িয়ে ধরে মুশফিককে। মুশফিক প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে ছেলেটিকে আগলেই রেখেছেন। নিরাপত্তাকর্মীদের দিকে তাঁর উঁচিয়ে ধরা হাত মনে করিয়ে দেয় ২০১৬ সালে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে এক দর্শকের মাশরাফির দিকে ধেয়ে আসার ছবিটা। সেদিন মাশরাফিও এই ভক্তকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন।

সিলেট প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা আবু জায়েদ জানান, হঠাৎ কাউকে দৌড়ে আসতে দেখে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন মুশফিক। তিন দিনের মধ্যে দুবার এ ঘটনা ঘটল। কাণ্ডটা হয়তো কোনো পাগল সমর্থকের। কিন্তু আইসিসির কাছে তা নিরাপত্তার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে ভেন্যুর ওপর, আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপরেও। এ কারণেই প্রশ্ন উঠছে।

নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দর্শক কীভাবে মাঠে ঢুকে পড়ে? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) হোসেন ইমাম দায় ভারটা চাপালেন দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীদের ওপর। সংবাদমাধ্যমকে বললেন, 'এখানে বিসিবির নিরাপত্তাকর্মী আছে ২০ জন। তারা মূলত সার্বিক পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে আছে। গ্যালারির নিরাপত্তা বা মাঠে কেউ ঢুকে পড়ল কি না, এসব দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। দায়িত্ব পালনে তাঁদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।'

দর্শকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি। খেলা চলার সময়ই কেন খেলোয়াড়দের কাছে যেতে হবে? হয়তো, অশুভ কোনো ইচ্ছা নেই, এটা শুধুই নিষ্কলুষ আবেগের প্রকাশ। তবু সতর্ক হওয়া জরুরি। এই ছবিগুলো এখন দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। এমনিতেই বাংলাদেশে খেলতে আসার ব্যাপারে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দলগুলোর অনেক বায়নাক্কা। দেশের নিকট অতীতের জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় বিদেশি দলগুলোকে দোষও দেওয়া উচিত নয়। ফলে কোনো দর্শকের আবেগের প্রকাশের চড়া মূল্য হয়তো দিতেও হতে পারে বাংলাদেশকে।

আবার অনেক সময় দর্শকেরা নিখাদ আবেগের বশে এ কাজ করেন, এমনও না। কেউ আলোচিত হওয়ার জন্যও করেন। আর এখন তো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার নেশা মানুষকে কী-ই না করাচ্ছে। সতর্ক থাকা খুব জরুরি। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আহাজারি করে লাভ নেই।

নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ভীষণ স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট। পিপীলিকার ঢুকতে কষ্ট হয়, এমন নিরাপত্তায় ঢেকে ফেলা হয় স্টেডিয়াম, খেলোয়াড়দের হোটেল ও যাওয়া-আসার পথ। বাংলাদেশে ক্রিকেটকে নিরাপদ রাখতেই এত চেষ্টা। অথচ এই স্পর্শকাতর সময়ে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ছুঁয়ে দেখতে এক দর্শক মাঠে ঢুকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন বিসিবিকে।

সমর্থকদের আবেগ বাংলাদেশের ক্রিকেটের শক্তি। কিন্তু সেই আবেগে বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেললে খেলারই ক্ষতি। এভাবে মাঠে ঢুকে পড়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। খেলায় বিঘ্ন ঘটে, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ভবিষ্যতেও যদি সিলেট স্টেডিয়ামে দর্শক ঢুকে পড়ার দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হয়, দেখা গেল আইসিসি সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তখন?

হুট করে মাঠে ঢোকার আগে ভাবুন, আপনার আবেগ দেশের ভাবমূর্তির জন্য কোনো ক্ষতি বয়ে আনবে কি না!