'বানি' পেয়ে গেছেন মিরাজ

কালও হেটমায়ারকে আউট করেছেন মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো
কালও হেটমায়ারকে আউট করেছেন মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো
>

একজন বোলার যখন কোনো ব্যাটসম্যানকে বারবার আউট করেন, তখন সেই ব্যাটসম্যান হয়ে যান ওই বোলারের ‘বানি’। নিয়মিত আউট করে হেটমায়ারকে বানিই বানিয়ে ফেলেছেন মিরাজ!

প্রথম ওয়ানডের পরই শিমরন হেটমায়ারকে নিয়ে একটা ‘ট্রল’ হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তরুণ ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ সফর অসমাপ্ত রেখেই ফিরে যাচ্ছেন দেশে। কেন সফর অসমাপ্ত রেখে ফিরে যাচ্ছেন, এ প্রশ্নে হেটমায়ারের উত্তর, ‘মিরাজ অবসর নিলে আবার বাংলাদেশে আসব!’ কালকের ব্যঙ্গটাও কম মজার নয়, ‘মিরাজের প্রিয় খাবার, মাছ-মাংস আর হেটমায়ার!’

যাঁর মধ্যে ভবিষ্যতের গেইলকে দেখছে ক্যারিবীয়রা, সেই হেটমায়ারের কাছে বড় ধাঁধা হয়ে উঠেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের তরুণ অফ স্পিনারকে একেবারেই খেলতে পারছেন না এ উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান। তাঁর দুর্ভোগের শুরু গত জুলাইয়ে, সেন্ট কিটসে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওই ম্যাচেই প্রথম মিরাজের শিকার হওয়া। পরে যে এটি বিরতহীন এক্সপ্রেস গাড়ির মতো চলতে থাকবে, সেটি কি তিনি ভাবতে পেরেছিলেন?

বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজে চার ইনিংসের প্রতিটিতেই মিরাজের বলে আউট হয়েছেন হেটমায়ার। ওয়ানডে সিরিজেও সেই একই ছবি। শুধু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মিরাজকে উইকেট দেননি। সিলেটে এসে আবার তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে মিরাজের কাছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে ৯ ম্যাচে এক অন্যের মুখোমুখি হয়েছেন, সাতবারই হেটমায়ারকে শিকারে পরিণত করেছেন মিরাজ। দুজন দুজনকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই চেনেন। একই সঙ্গে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। এই হেটমায়ারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৬ যুব বিশ্বকাপ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেমিফাইনালে হেটমায়ারের ৬০ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংসের কাছেই বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল মিরাজের বাংলাদেশকে।

হেটমায়ারকে বারবার আউট করে কি পুরোনো জ্বালাই জুড়োচ্ছেন মিরাজ? বারবার শিকারের রহস্যটাই–বা কী? বাংলাদেশের তরুণ অফ স্পিনারের উত্তর, ‘ও যখন ব্যাটিংয়ে আসে, তখন হয়তো আমি বেশি সিরিয়াস থাকি। ও আমার বলে যেহেতু আউট হচ্ছে, ওকে হালকাভাবে নিই না। আমি আরও বেশি সিরিয়াস থাকি। ভাবি যে ও হয়তো আমার ওপর চড়াও হতে পারে। তাই ও যখন ব্যাটিংয়ে নামে, আমার মনোযোগ তখন আরও বেড়ে যায়। হয়তো ও এখানে একটু পিছিয়ে থাকে বা আমি একটু এগিয়ে থাকি। এই কারণে হয়তো আমাকে খেলতে ওর একটু সমস্যা হচ্ছে।’

হেটমায়ারের বিপক্ষে মিরাজের এই সাফল্য টেনে আনছে ‘বানি’ শব্দটা। বানি মানে খরগোশ। ক্রিকেটে ‘বানি’ হচ্ছে প্রিয় শিকার। একজন বোলার যখন কোনো ব্যাটসম্যানকে বারবার আউট করেন, তখন সেই ব্যাটসম্যান হয়ে যান ওই বোলারের বানি। কোনো বোলারের বানি হওয়া একজন ব্যাটসম্যানের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়। ব্যাটসম্যানকে তখন ভালোমতো পেয়ে বসে বোলিং দল। কথার লড়াইয়ে ব্যাটসম্যানকে দুর্বলতার কথা মনে করিয়ে দেন ফিল্ডাররা। ক্যারিয়ারের শুরুতে সোহাগ গাজীও ‘বানি’ হিসেবে পরিণত করেছিলেন ক্রিস গেইলকে। যদিও এই স্পিনার পরে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি।

কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে প্রিয় শিকার বানাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। টেস্টে এক ব্যাটসম্যানকে সবচেয়ে বেশিবার আউট করার রেকর্ডটাও ম্যাকগ্রার। মাইক আথারটনকে ১৯ বার আউট করেছিলেন তিনি। ম্যাকগ্রার আগে রেকর্ডটা ছিল সাবেক ইংলিশ পেসার অ্যালেক বেডসারের। অস্ট্রেলিয়ার আর্থার মরিসকে তিনি আউট করেছেন ১৮ বার। ‘বানি’ হওয়ার জন্য আথারটনের বিকল্প নেই। শুধু ম্যাকগ্রা নন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক দুই পেসার কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোস দুজনই আথারটনকে আউট করেছেন ১৭ বার করে! ম্যালকম মার্শালের বানি ছিলেন গ্রাহাম গুচ (১৬ বার)। অ্যামব্রোসের আরেক প্রিয় শিকার ছিলেন মার্ক ওয়াহ (১৫)। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় ম্যাকগ্রা-ব্রায়ান লারার লড়াই। লারাকে ১৫ বার আউট করেছেন ম্যাকগ্রা।

বিষয়টা যেভাবে এগোচ্ছে, মিরাজের বানি হয়ে হেটমায়ার না আবার এ তালিকায় ওপরের দিকে জায়গা করে নেন!

দেখে নেওয়া যাক টেস্ট ইতিহাসের সেরা ‘বানি’দের

ব্যাটসম্যান

বোলার

ডিসমিসাল

ম্যাচ

মাইক আথারটন (ইংল্যান্ড)

গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)

১৯

১৭

আর্থার মরিস (অস্ট্রেলিয়া)

অ্যালেক বেডসার (ইংল্যান্ড)

১৮

২১

মাইক আথারটন (ইংল্যান্ড)

কার্টলি অ্যামব্রোস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৭

২৬

মাইক আথারটন (ইংল্যান্ড)

কোর্টনি ওয়ালশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৭

২৭

গ্রাহাম গুচ (ইংল্যান্ড)

ম্যালকম মার্শাল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৬

২১

টম হেওয়ার্ড (ইংল্যান্ড)

হিউ ট্রাম্বল (অস্ট্রেলিয়া)

১৫

২২

মার্ক ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া)

কার্টলি অ্যামব্রোস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৫

২২

ইয়ান হিলি (অস্ট্রেলিয়া)

কোর্টনি ওয়ালশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৫

২৮

ডেভিড গাওয়ার (ইংল্যান্ড)

জিওফ লসন (অস্ট্রেলিয়া)

১৪

২১

ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)

১৪

২২