অর্ধেক উইকেট তুমি অর্ধেক কল্পনা!

উইকেট বোঝার চেষ্টায় মাসাকাদজা। ছবি: প্রথম আলো
উইকেট বোঝার চেষ্টায় মাসাকাদজা। ছবি: প্রথম আলো
মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ে। আজ সংবাদ সম্মেলনে এই মাঠের উইকেটকে ‘অদ্ভুত’ বলেছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা


হ্যামিল্টন মাসাকাদজা কি রবীন্দ্রনাথ পড়েন? যেহেতু বিশ্বকবি, তাই মাসাকাদজার হাত পর্যন্ত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ছেলেটির লেখা পৌঁছানোই স্বাভাবিক। মিরপুর টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের কথা রবিঠাকুরকে পড়ার ইঙ্গিতই দিলেন। উইকেট নিয়ে মাসাকাদজার ভাবনা অনেকটাই বিশ্বকবির সেই চরণখানির মতো, ‘অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।’

‘মানসী’ কবিতার এই শেষ চরণের আগের তিনটি পঙ্‌ক্তি মিরপুরের উইকেটের জন্য একেবারে খাপে খাপ। অন্তত মাসাকাদজার কথায় তা-ই মনে হবে। রবিঠাকুর লিখেছেন,‘লজ্জা দিয়ে, সজ্জা দিয়ে, দিয়ে আবরণ,/ তোমারে দুর্লভ করি করেছে গোপন।/ পড়েছে তোমার ’পরে প্রদীপ্ত বাসনা—/ অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।’ মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, মাসাকাদজা প্রসঙ্গে মিরপুরের উইকেটে হঠাৎ রবিঠাকুরকে নামিয়ে এ কেমন প্রহেলিকা?

আগে মিরপুরের উইকেট নিয়ে মাসাকাদজার বক্তব্য শুনুন, ‘মিরপুরের উইকেট সব সময়ই অদ্ভুত। কী আছে, তা কখনোই বুঝতে পারবেন না। আমার মনে হয়, উইকেট কেমন আচরণ করবে—তা বুঝতে গ্রাউন্ডসম্যানদেরও কষ্ট হয়। হ্যাঁ, দেখে তো বেশ শুকনোই মনে হয়। ওয়ানডে উইকেটে যেমন খেলেছি আরকি।’

যে গ্রাউন্ডসম্যানরা দিন-রাত খেটে উইকেট প্রস্তুত করছেন, তাঁদেরই নিজের সৃষ্টি বুঝতে কষ্ট হয়! মিরপুরের উইকেট কি তাহলে রবিঠাকুরের ‘মানসী’ কবিতার সেই কল্পিত নারী—কবি যাকে বলছেন, ‘শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী!/ পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি/ আপন অন্তর হতে।’

মিরপুরের উইকেটের বিধাতা কে, তা ক্রিকেটভক্ত মাত্রই জানেন। দেশের মাঠে খেলা, তাই দলের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভেবেই কিউরেটর উইকেট বানাবেন। কিন্তু তার পরও যে মিলছে না! এ কথা সত্য যে স্বয়ং বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাই মিরপুরের উইকেটের আচরণ সম্বন্ধে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেন না। অতীতে এমন নজির দেখা গেছে বহুবার। মিরপুরের উইকেটের চরিত্র কী হবে, এ নিয়ে মাহমদুউল্লাহর অসহায় স্বীকারোক্তি, ‘মিরপুরের উইকেট সব সময়ই একটু অপ্রত্যাশিত আচরণ করে।’

তাহলে মাসাকাদজার দুশ্চিন্তার কারণ কী? যাঁদের মাটি, তাঁরা-ই তো মাটির ভাষা পড়তে পারছেন না। সেখানে ভিনদেশি মাসাকাদজার হঠাৎ কেন এত দুশ্চিন্তা? দুই টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় জিম্বাবুয়ে ওপেনারের তো বেশ নির্ভারই থাকার কথা? না, তেমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। পরিসংখ্যান বলছে, জিম্বাবুয়ের বর্তমান দলটির কোনো খেলোয়াড়ই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এক টেস্টের বেশি ম্যাচ খেলেননি। আর মাসাকাদজার এই দলের মধ্যে শুধু সিকান্দার রাজাই শেরেবাংলায় ফিফটির দেখা পেয়েছেন।

অর্থাৎ, শেরেবাংলার বাইশ গজকে মাসাকাদজার দল সেভাবে পড়তে পারেনি। স্বাগতিক দলও উইকেটকে নিয়ে বিভ্রমটা ভীতিকর পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। ‘বনের বাঘে’র চেয়ে ‘মনের বাঘ’ই মিরপুরে তাণ্ডব চালাচ্ছে বেশি। ম্যাচের আগেই দুই দল উইকেট নিয়ে যা শোনাচ্ছেন এ তো আসলেই ‘অর্ধেক উইকেট অর্ধেক কল্পনা!’