আর্জেন্টিনার 'ফুটবল-যুদ্ধে' জেতেনি কেউই

ম্যাচে দুইবার এগিয়ে গেলেও ম্যাচ শেষে এই হাসি থাকেনি বোকা জুনিয়র্সের খেলোয়াড়দের মুখে। ছবি: রয়টার্স
ম্যাচে দুইবার এগিয়ে গেলেও ম্যাচ শেষে এই হাসি থাকেনি বোকা জুনিয়র্সের খেলোয়াড়দের মুখে। ছবি: রয়টার্স
কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনালে এবার উঠেছে দুই আর্জেন্টাইন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বোকা জুনিয়র্স আর রিভার প্লেট। দক্ষিণ আমেরিকার ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ’ ফাইনালের প্রথম লেগ গত রাতে বোকা জুনিয়র্সের মাঠে ২-২ গোলে সমতায় শেষ হয়েছে


দর্শকসারিতে ৪৯ হাজার সমর্থকদের উদ্দাম উল্লাস-চিৎকার, মাঠ জুড়ে হলুদ-নীল কনফেত্তি-ব্যানার আর ফেস্টুনের ছড়াছড়ি—ম্যাচ শুরুর আগেই বোকা জুনিয়র্সের সমর্থকেরা বুঝিয়ে দিয়েছিল কেন এই ম্যাচটা ঘিরে গোটা আর্জেন্টিনা জুড়ে এত মাতামাতি হয়। কেন এই ম্যাচটাকে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও শ্বাসরুদ্ধকর ফুটবল ম্যাচ বলা হয়! তার ওপর কোপা লিবার্তোদোরেসের ৫৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, আকাশচুম্বী উত্তেজনা কাজ তো করবেই!

মাঠের বাইরে সমর্থকদের উন্মাদনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাঠের ভেতরেও দুই দলের খেলোয়াড়েরা প্রাণপণ লড়েছেন, গতিময় আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়েছেন। দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলেই শত্রুপক্ষের মাঠে গিয়ে একটা পয়েন্ট ছিনিয়ে এনেছে রিভার প্লেট, বোকা জুনিয়র্সকে জিততে দেয়নি নিজের মাঠে। বলা ভালো, জিততে দেননি রিভার প্লেটের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লুকাস প্রাটো। তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই দুইবার পিছিয়ে পড়েও সমতায় থেকে কোপা লিবার্তোদোরেসের প্রথম লেগ শেষ করেছে রিভার প্লেট। দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়নস লিগের এই আসরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কে জিতবে, সেটা তাই নির্ধারিত হবে দ্বিতীয় লেগে, আগামী ২৫ তারিখ ভোরে, রিভার প্লেটের স্টেডিয়াম লা মনুমেন্টালে।

বোকা জুনিয়র্স-রিভার প্লেট দ্বৈরথ এই দুই দলের খেলোয়াড়দের কাছে সব সময়েই অত্যন্ত আবেগের একটি ম্যাচ, সেটার প্রতিফলন দেখা যায় ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই। দুর্দান্ত গতিশীল ফুটবল খেলা শুরু করে দুই দল। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই দুটো কর্নার পেয়ে রিভারকে চেপে ধরে বোকা। কিছুক্ষণ পরেই রিভারপ্লেটের কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার রাফায়েল সান্তোস বোরের একটা হেড দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে সরিয়ে দেন বোকা জুনিয়র্সের গোলরক্ষক অগাস্টিন রসি। ম্যাচের ২২ মিনিটে বোকা জুনিয়র্সের আক্রমণভাগের সবচেয়ে বড় তারকা, আর্জেন্টিনার হয়ে গত বিশ্বকাপ খেলা উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ান পাভন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মাঠ ছাড়েন, তাঁর জায়গায় মাঠে নামেন আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের আরেক তারকা স্ট্রাইকার দারিও বেনেদেত্তো। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের এই ম্যাচে প্রথম সফলতা পান বোকার আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার র‍্যামন আবিলা। গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের গোলরক্ষক, রিভার প্লেটের হয়ে খেলা ফ্রাঙ্কো আরমানির একটা ভুলকে পুঁজি করে ৩৪ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোল করে তিনি বুঝিয়ে দেন কেন কার্লোস তেভেজের মতো পোড় খাওয়া স্ট্রাইকারকে বেঞ্চে বসিয়ে তাঁর ওপরে আস্থা রেখেছিলেন কোচ গিলের্মো ব্যারস শেলোত্তো।

চিরশত্রুদের বিরুদ্ধে এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে উন্মাতাল বোকা সমর্থকদের নিশ্চুপ করতে দেড় মিনিটও সময় নেননি রিভারপ্লেটের আরেক আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লুকাস প্রাটো। পুরো ম্যাচ দুর্দান্ত খেলা, সদ্যই আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া পিতি মার্টিনেজের বাড়িয়ে দেওয়া বল ধরে এক নিচু শটে গোলরক্ষক অগাস্টিন রসিকে পরাস্ত করেন তিনি। ৩৬ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচ আবারও সমতায়!

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ফ্রি-কিকে মাথা ঠেকিয়ে রিভার গোলরক্ষক আরমানিকে পরাস্ত করে দারিও বেনেদেত্তো জানিয়ে দিলেন, ক্রিস্টিয়ান পাভনকে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘মিস’ করার কিছু নেই! ২-১ গোলের অগ্রগামিতা বজায় রেখে বিরতিতে যায় বোকা জুনিয়র্স।

যে গতিতে প্রথমার্ধ শুরু হয়েছিল, ঠিক একই গতিতে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে দুই দল। দল এক গোলে পিছিয়ে আছে, এটা যেন ঠিক মানতে পারছিলেন না রিভারের হয়ে প্রথম গোল করা স্ট্রাইকার প্রাটো। ৬১ মিনিটে আবারও ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা এক বলে মাথা ঠেকিয়ে দলকে সমতায় ফেরান তিনি। যদিও পরে গোলটা লেখা হয়েছে বোকা জুনিয়র্সের ডিফেন্ডার কার্লোস ইজেকুইর্দোসের আত্মঘাতী হিসেবে, কিন্তু তা মানতে প্রাটোর বয়েই গেছে! বোকা জুনিয়র্সের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই স্ট্রাইকার কখনই বোকার হয়ে সেরকম সুযোগ পাননি, পরে অন্য ক্লাবে নিজের জাত চিনিয়ে ইউরোপ ঘুরে আবারও আর্জেন্টিনায় ফিরেছেন রিভার প্লেটের খেলোয়াড় হিসেবে। যে ক্লাব তাকে ক্যারিয়ারের শুরুতে সুযোগ দেয়নি, তাদের বিপক্ষে গোল করে নিশ্চয়ই আলাদা এক শান্তি পেয়েছেন প্রাটো!

ম্যাচের শেষ মুহূর্তে কার্লোস তেভেজ, হুয়ান কিন্তেরোর মতো তারকারা নেমেও বোকা কে জেতাতে পারেননি। সবার চোখ এখন তাই ২৫ তারিখে, রিভার প্লেটের স্টেডিয়াম মনুমেন্টালে সেদিনই যে নির্ধারিত হবে কোপা লিবার্তোদোরেসের ভাগ্য!