রাজনীতিতে হারিয়ে যাননি ক্রিকেটার মাশরাফি

রাজনীতির দমকা হাওয়ায় হারিয়ে যায়নি ক্রিকেটার মাশরাফির সত্ত্বা । ছবি: প্রথম আলো
রাজনীতির দমকা হাওয়ায় হারিয়ে যায়নি ক্রিকেটার মাশরাফির সত্ত্বা । ছবি: প্রথম আলো
>ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগেই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। যদি এই সিরিজে তিনি খারাপ করতেন, দল খারাপ করত, নিশ্চিত তাঁকে কথা শুনতে হতো। কঠিন এই ধাপটা যখন সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে গেছেন মাশরাফি, রাজনীতিতে হারিয়ে যাননি ক্রিকেটার মাশরাফি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা শুনে বুঝি একটু বিরক্তই হলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন, আপাতত খেলা শেষ। এখন যে পর্বটি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, সেটি নিয়ে কী ভাবছেন?

সরাসরি বললে, রাজনীতির মাঠে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে হচ্ছে দু-এক দিনের মধ্যে। এত দিন ক্রিকেটের ময়দানে খেলেছেন। এবার তাঁকে খেলতে হবে রাজনীতির ময়দানে। এই ময়দানে সফল হওয়া নিয়ে কী ভাবছেন মাশরাফি?

মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে গ্যালারি থেকে ভেসে আসা ‘নৌকা-নৌকা’ স্লোগান নিয়ে যখন প্রশ্ন করা হয় তাঁকে, তখনো মাশরাফি স্বচ্ছন্দবোধ করেননি উত্তর দিতে। তার মানে খেলার মাঠে রাজনৈতিক প্রশ্ন হোক, সেটি অধিনায়ক চান না। চান না বলেই তো সিরিজের আগে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, যেটির পুরোটা জুড়ে ছিল রাজনীতি-বিষয়ক প্রশ্ন। কিন্তু চাইলে তো আর রাজনৈতিক প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারেন না। অবশ্য অনুরোধ করেছিলেন সিরিজের মধ্যে যেন এ নিয়ে প্রশ্ন না হয়। সংবাদমাধ্যম তাঁর কথা রেখেছে। পুরো সিরিজে বলতে গেলে রাজনৈতিক প্রশ্ন করাই হয়নি তাঁকে। যেহেতু সিরিজ শেষ, এখন নিশ্চয়ই সেটি করা যায়।

তবে স্টেডিয়ামে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে একটু অনীহা মাশরাফির, ‘ভাই এই প্রশ্নের জন্য আগে একটা সংবাদ সম্মেলনই করেছি। আশা করেছিলাম খেলার মধ্যে যেন এটা নিয়ে প্রশ্ন না হয়। হ্যাঁ, এর পর আমার যে কাজ সেটা আমি করব। আপনাদের ধন্যবাদ, এই ৮-১০ দিনে এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি। এটা নিয়ে আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।’

সংবাদমাধ্যমকে রাজনীতি-বিষয়ক প্রশ্ন না করার অনুরোধ একটাই কারণে, সিরিজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে চান তিনি। সেই মনোযোগটা ভালোভাবে দিতে পেরে মাশরাফি চোখেমুখে তৃপ্তি, ‘প্রত্যেক ক্রিকেটারের আলাদা পরিকল্পনা থাকে। আমারও ছিল। মূল সমস্যা যেটি হয়েছিল যে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট খুব ভোগাচ্ছিল। হয়তো এ রকম পরিস্থিতি তৈরি না হলে.. হয়তো একটা ম্যাচে... আজও খুব কষ্ট হয়েছে খেলতে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর আমার বিশ্রাম ছিল, আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সিদ্ধান্তের কথা যেটি বললেন, আমি সব সময়ই বিশ্বাস করি, মানুষের জীবনে যা ঘটে, সেটা কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যেটি ঘটার, সেটি ঘটবেই। জন্মের পর সবার (ভাগ্য) লিখিত থাকে। যে সিদ্ধান্তই নিন, সেসব আপনার পক্ষে আসবে বা বিপক্ষে, সেটার নিয়ন্ত্রণ আপনার থাকে না। আমি কিন্তু সিরিজ শুরুর আগে যে পরিকল্পনা ছিল, সেটিতেই ছিলাম। আজকের পর হয়তো অন্য কিছু চিন্তা করতে পারি। আজ পর্যন্ত পুরো মনোযোগ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে।’

তার মানে রাজনীতির দমকা হাওয়ায় হারিয়ে যায়নি ক্রিকেটার মাশরাফির সত্ত্বা। রাজনীতি এবং ক্রিকেটকে আলাদা করে রাখার আশ্চর্য ক্ষমতা তাঁর আছে। ক্যারিয়ারের যতি টানার আগেই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। এটা নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যদি এই সিরিজে তিনি খারাপ করতেন, দল খারাপ করত, নিশ্চিত তাঁকে কথা শুনতে হতো। কঠিন এই ধাপটা যখন সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে যাওয়ায় মাশরাফি অনুপ্রাণিত হচ্ছেন দৃষ্টিটা আরও সামনে রাখতে, ‘সেটাই আমি পরিষ্কার করে বলতে চাচ্ছি যে, আমি নিজের কাছে পরিষ্কার ছিলাম এবং মনোযোগী ছিলাম যে আমার আগে কাজ ছিল এটি। আগে এটি শেষ করে অন্য কাজ করব। আমি আর দশটা সিরিজের মতোই মনোযোগী ছিলাম। টি-টোয়েন্টির জন্য দলকে শুভকামনা জানিয়ে যাচ্ছি দলকে। আমি আমার কাজই করব।’

তাঁর সামনে এখন সবচেয়ে বড় কাজ কোনটি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। সেটি শুরু করতে অবশ্য আরও দু-এক দিন সময় লাগবে মাশরাফির।