জার্মান ফুটবলকে ধ্বংস করেছেন গার্দিওলা?

গার্দিওলার জন্যই ভুগছে জার্মানি, এমনটাই মনে করেন সাবেক জার্মান ডিফেন্ডার
গার্দিওলার জন্যই ভুগছে জার্মানি, এমনটাই মনে করেন সাবেক জার্মান ডিফেন্ডার
>পুরো ২০১৮ সাল অপয়া কেটেছে জার্মানির। বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়া থেকে শুরু করে উয়েফা নেশনস লিগেও অবনমিত হয়েছে তারা। জার্মান ফুটবলের এই অধঃপতনের পেছনে পেপ গার্দিওলার হাত রয়েছে!

সাবেক পশ্চিম জার্মানির হয়ে ইউরো জেতা সাবেক ডিফেন্ডার হ্যান্স-পিটার ব্রিগলের বিশ্লেষণটা চমকে দেওয়ার মতোই। তিনি জার্মান ফুটবলের ধ্বংস দেখছেন সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ কোচ পেপ গার্দিওলায়। ব্রিস্টলের মতে, এই গার্দিওলা জার্মানদের যে খেলার ধরন শিখিয়ে গেছেন, সেটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা জার্মান ফুটবলেই।
এই গার্দিওলাই বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন সম্ভব প্রায় সব ট্রফিই। ন্যু ক্যাম্পে সফল সময় কাটিয়ে গার্দিওলা ২০১৩ সালে নাম লিখিয়েছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের কোচ হিসেবে। মিউনিখে তাঁর তিন বছরের সময়কালটাও যথেষ্ট সফলই। সেখানে তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগটা জিততে পারেননি। কিন্তু জিতেছেন প্রায় সব ট্রফিই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা তিনি করেছেন, বায়ার্নের খেলোয়াড়দের খেলার ধরনে তিনি একটু পরিবর্তন এনেছিলেন। বায়ার্নের কোচ থাকার সময়ে তথাকথিত ‘জার্মান’ দর্শনের বাইরে নিয়ে এসে নিজের প্রিয় বল দখলের ফুটবল খেলাতেন তিনি তাদের।

দ্রুতগতির প্রতি–আক্রমণনির্ভর খেলায় অভ্যস্ত বায়ার্ন এই গার্দিওলার অধীনেই প্রথম শেখে কীভাবে ম্যাচের বেশির ভাগ সময়ে বল নিজেদের দখলে রেখে আস্তে আস্তে আক্রমণে উঠে গোল করতে হয়, কীভাবে ম্যাচের পুরোটা সময় ‘পাসিং ফুটবল’ খেলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখে ম্যাচ জেতা যায়। এই দর্শনে খেলেই বায়ার্ন গার্দিওলার অধীনে টানা তিনবার লিগ জেতার পাশাপাশি জিতেছিল উয়েফা সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ ও জার্মান কাপ। গার্দিওলা যখন বায়ার্নের কোচ ছিলেন, সে সময়ে অর্থাৎ ২০১৪ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানিও।

সেবার পারলেও ২০১৮ বিশ্বকাপে জার্মানি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়, বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়া জার্মানি উয়েফা নেশনস লিগেও ব্যর্থতার ধারা অব্যাহত রেখেছে। জার্মানির বর্তমান দলে খেলা জোশুয়া কিমিখ, লিরয় সানে, ম্যানুয়েল নয়্যার, জেরোম বোয়াতেং, ম্যাটস হামেলস, টমাস মুলার, ইলকায় গুন্দোগানের প্রত্যেকেই ক্যারিয়ারের কোনো না কোনো সময়ে গার্দিওলার অধীনে খেলেছেন। কেউ বায়ার্নের হয়ে, আবার কেউ গার্দিওলার বর্তমান দল ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে।

তাই জার্মান ফুটবলের এই হতাশাজনক অবস্থার জন্য দায়ী গার্দিওলা, এমনটাই মনে করছেন ব্রিগল, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে গার্দিওলার জন্য হচ্ছে। সে-ই প্রথমে এসে শিখিয়ে গেছে যে ম্যাচ জিততে হলে ম্যাচের ৭৫ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখে আধিপত্য বিস্তার করে তারপর জিততে হবে। কিন্তু সব সময় এভাবে খেললে হয় না। ফুটবলে বল পায়ে নিয়ে বসে থাকার চেয়েও ম্যাচের ফল বের করে আনতে পারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জয়লাভ করার জন্য বল পায়ে নিয়ে বসে থাকাটাই যথেষ্ট নয়। এটা এই বিশ্বকাপ জিতে ফ্রান্সই আমাদের দেখিয়েছে।


১৯৭৮ সালের পর থেকে জার্মানি দলের এমন খারাপ অবস্থা আর কখনো আসেনি। গত রাতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথমে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও পরে ২-২ গোলে ড্র করা জার্মানি এই নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ রইল জয়হীন।