দিনমজুরের মেয়েই এখন ক্রীড়াঙ্গনের বড় সম্পদ

জাতীয় অ্যাথলেটিকসে বর্শা নিক্ষেপে জাতীয় রেকর্ড গড়া নমিতা একজন দুর্দান্ত হকি খেলোয়াড়
জাতীয় অ্যাথলেটিকসে বর্শা নিক্ষেপে জাতীয় রেকর্ড গড়া নমিতা একজন দুর্দান্ত হকি খেলোয়াড়
>দিনমজুরের সন্তান নমিতা কর্মকার ক্রীড়াক্ষেত্রে হতে পারে বাংলাদেশের বড় সম্পদ।

নমিতা কর্মকারের বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। মা চায়না কর্মকার বাসা বাড়িতে কাজ করেন। এই পরিবারের কিশোরী কন্যাই এখন খেলাধুলায় বাংলাদেশের বড় সম্পদ হয়ে উঠেছে। জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে বর্শা নিক্ষেপে নতুন রেকর্ড গড়েছে সে। দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, একজন হকি খেলোয়াড় হিসেবেও সে নিজেকে গড়ে তুলছে। নারী হকিতে ইতিহাসেই নাম লিখিয়েছে এই নমিতা। 

গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ৩৪ তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস দিয়েই নমিতা পাদপ্রদীপের আলোয় আসে। বর্শা নিক্ষেপে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে ৩৬ দশমিক ৩৬ মিটার দূরত্ব পার করে। সে প্রতিযোগিতার ডিসকাস থ্রো আর শটপুটেও নমিতা নিজেকে প্রমাণ করেছে। এই দুইয়ে সোনা জিততে না পারলেও দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে নড়াইলের এই কিশোরী। তবে বর্শা নিক্ষেপের সাফল্য তাকে আলাদাভাবেই পরিচিতি দিয়েছে।
নভেম্বর মাসেই নমিতা ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় দেশের প্রথম নারীদের হকি দলের সদস্য হয়ে। সফরকারী ভারতের কলকাতা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েদের সিরিজ জয়ে দারুণ ভূমিকা তার। নিজে গোল তো করেছেই, সতীর্থকে দিয়ে গোল করাতেও জুড়ি নেই নমিতার। ঢাকা একাদশের সেরা খেলোয়াড় ছিল সে।
নমিতা নড়াইলের লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। লোহাগড়া পৌর শহরের কচুবাড়িয়ায় ওদের বাস। সাড়ে সাত শতাংশ জমির ওপর বসতভিটেটাই সম্বল। এখানে ছোট্ট দুটি ঝুপড়ি টিনের ঘর। অন্য কোনো জমিজমা নেই। নেই আর কোনো আয়।
বাবা মাখন কর্মকারের বয়স প্রায় ৬০। কানে শোনেন না। এক চোখে দেখেন না। শরীরের নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। ছিলেন কাঠুরে। এখন শক্ত পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন না। তাই পানের বরজে কাজ করেন। কিন্তু কাজটি মৌসুমি। প্রায় ছয় মাস কাজ থাকে না। নভেম্বর থেকে কাজ নেই। তখন পরিবারের সদস্যদের নির্ভর করতে হয় নমিতার মায়ের সামান্য আয়ের ওপর। অবশ্য বছর দুই হলো জ্যাভলিন খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনে (বিজেএমসি) যোগ দিয়েছেন নমিতা। বেতন সপ্তাহে ১ হাজার ৯০০ টাকা। এই টাকাটা সংসারে কাজে আসছে।
মাখন কর্মকরের তৃতীয় সন্তান এই নমিতা। বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন পাঁচজনের সংসার। ছোট মেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
নমিতা নিজেকে অনেক দূর নিয়ে যেতে হয়, ‘ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল খেলাধুলায়। শুরু ফুটবল দিয়ে। অ্যাথলেটিকস হয়ে এখন হকিতে। আমি হকি নিয়েই এখন বেশি স্বপ্ন দেখি।’ দেশে একদিন হকিতে নারীদের জাতীয় দল হবে। সে দলে খেলতে চায় সে। নমিতা ক্রিকেটের মতো হকিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চায় অন্য উচ্চতায়।
খেলার হাতেখড়ি তাঁর বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তীর কাছে। দিলীপ চক্রবর্তী বললেন, ‘হকিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। নিজের চেষ্টায় উঠছে নমিতা। নমিতাদের লালন করা গেলে হবে এ দেশের বড় সম্পদ।’
খেলায় এই সম্পদটিকে এখন আমাদের লালন করতে হবে অতি যত্নে। সে যত্ন কী নমিতা পাবে?