স্পিনের ভয় দেখাতেই শুরুতে সাকিব-মিরাজ!

আজ দারুণ দিন গেছে পেসারদের। ৯ উইকেটের সাতটিই পেসারদের। ছবি: প্রথম আলো
আজ দারুণ দিন গেছে পেসারদের। ৯ উইকেটের সাতটিই পেসারদের। ছবি: প্রথম আলো
তিন পেসার দলে নিয়েও কেন শুরুতে দুদিক থেকে স্পিন-আক্রমণ? মাশরাফি জানালেন এর পেছনের গেম প্ল্যান


যাক, এবার একাদশটা দেখতে চোখে বিঁধছে না। মিডিয়া রুম থেকে প্রেসবক্সে একাদশের ঝকঝকে ফটোকপির কাগজটায় চোখ বোলাতে বোলাতেই আবার চোখ কচলাতে হলো। কোনো পেসার না নিয়ে খেলেই বাংলাদেশ বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল গত টেস্টে। এবার তিন পেসার দলে রেখেও শুরুতেই দুই দিক থেকে আক্রমণে স্পিনার! তাতে কাজও হয়েছে। হারের বৃত্ত ভাঙতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল একটা ভালো শুরু। কিন্তু সেটাই তারা পায়নি। বরং শুরু থেকে ব্যাটিংয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে পুরো ৫০ ওভার খেলেও ২০০ করা হলো না টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ফেরিওয়ালাদের।

ম্যাচ শেষে মাশরাফি বিন মুর্তজা জানালেন, খুব পরিকল্পিতভাবেই শুরুতে দুই দিক দিয়ে স্পিন করিয়েছেন, ‘স্পিনাররা দুই পাশ থেকে শুরুর কথা বললেন...প্রস্তুতি ম্যাচ যখন খেলছিলাম, বুঝছিলাম ওরা পেস বলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। টেস্ট ম্যাচে যেহেতু দুই পাশ থেকে স্পিন শুরু হয়েছে, আমরা চাচ্ছিলাম ওরা ওই আমেজটার মধ্যেই থাকুক। এ কারণে দুই স্পিনার দিয়ে শুরু করা। ওরা যেহেতু স্পিনে ধুঁকছে, সেই সময়টায় ওদের আরও বেশি ধরে রাখা। ভাগ্য ভালো সাকিব শুরুর উইকেটটা এনে দিয়েছে। তাতে সুবিধা হয়েছে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে ৯ উইকেট পড়েছে, সাতটিই পেসারদের। তবু মাশরাফি মনে করেন, মিরাজ-সাকিব বড় ভূমিকা রেখেছেন আজকের জয়ে, ‘আসলে ওয়ানডেতে আমাদের পেসাররা সব সময় ভালো করে আসছে। টেস্টে হয়তোবা অন্য ব্যাপার, বিশেষ করে এই ধরনের উইকেটে। মিরাজ অসাধারণ বোলিং করেছে, সে খুব ভালো ফর্মেও আছে। আমি সাকিবের কথাও বলব। সেও চাপ ধরে রেখেছিল। প্রথম উইকেটটা সেই এনে দেয়। ওই সময়ে উইকেটটা পাওয়াতে খুব সুবিধা হয়েছিল আমাদের।’

৪০ ওভার পর্যন্ত মাত্র ৮টি চার মেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝখানে তো এমনও দীর্ঘ সময় গেছে, কোনো বাউন্ডারি নেই। পঞ্চম আর ষষ্ঠ বাউন্ডারির মাঝখানে ছিল ১৩ ওভার ৫ বলের বিরতি! অষ্টম চারের পর উইন্ডিজ পেয়েছিল একটি ছক্কা, ইনিংসের প্রথম ছক্কা। কিন্তু এর মাঝখানে ৫৬ বলের বিরতি! ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাত খুলে মারতে পারে বলে যে ভয়টা ছিল, তা সত্যি হয়নি। এর কৃতিত্বও বোলারদের দিলেন মাশরাফি, ‘ওরা মারার চেষ্টা করেনি তা নয়, চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যখনই চেষ্টা করেছে তখনই আউট হয়েছে। যেমন স্যামুয়েলস বা ব্রাভো যখনই মারতে শুরু করেছিল, তখনই আউট হয়ে যায়। কেবল কিমো পল চালিয়ে যেতে পেরেছে কিছুটা। এমনকি হেটমায়ার এসে প্রত্যেক বলই মেরে খেলতে চাইছিল। বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হয়। মিরপুরের উইকেটও এমন, ক্রমাগত শট খেলা কঠিন।’

বোলিংয়ে শুধু একটা অতৃপ্তি। এমন দিনেও রুবেল হোসেন রানটা বেশি দিয়ে ফেললেন। তবে একা রুবেলকে কাঠগড়ায় তুলতে নারাজ মাশরাফি। দলের আক্রমণের বৈচিত্র্যের জন্যই রুবেলকে বেশি করে দরকার, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমাদের সবাই একই ধরনের বোলার। মুস্তাফিজ, আমি একই ধরনের বোলার, কাটার কিংবা একটা লেংথে বল করা। রুবেলের ব্যাপারটা আলাদা। ওর ভ্যারিয়েশন আছে, পেস আছে। ওরা যদি শট খেলা শুরু করে তখন দেখা যায় যে বাউন্সার বা অনেক কিছুর চেষ্টা করতে হতে পারে। সে সব চিন্তা করে ওকে রাখা। রুবেলের সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ও শেষ ম্যাচ যেটা খেলেছে, এশিয়া কাপের ফাইনাল, সেখানে ওর বোলিংয়ের জন্যই আমাদের জেতার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। রুবেলকে নিয়ে দ্বিধা তৈরির কোনো প্রয়োজন আপাতত নাই।’
এই না হলে নেতা। যিনি দলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে এসেও কৃতিত্ব শুধু বাকিদের বিলিয়েই দেন না; যে খেলোয়াড়টি প্রত্যাশামতো খেলতে পারেনি, তাকেও আগলে রাখতে জানেন।