ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে মনে করেন না মাশরাফি

সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথাই বলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথাই বলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: প্রথম আলো
>ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটাই হতে পারে ঘরের মাঠে মাশরাফি বিন মুর্তজার সম্ভাব্য শেষ সিরিজ। আর সামনে তো কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট, বাংলাদেশের সোনালি প্রজন্মের ক্রিকেটারদের সেরা সময়ের শেষ বিশ্বকাপ এটাই। এর মধ্যে ওয়ানডে অধিনায়কের রাজনীতিতে নেমে পড়া। ক্রিকেট কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বাংলাদেশে এসেছে গত মাসে। টেস্ট সিরিজ শেষ, সামনে ওয়ানডে এবং পরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। কিন্তু ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ নিয়ে আলোচনা সেভাবে হচ্ছে কোথায়! জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার রাজনীতিতে আসার আলোচনায় এখন চারপাশ সয়লাব। অনেকেই ভাবছেন, ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানার আগেই বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক রাজনীতিতে প্রবেশ করায় সামগ্রিকভাবে ক্রিকেটেরই ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে মাশরাফির বক্তব্য পাওয়া গেল আজ।

ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু জুনে। তার আগে ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ দল। অর্থাৎ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজই ঘরের মাঠে মাশরাফির শেষ সিরিজ। তিন ম্যাচ ওয়ানডের শেষটি হতে পারে ঘরের মাঠে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এত চোট আর ঝড় উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যিনি ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে, ঘরের মাঠে তাঁর সম্ভাব্য শেষ সিরিজ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠার কথা। কিন্তু মাশরাফির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত সেই আলোচনা তথা ক্রিকেটের আলোচনাকে কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

স্বয়ং মাশরাফির মনোযোগও কি ক্রিকেটে আছে? ওয়ানডে অধিনায়ক কিন্তু আশ্বস্ত করলেন, মনোযোগটা এখনো ক্রিকেট থেকে সরেনি, ‘আমার দিক থেকে একদমই না। আমার মানসিক দিক দিয়ে একদমই না। কারণ আমি ওইখানে (নির্বাচনী এলাকা) এখনো একদমই জড়িত না। পুরোপুরি অনুশীলনে মন আছে। আমি ওখানে মনোযোগ দেব ১৪ ডিসেম্বরের পর (সিরিজ শেষে)। যতটুকু করার ১৪ তারিখের পরে গিয়েই করব। তত দিন পর্যন্ত আমার পুরো মনোযোগ থাকবে খেলায়।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হবে ১৪ ডিসেম্বর।

ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর সামনের বিশ্বকাপেই সেরা সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ওয়ানডে দলটা এখন মোটামুটি দাঁড়ানো আর তার পেছনে রয়েছে পাঁচটি স্তম্ভ—মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। পরের বিশ্বকাপে এঁদের অনেকেই ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে চলে যাবেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সোনালি প্রজন্মের এটাই সেরা সময়ের শেষ বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ওয়ানডে অধিনায়ক যদি ব্যস্ত হয়ে পড়েন রাজনীতিতে, সেটি দলের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য ক্ষতিকর বলেও একটা আলোচনা শুরু হয়েছে।

মাশরাফি অবশ্য মনে করেন, নির্বাচনটা মাঝপথে পড়ে গেছে বলেই এমনটা মনে হচ্ছে, ‘আমি বিশ্বকাপ ধরে পরিকল্পনা করছিলাম। আর সাত থেকে আট মাস বাকি আছে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরের সাড়ে চার বছরে আমি জানি না আমার অবস্থা কী হবে। একটা সুযোগ এসেছে মানুষের জন্য কাজ করার। যেটা আমি সব সময়ই উপভোগ করি। আমি একটা ফাউন্ডেশনও করেছিলাম। আমার জন্য একটা সুযোগ এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে সুযোগটা দিয়েছেন, আমার এলাকার জন্য কিছু কাজ করার। আমার মনে হয়েছে এটা আমার জন্য বড় সুযোগ তাদের জন্য কাজ করার। সাত মাস বা আট মাস পর তো আর জাতীয় নির্বাচন হবে না। তাই মনে হয়েছে এই সুযোগটা নেওয়া উচিত।’

নির্বাচনে জিতে গেলে ২০১৯ বিশ্বকাপে সংসদ সদস্যপদে থাকা অবস্থাতেই খেলতে হবে। মাশরাফি নিজে অবশ্য এসব নিয়ে সেভাবে ভাবছেন না। ক্রিকেটে থাকা না-থাকার বিষয়টি তিনি বুঝিয়ে বললেন এভাবে, ‘প্রথমত, আমার কাছে মানসিকভাবে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছিল শেষ। (গত) চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগেও মনে হচ্ছিল এই টুর্নামেন্টের পর আর পারব কি না। তারপরও আমার ফিটনেস আর পারফরম্যান্স মোটামুটি চলছিল বলে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত লক্ষ্য স্থির করেছি। আমি আগেই মানসিকভাবে ঠিক করে রেখেছি আপাতত বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভাবব। তারপর হয়তো আমার কাছে সুযোগ আছে সেটা আরেকবার ভেবে দেখা। যদি আমি সে অবস্থায় না থাকি তাহলে অবশ্যই আমাকে বিদায় নিতে হবে।’

ক্রিকেটে থাকা না–থাকা নিয়ে মাশরাফি তাঁর ক্যারিয়ারের একটি উদাহরণও টানলেন, ‘২০১১ সালের পর থেকে যদি আপনি তাকান, আপনারা যাঁরা এখানে (সংবাদকর্মী) এসেছেন, এদের ৫০ ভাগও হয়তো ভাবেননি আমি এরপরও খেলে যেতে পারব। আল্লাহর রহমতে আমি আরও ৭ বছর চালিয়ে যেতে পেরেছি। আমার পরিবারেরও সবাই ভেবেছিল আমি পারব কি না।’

কিন্তু ঘরের মাঠে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন ১৪ ডিসেম্বর, সে ম্যাচে কি ঠিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা পাবেন? ১৭ বছরের ক্যারিয়ার শেষে ঘরে মাঠে তো একটা রাজসিক বিদায় প্রাপ্য ছিল মাশরাফির। নির্বাচন আর রাজনীতির ডামাডোলে তার সুযোগ কি থাকবে? মাশরাফি নিজের বিদায়টিকেও বড় করে দেখতে চাইলেন না। বললেন, এই সিরিজকে তিনি বিশেষভাবে নিচ্ছেন না, ‘আমার কাছে এই নির্বাচনে আসার আগে যা ছিল, প্রত্যেকটা সিরিজ যেমন ছিল, এই সিরিজটাও একই রকম। আমার শেষ আর শুরুতে কিছু যায়–আসবে না। এভাবে আমি ভাবিনি কোনো দিন, ভাবিও না। অবশ্যই সিরিজটা জিততে চাই আমরা। আর দশটা সিরিজ যেভাবে দেখতে চেয়েছি, এটাও সেভাবেই দেখছি।’