ডেথেই মরণ - ব্যাটিংয়ে আর বোলিংয়েও

বোলিং কি ব্যাটিং, শেষের ১০ ওভার গত ম্যাচে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ছবি: প্রথম আলো
বোলিং কি ব্যাটিং, শেষের ১০ ওভার গত ম্যাচে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ছবি: প্রথম আলো

৪০ ওভার শেষে একদলের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৯১। অন্য দলের ৬ উইকেটে ১৮৯। প্রথম দলটার নাম বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দলটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটা গত ম্যাচের ছবি। এই অবস্থা থেকেও বাংলাদেশ হেরেছে। একদল শেষ ১০ ওভারের সুবিধা নিতে পারেনি। না ব্যাটিংয়ে, না বোলিংয়ে। অন্য দল...সে আর না বলে দিলেও চলছে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আসতে হলো শেষ ম্যাচে সিরিজ জেতার প্রত্যয়ের কথা জানাতে, এতে বড় ভূমিকা মিরপুরে গত ম্যাচের ওই শেষ দশ-দশ, ২০ ওভার। বাংলাদেশ ঠিকমতো ডেথ ওভার কাজে লাগালে সিরিজ তো ওখানেই জেতা হয়ে যায়।

গত ম্যাচে বাংলাদেশ দারুণ অবস্থায় থেকেও শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৪ রান তুলেছে। অথচ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ডেথ ওভারে যখন পা রাখে, উইকেটে দারুণভাবে থিতু হয়েছিলেন সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ। দুজনই ২৯ রানে অপরাজিত। সাকিব ৪৭তম ওভার পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে গেলেও অন্যপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য আর লিটন দাসের ব্যর্থতা বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে।

আবার বোলিংয়েও হতাশার ছবি। ৩৯ ওভারেই ১৮৬ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ উইকেট ফেলে দিলেও বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে ডেথ ওভারের বোলিং। শেষ ১০ ওভারে সাকিব ২ ওভারে ৪ রান দিলেও রুবেলের ২ ওভারে ২০ আর মোস্তাফিজের তিন ওভারে ২৫ রানেই সর্বনাশ হয়ে গেছে। যদিও শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ ব্যবহার করেছে ৫ বোলার। এই বৈচিত্র্যও কোনো কাজে আসেনি।

শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের বোলিং:

মাশরাফি: ১ ওভারে ৫ রান
রুবেল: ২ ওভারে ২০ রান
সাকিব: ২ ওভারে ৪ রান
মিরাজ: ১ ওভারে ৬ রান
মোস্তাফিজ: ৩ ওভারে ২৫ রান
মাহমুদউল্লাহ ৪ বলে ৬ রান

শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটিং: ৭ উইকেট হাতে নিয়েও ৬০ বলে উঠেছে ৬৪ রান। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ২৬ রান!

মাশরাফি প্রথমে বোলিংয়ের ব্যাখ্যাটাই দিলেন, ‘আসলে পেসের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। পেস আর ভ্যারিয়েশন। একটা পরিকল্পনা থাকে, ৪০ থেকে ৫০ ওভার পর্যন্ত আমরা চারজন বোলার ব্যবহার করে আসছি। যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে দেখেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমি যেমন ৪৫-৪৬ ওভার পর্যন্ত বোলিং করে এসেছি। সাকিব এর পরে করেছে, ৪৯ ওভারটাও। পরিস্থিতির ওপরে আসলে অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে সবচেয়ে ভালো হলো অবশ্যই এক দিক দিয়ে মোস্তাফিজকে ব্যবহার করা। রুবেলও শেষের দিকে আমাদের সেরা বোলার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর বলেন, এশিয়া কাপ বলেন; রুবেল আমাদের সেরা বোলার ছিল। আসলে শেষের ওভারগুলোতে সেরা বোলারদের রাখা জরুরি, যার গতি ও বৈচিত্র্য আছে। এদিক থেকে চিন্তা করলে সব সময় ওদের ব্যবহার করার চিন্তাটাই আসে। তবে আপনি যদি সব মিলিয়ে ডেথ ওভারটাকে ৪০ ওভার থেকে ধরেন, তাহলে আমরা কিন্তু চারজন, কখনো কখনো পাঁচজন বোলারও ব্যবহার করে থাকি।’

মাশরাফির ব্যাখ্যায় পরিষ্কার, বোলিংয়ে তিনি কৌশল বদলানোর প্রয়োজন দেখছেন না। আগামী কালের ম্যাচেও হয়তো একইভাবে বাংলাদেশকে বোলিংয়ে শেষ ১০ ওভার সামলাতে দেখা যাবে। তবে ব্যাটিংয়ে কৌশলগত কিছু পরিবর্তন যে আসবে, সেই ইঙ্গিত আছে মাশরাফির কথায়, ‘যদি গত ম্যাচের কথা চিন্তা করেন, আমরা ভাবিনি মিরাজ পর্যন্ত ব্যাটিং যাবে, বা আমাদের (টেল এন্ডার) যেতে হবে। যেহেতু দুজন সেট ব্যাটসম্যান আছে, বাইরে সৌম্য আর লিটনও অপেক্ষা করছে। কিন্তু পরে পরিস্থিতিটা তৈরি হয়ে যায়। ৪৬-৪৭ ওভারে আমাদের নামতে হয়েছে। ওইখানে আসলে একটু হিসাব করে দেখার ব্যাপার আছে, কীভাবে আমরা ব্যাটিংয়ে শেষের ওভারগুলো ব্যবহার করতে পারি। সাধারণত যেটা হয়, ওই সময়ে রিয়াদ থাকলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়; সাকিব তো দুর্দান্ত। গত ম্যাচে সাকিব সেভাবেই খেলছিল। সৌম্য আর লিটন আউট হয়ে যাওয়াতে আসলে চাপটা তৈরি হয়ে যায়। আর ওরাও যেভাবে বোলিং করছিল, আমরা সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিনি। ওদের পেস আর ভ্যারিয়েশন ছিল। আমাদের দক্ষতাও হয়তো সেই পর্যায়ের না ওদের এই বোলিং সামলানোর মতো। সবকিছু মিলিয়ে কাজটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। হয়তোবা সাকিব-রিয়াদ-সৌম্য এরা ব্যাটিং করছে কাজটা সহজ হয়ে যেত।’