'ব্রেক্সিট'-ঝড়ে নুয়ে পড়বে প্রিমিয়ার লিগ?

আগুয়েরো-সিলভার মতো বিদেশি খেলোয়াড় আর না-ও দেখা যেতে পারে ইংলিশ লিগে। ছবি: রয়টার্স
আগুয়েরো-সিলভার মতো বিদেশি খেলোয়াড় আর না-ও দেখা যেতে পারে ইংলিশ লিগে। ছবি: রয়টার্স
>বেশ বড়সড় একটা ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে আসা, অর্থাৎ ‘ব্রেক্সিট’–এর জের ধরে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো থেকে অব্রিটিশ খেলোয়াড়েরা বের হয়ে চলে আসতে পারেন!

ভেবে দেখুন, ম্যানচেস্টার সিটিতে নেই সার্জিও আগুয়েরো, ডেভিড সিলভার মতো খেলোয়াড়েরা। চেলসির হয়ে খেলছেন না এডেন হ্যাজার্ড। লিভারপুলকে মাঠে নামতে হচ্ছে মোহাম্মদ সালাহ কিংবা অ্যালিসন বেকারকে ছাড়া। আর্সেনালে খেলতে পারছেন না মেসুত ওজিল বা পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াং। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নেই অ্যালেক্সিস সানচেজ বা ডেভিড ডি গেয়া। কেমন হবে বিষয়টা? স্বাভাবিকভাবেই প্রিমিয়ার লিগের জৌলুশ অর্ধেক কমে যাবে, তাই তো? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ঠিক এমন একটা শঙ্কাই পেয়ে বসেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে আসা, অর্থাৎ ‘ব্রেক্সিট’–এর জের ধরে এমন একটি সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে যে ইংলিশ ক্লাবগুলোয় অব্রিটিশ খেলোয়াড়দের সংখ্যা আরও কমানো হবে ব্রিটিশ বা ব্রিটেনের মাটিতে বেড়ে ওঠা খেলোয়াড়দের প্রতিভার সুষ্ঠু বিকাশের জন্য।

ইইউ থেকে ব্রিটেনের ‘এক্সিট’, অর্থাৎ ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে, নাকি থাকবে—এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৬ সালের জুন মাসের এক ঐতিহাসিক গণভোটে ইইউ থেকে স্থায়ীভাবে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট পড়ে ব্রিটেনে। এতে কিছু সমস্যাও হওয়ার কথা। ইইউয়ে থাকাকালে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেত, এখন থেকে আস্তে আস্তে ব্রিটেন সেসব সুবিধা ‘ব্রেক্সিট’ হলে আর পাবে না। এর মধ্যে আছে ইউরোপের মধ্যে নাগরিকদের চলাচলের স্বাধীনতা। ইইউয়ের অন্তর্ভুক্ত দেশের ফুটবলাররা ইইউয়ের এক দেশ থেকে অন্য দেশে কাজ করতে গেলে, অর্থাৎ ফুটবল খেলতে গেলে, কোনো ধরনের ওয়ার্ক পারমিট কিংবা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয় না। যেটি ইইউয়ের বাইরে যেসব দেশ রয়েছে, সেসব দেশের ক্রীড়াবিদদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। পারমিট না থাকলে আপনি ইইউভুক্ত কোনো দেশের ক্লাবের হয়ে খেলতে পারবেন না। যে কারণে প্রিমিয়ার লিগে অব্রিটিশ খেলোয়াড়দের সংখ্যা হ্রাস পাবে আশঙ্কাজনক হারে।

প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রতিটি ক্লাবে ১২ জনের বেশি অব্রিটিশ খেলোয়াড় থাকতে পারবে না, আগে যে সংখ্যাটা ছিল ১৭ জন। নতুন এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে প্রিমিয়ার লিগে খেলা ২০ ক্লাবের মধ্যে ১৩ ক্লাবই পড়ে যাবে বড়সড় ঝামেলায়। কারণ, তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে ১২ জনের চেয়ে বেশি খেলোয়াড়। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি আর টটেনহামের কথাই ধরুন, তাদের স্কোয়াডে অব্রিটিশ খেলোয়াড়দের সংখ্যা ১৭ করে। লিভারপুল ও চেলসির রয়েছে ১৬ জন করে। আর্সেনালের আছে ১৫ জন, আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আছে ১৪ জন। নতুন প্রস্তাবিত নিয়মে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলো এখন ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো খেলোয়াড়কেই কিনতে পারবে না। আগে ইইউভুক্ত দেশগুলো চাইলে নিজেদের ক্লাবের মধ্যে ১৫, ১৬ বা ১৭ বছর বয়সী খেলোয়াড় কেনাবেচা করতে পারত, যে নিয়মের সুবিধা নিয়ে আর্সেনাল বার্সেলোনা থেকে সেস ফ্যাব্রিগাস বা হেক্টর বেয়েরিনের মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে এসেছিল। এখন সেটাও হবে না আর।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আকর্ষণ হারানোর বড় শঙ্কায় আছে প্রিমিয়ার লিগ।