খোঁচার বাউন্সারে মাশরাফির ছক্কা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাড়তি গতি পাত্তা পাচ্ছে না মাশরাফির কাছে। ছবি: প্রথম আলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাড়তি গতি পাত্তা পাচ্ছে না মাশরাফির কাছে। ছবি: প্রথম আলো
>বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পেসের সামনে জবুথবু, এমনই ইঙ্গিত করলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক পাওয়েল। কথাটা একদমই পছন্দ হয়নি মাশরাফির। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছেন, সেই দিন আর নেই...

‘কী বললেন, ওদের অধিনায়ক কী বলেছে?’ মাশরাফি কথাটা দ্বিতীয়বার শুনে নিশ্চিত হতে চাইলেন। ভালো করে বুঝতে সামনের দিকে ঝুঁকেও এলেন আসন থেকে। এরপর পেছন ঝুঁকে এমন একটা অভিব্যক্তি করলেন, স্পষ্টতই বোঝা গেল, রোভম্যান পাওয়েলের কথাটা তাঁর পছন্দ হয়নি। তবু তো সাংবাদিকেরা একটু রয়েসয়ে কথাটা মাশরাফির কানে তুলেছেন। পাওয়েলের কথাটাই সূক্ষ্ম নয়, ভোঁতা একটা খোঁচাই ছিল।

আগে সংবাদ সম্মেলনে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক বলেছেন, ‘এটা তো পরিষ্কার, বাংলাদেশ ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে স্বস্তি পায় না। আমরা ওদের এই দুর্বলতা কাজে লাগাতে চাই। আশা করি, আগামীকাল তা আমরা করে দেখাতে পারব।’

পাওয়েলের ইঙ্গিতটা পরিষ্কার। গত ম্যাচে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে দুই শর মতো রান আর হাতে ৭ উইকেট রেখেও শেষ ১০ ওভারে সুবিধাই করতে পারেনি। শেষ ৫ ওভারে কিনা তুলেছে মোটে ২৬ রান! যে সময়ে ঝড় তোলার কথা, সে সময় ক্যারিবীয় পেসের ঝড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপই দিশেহারা! এরই খেসারত দিয়ে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ।

মাশরাফিকে যখন বলা হলো পাওয়েলের কথাটা, বাংলাদেশ অধিনায়ক পাল্টা জবাব দিলেন, ‘ওদের পেস বোলিং আমরা দুই ম্যাচেই সামাল দিয়েছি। এটা ঠিক শুরুতে একটা-দুইটা উইকেট পড়েছে। শেষ ম্যাচেও যদি দেখেন, মুশফিক ও তামিমকে কিন্তু ওরা পেস বোলিং দিয়ে খুব একটা ভোগাতে পারেনি। রিয়াদকেও না। ইনিংসের শুরুতে হয়তো কিছুটা হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। সাকিবও খুব আরামসেই খেলেছে। শটও খেলছে। আমার মনে হয় না, খুব একটা কিছু করতে পেরেছে ওদের পেসাররা।’

মাশরাফি নিজের কথার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরলেন, ‘আগে একটা সময় ছিল যে এই ব্যাপারগুলো অনেক প্রভাব ফেলত, এখন আর ওই জায়গায় দল নেই। তবে খুব বেশি গতির বোলিংয়ের কথা যদি বলেন, তাতে তো পৃথিবীর সব ব্যাটসম্যানেরই সমস্যা হয়। কিন্তু ১৪০, ১৪২-১৪৩ গতির বল আমাদের অনেক ব্যাটসম্যান সহজেই সামলাতে পারে। তামিম চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউডদের বিপক্ষে সহজেই ব্যাটিং করেছে। আমরা ওই পর্যায়টা পার করে এসেছি।’

গত ম্যাচের শেষ ১০ ওভার দিয়ে বিবেচনা করা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন মাশরাফি, ‘তামিম যদি সে সময় আউট না হতো, চিত্রটা ভিন্ন হতো। সাকিব যদি শেষ তিন ওভারের দুই ওভার ব্যাটিং করতে পারত, ও আরও ২০টা রান তুলত। যদি আমরা ঠিকমতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, কোনো সমস্যা হবে না। পেসের জন্য সমস্যা হয়েছে, এমন না। তবে বাড়তি গতির পেস অবশ্যই সমস্যা। এ ক্ষেত্রে শুধু আমাদের দলের দোষ দিয়ে লাভ হবে না। পৃথিবীর সব ব্যাটসম্যানের জন্যই তা অস্বস্তিকর। কীভাবে সেই বোলারকে সামাল দিচ্ছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’

বাড়তি গতির প্রশ্নটা আসছে ওশান টমাসের কারণে। ক্যারিবীয় এই ফাস্ট বোলার মিরপুরের মরা উইকেটেও ১৫০ কিমি গতিতে বল করেছেন। মাশরাফি অবশ্য তাঁর বোলিংয়ের স্পিডগানের দিকে নয়, নজর দিতে বললেন ইকোনমি রেটের দিকে, ‘দুই দিনই ও ওভারে ছয়ের মতো করে রান দিয়েছে। রান নিয়ে কিন্তু কোনো প্রশ্ন নেই। ওরা যদি বলে ও-ই ওদের সেরা বোলার, আমরাও তো ওভারে ৬ রান করে ছয় করে তুলে নিয়ে খুব স্বস্তিতেই আছি ওর বিপক্ষে। মূল ব্যাপার হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ও দু-একটা উইকেট নিয়ে নিচ্ছে। এটা কমিয়ে আনাটা গুরুত্বপূর্ণ। ও তেমন সময়ে উইকেট নেওয়ার পরও কিন্তু আমরা ম্যাচে ছিলাম।’

গত ম্যাচে বাংলাদেশ আরও ২০ রান তুলতেই পারব বলে মনে করেন মাশরাফি। এখানে প্রতিপক্ষ বোলারদের কৃতিত্বের চেয়ে নিজেদের দায়ই বেশি করে দেখছেন অধিনায়ক, ‘রিয়াদ, সাকিব ৪১তম ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করেছে, যখন আমাদের মাত্র তিন উইকেট পড়েছিল। এরপর সৌম্য, লিটন ব্যাটিং করেছে। ২ জন উইকেটে থিতু, ড্রেসিংরুমেও দুজন বসে আছে, এরপরও শেষ ১০ ওভারে ৬৪ রান আপনি চিন্তাই করতে পারেন না। তার পরও তা-ই হয়েছে। তবে এটা পেসের জন্য হয়নি। আমার মনে হয় সেটা হয়েছে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারায়। আর যে ১৪৭ গতিতে বল করেছে, তার ওভার থেকেই কিন্তু সাকিব ১৬ রান নিয়েছে। ওদের ইতিবাচকতার দিক থেকে ঠিক আছে, তবে আমাদেরও খুব একটা সমস্যা হয়নি। যেটা হয়েছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা উইকেট হারিয়েছি।’