বাংলাদেশের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি রাজপুত

সিলেট টেস্টে আপাতত হাসিটা জিম্বাবুয়ের জন্যই বরাদ্দ। ছবি: শামসুল হক
সিলেট টেস্টে আপাতত হাসিটা জিম্বাবুয়ের জন্যই বরাদ্দ। ছবি: শামসুল হক
>

চতুর্থ দিনে জিম্বাবুয়ের ভালো বোলিংয়ের ওপর জোর দিলেন কোচ লাল চাঁদ রাজপুত। তবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেননি তিনি।

সিলেট টেস্টে জয় পেতে বাংলাদেশকে খুব কি কঠিন কিছু করতে হবে?
সাধারণ গণিতের হিসাব বলে, না! অন্তত ১৮০ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। আগামীকাল আধ ঘণ্টা আগে খেলা শুরু হওয়ায় সেটা আরও বাড়ছে। ২৯৫ রান নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় হাতে আছে বাংলাদেশের। এ জন্যই হয়তো স্বাগতিক দলকে এখনো আশা দেখাচ্ছেন লাল চাঁদ রাজপুত। এ টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনার প্রশ্নে জিম্বাবুয়ে কোচ দার্শনিক উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, শেষ উইকেট নেওয়ার আগে কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। শেষ রান নেওয়ার আগেও নয়।

শেষ রান কিংবা উইকেটের কথা একটু দূরে থাক। দেশের মাটিতে এক বছর পর আরেকটি টেস্ট জিততে চাইলে বাংলাদেশকে এখনো ২৯৫ রান করতে হবে। ওদিকে জিম্বাবুয়েকেও জয় পেতে তুলে নিতে হবে ১০ উইকেট। দুটোই দূরের ব্যাপার। তবু সংবাদ সম্মেলনে রাজপুত এত বিনীতভাবে বাংলাদেশকে আশার কথা শোনাচ্ছেন কেন?

কারণ, ক্রিকেট সাধারণ গণিতের হিসাব মেনে চলে না। উপমহাদেশ বিশেষ করে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের যে উইকেট, তাতে চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে কোনো দল ২৯৫ রান করতে পারবে, এ সম্ভাবনা অবিশ্বাস জন্ম দেওয়ার আগে হাসির উদ্রেক করে। সিলেটের উইকেট কেমন, সেটা তো রাজপুত বলে দিয়েছেন, ‘মাঝে মাঝে কিছু বল বেশি লাফাচ্ছে। কিছু বল ঘুরছে বেশি। কিছু আবার সোজা নিচু হয়ে যাচ্ছে। এটা চতুর্থ দিনের উইকেট, তবু আমাদের ভালো বল করতে হবে। উইকেট সোজা বল করে ধৈর্য ধরতে হবে।’

মনে রাখবেন, রাজপুত যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেটা তৃতীয় দিনের। কাল চতুর্থ দিন এবং এ দিনকে ঘিরে এরই মাঝে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন রাজপুত, ‘রান তাড়া করা সব সময় কঠিন, বিশেষ করে চতুর্থ দিনে। আজ দিনের শেষ বলটাও উৎসাহব্যঞ্জক। আশা করি আগামীকাল সকালে আমরা ভালো বল করব। এবং আমাদের ক্যাচগুলো ধরতে হবে। প্রথমত ক্যাচই ম্যাচ জেতায়, আর কাল ব্যাটের আশপাশে অনেক ক্যাচার থাকবে। আশা করি ভালো বোলিং ও ফিল্ডিং সেশন পাব আমরা।’

আশা করতেই পারেন রাজপুত। যে টেস্টের আগে বাংলাদেশকে অবশ্যম্ভাবী ফেবারিট বলা হচ্ছিল, সেখানেই উল্টো ম্যাচ জেতার পথে জিম্বাবুয়ে। সেটাও ওয়ানডেতে ধবলধোলাই হওয়ার পর। টেস্টে যে রীতিমতো বদলে গেছে দলটি। এতেই বাংলাদেশকে ৩২১ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে। ম্যাচ জেতার স্বপ্নও তাই দেখতে শুরু করেছেন জিম্বাবুয়ের কোচ, ‘ওয়ানডে সিরিজের পর টেস্ট এখনো পর্যন্ত ভালো যাচ্ছে। আরও দুটি দিন আছে। আমাদের ভালো বোলিং ও ফিল্ডিং করতে হবে, কারণ সুযোগ সহজে আসে না। আর পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে, এখানে দলগুলো চতুর্থ ইনিংসে ৩০০–এর বেশি তাড়া করে জেতেনি।’

রাজপুতের তথ্যে অবশ্য ভুল আছে। বাংলাদেশের মাটিতে ৩০০ ছাড়ানো লক্ষ্য পার করেছে দুটি দল। স্পিনবান্ধব উইকেটে ৩০৭ ও ৩১৭ রানের লক্ষ্য ছুঁয়েছে তাসমান দুই প্রতিবেশী। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সে কীর্তির বয়স দশক পেরিয়েছে। এবং বাংলাদেশও ইদানীং স্পিন স্বর্গ বানিয়ে সেসব কীর্তিকে প্রায় অসম্ভবের গল্প বানিয়ে দিয়েছে। মজার ব্যাপার, জিম্বাবুয়ে এটা জেনেই এখানে এসেছে এবং তার জন্য প্রস্তুতিও সেরে নিয়েছে, ‘আমরা দেশে দুই মাসের ক্যাম্প করেই, পরিকল্পনা সাজিয়েছি এবং আমরা জানি বাংলাদেশে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। উইকেট কেমন হবে, সেটাও আমরা জানতাম। আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি এবং আগামীকাল সেটা প্রয়োগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। মিডিয়াম পেস ও স্পিনারদের সমন্বয়েই আক্রমণ সাজানো হবে। তবে স্পিনাররাই বেশি বল করবে। কারণ, আমরা দেখছি উইকেটে স্পিনাররা সাহায্য পাচ্ছে। আমাদের পেস ও স্পিনের মধ্যে সমন্বয় করে ভারসাম্য খুঁজে পেতে হবে। আমাদের আগামীকাল ভালো বোলিং করতে হবে। স্পিনারদের ওপর বেশি দাবি থাকবে এবং আশা করি স্পিনাররা সেটা পূরণ করবে।’