মুশফিকের কাছে ঋণী ২০১৮!

ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার আনন্দে উদ্বেলিত মুশফিক। ছবি: শামসুল হক
ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার আনন্দে উদ্বেলিত মুশফিক। ছবি: শামসুল হক
২০১৮ সালের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি মুশফিকুর রহিমের। ২১৯ রানের ইনিংসটি দিয়ে ২০১৮ সালকে ৫৫ বছর আগের এক খরার পুনরাবৃত্তি থেকে বাঁচালেন মুশফিক


মুশফিক ২১৯ রানে পৌঁছাতেই ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ। হাতের ইশারায় মাঠের দুই সতীর্থকে ফিরতে বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। যেন, অনেক হয়েছে আর কত! তাই তো? একের পর এক রেকর্ড গড়া হয়েছে। এত সব রেকর্ডের হিসাব রাখাও তো কঠিন। এত সব রেকর্ডের মাঝ দিয়ে এ বছরটাও বেঁচে গেল!

সাকিব আল হাসান নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন। সাকিব নিজেও তো কত রেকর্ড নতুন করে লিখিয়েছেন। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য, সাকিব নিজেও তা জানেন। আর তাই মুশফিকের পেছনে পড়াটা সাকিব যে করতালি বা চিরাচরিত মৃদু হাসিতে উদ্‌যাপন করেছেন, তা আন্দাজ করাই যায়। সেই যে গত বছর ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব; বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এটি ছিল সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ছিল—বলার কারণটা তো প্রথম লাইনেই পরিষ্কার, দেশের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা এখন মুশফিকের।

৪২১ বলে মুশফিকের খেলা দুর্দান্ত ইনিংসটি যে কোনো দিক থেকেই বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ ইনিংস ঘোষণা না করলে সম্ভবত টেস্টে উইকেটরক্ষক হিসেবে এন্ডি ফ্লাওয়ারের খেলা সর্বোচ্চ ২৩২ রানের ইনিংসটিও টপকে যেতেন মুশফিক। তা না হলেও ২০১৮ সালে ডাবল সেঞ্চুরির খরা তো কাটালেন মুশফিক!

হ্যাঁ, মুশফিকের এই ডাবল টেস্টে এ বছরের প্রথম ডাবলও। সেটি না হলে কিন্তু টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিহীন বছর যাওয়ার শঙ্কা ছিল। হ্যাঁ, এ বছর আরও টেস্ট আছে সে কথা সত্য, কিন্তু ডাবল যে হতো সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে! মুশফিক এই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে মনে করিয়ে দিলেন এক পুরোনো ইতিহাস—যেখানে ফেরার শঙ্কা ছিল ২০১৮ সালের—আর সেই ইতিহাস ফেরার দরজাও তিনি আগেভাগে বন্ধ করেছেন নিজের ব্যাটেই।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ পর্যন্ত তিনটি বছর টেস্ট ক্রিকেট কোনো ডাবল সেঞ্চুরি দেখেনি—১৯৫২, ১৯৬১ ও ১৯৬৩। ১৯৬৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার কনরাড হান্টের করা ১৮২ রানের ইনিংস ছিল সে বছরের সর্বোচ্চ। ৫৫ বছর পর এ বছরও শঙ্কা জেগে উঠেছিল—আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরিহীন বছর হবে না তো! শঙ্কা বলাই যায়, কারণ এ বছর ১০ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও তো কোনো ডাবলের দেখা মেলেনি। ১১তম মাসে এসে সেই খরা কাটানোর সঙ্গে কুশল মেন্ডিসের মনও খারাপ করলেন মুশফিক।

২০১৮ সালে টেস্টে ডাবলের দেখা মিলতে পারত প্রথম মাসেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে মাত্র ৪ রানের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল বঞ্চিত হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিস। তারপর পেরিয়ে গেল ১০ মাস। কত ডাকাবুকো ব্যাটসম্যান সাদা পোশাকে মাঠে নামলেন, কিন্তু ডাবল আদায় করতে পারেননি। মুশফিক পারলেন—ধৈর্যের ‘অবতার’সুলভ ব্যাটিংয়ে—দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি তুলে বুঝিয়ে দিলেন, টেস্ট ক্রিকেটটা তিনি বড্ড বেশি ভালোবাসেন।