আগুনের সঙ্গে আগুন নিয়ে খেলা!

ব্যাটিংয়ে অতি আত্মবিশ্বাস ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।
ব্যাটিংয়ে অতি আত্মবিশ্বাস ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।
ছবি: প্রথম আলো

শর্ট বলের বিপরীতে বাংলাদেশ এখনো ধুঁকছে। তবে কি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি? ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি মনে করেন, ঘাটতি নয়, বরং উপরি আত্মবিশ্বাসেই সমস্যা

আত্মবিশ্বাসের প্রসঙ্গটি নিল ম্যাকেঞ্জি নিজে তিনবার উল্লেখ করলেন। আসলে সংখ্যাটি হবে চতুর্থবার। একবার কনফিডেন্স, দুবার ওভার কনফিডেন্স দিয়ে কাজ চালিয়েছেন। আরেকবার বলেছেন ‘অন এ হাই’। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ এমন ব্যাটিংয়ের একটাই মূল কারণ দেখেন— বাড়াবাড়ি আত্মবিশ্বাস।

কাল নেট অনুশীলনে বাংলাদেশ বিশেষ জোর দিয়েছিল জোরে মারার দিকে। নেটেই যে খুব একটা সুবিধে করতে পারছিলেন ব্যাটসম্যানরা, এমন নয়। আর আজ তো নেট বোলারের হাত থেকে বল ধেয়ে আসেনি; এসেছে ক্যারিবীয় পেস ব্যাটারির মুঠো থেকে। তবু মনে হলো, শুরু থেকে ব্যাটসম্যানরা একটাই মিশন নিয়ে নেমেছিলেন। যা আছে কপালে। ধর তক্তা, মার পেরেক। তাতে হাত ফসকে হাতুড়ির ঘা পেরেকে পড়েনি। পড়েছে নিজেদের আঙুলেই!

নিল ম্যাকেঞ্জিকে যেটা সবচেয়ে হতাশ করেছে, আগের ব্যাটসম্যান যে ভুলের খেসারত দিয়ে ফিরেছেন, সেই একই ভুল কী করে বাকিরাও করেন! ম্যাকেঞ্জি তাই বললেন, ‘আসলে পর পর বেশ কয়েকটা সিরিজ জিতেছে বলে দলের আত্মবিশ্বাস বেশ চড়া। তিন ধরনের ক্রিকেটেই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে আসছি। ফলে আত্মবিশ্বাসও সে রকম। আমরা ব্যাটসম্যানদের ওপর আস্থা রেখেছিলাম। কিন্তু এটা হতাশার, তারা ভুলগুলো থেকে শিখতে পারল না। তবে আমরা এখনো ব্যাটসম্যানদের ওপর আস্থা রাখছি।’

আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো, অতি আত্মবিশ্বাস নয়। আপ্তবাক্যটা আবারও মনে করিয়ে দিলেন ব্যাটিং কোচ, ‘আজকের মূল সমস্যাটাই ছিল অতি আত্মবিশ্বাস। আপনি যদি ওই তিনটা আউটের দিকে তাকান। লিটন ১৪০ কিমি গতির বলটায় কী করল, নিচে এসে মেরে দিতে চাইল। এটা করতে অবশ্যই অনেক সাহস, বড় কলিজা আর নিজের ওপর বিশ্বাস লাগে। তামিম দারুণ ফর্মে আছে, ও স্কয়ারের সামনে দিয়ে মারতে চেয়েছিল। সৌম্যও একটি কাজ করেছে। দল যেভাবে শর্ট বল খেলেছে এটা নিয়ে আমার কোনো উদ্বেগ নেই। বরং আমি মনে করি আসল বিপদটা হয়েছে অতি আত্মবিশ্বাসে, আগুনের সঙ্গে আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে। কখনো কখনো আপনাকে আক্রমণ থেকে বিরতি নিতে জানতে হয়। সেটাই আমরা পারিনি।’

বাংলাদেশ একসময় দশের কাছাকাছি করে রান তুলছিল। টি-টোয়েন্টিতে এমন মেজাজকে হাততালি দিতেই হবে। তবে ধরে রাখতে হবে উইকেট। প্রথম থেকে মেরে খেলেও যদি নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকেন, তাতে আখেরে লাভ হয় না। বাংলাদেশ যেমন আজ ইনিংসের শেষ ৭টা বল খেলার আগেই আউট। কখনো কখনো টি-টোয়েন্টির শেষ ৭ বল মানে ২০ কি ২৫ রানের নিশ্চয়তাও। ১২৯ রানে অলআউট হয়ে তাই বাংলাদেশের ওভারপ্রতি স্কোর ৬.৭৮। ফলে শুরুর ওই তেড়েফুঁড়ে খেলাটা বৃথাই গেল।

ম্যাকেঞ্জিও তা মনে করেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে বেশি স্কোরিং রেট থাকার বেশ সুবিধা আছে। কিন্তু আমরা উইকেটও হারাচ্ছিলাম। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি যে কারণে এতটা ঝুঁকি নিচ্ছেন, এর বিনিময়ে কী পাচ্ছেন? শেষ পর্যন্ত তাই দিনটা আমাদের হলো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজও মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছে।’