যেখানে জয়াসুরিয়ার সঙ্গে মাশরাফি

>নড়াইল-২ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েই মাশরাফি বিন মুর্তজা চলে এসেছেন ঢাকায়, বিপিএলকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসে মাশরাফিই কি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি খেলাকে পুরোপুরি বিদায় না জানিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন?
খেলা ও রাজনীতি, দুই মাঠই সামলাতে হচ্ছে মাশরাফিকে। ফাইল ছবি
খেলা ও রাজনীতি, দুই মাঠই সামলাতে হচ্ছে মাশরাফিকে। ফাইল ছবি

২৮ তারিখ পর্যন্ত নিজ এলাকায় জনসংযোগ করলেন। ৩০ তারিখের নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটে নড়াইল-২ আসনের সাংসদ হলেন। সাংসদ হয়েই ৫ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া বিপিএলের জন্য ঢাকায় চলে এলেন, পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন, জিম করলেন। আবার আজ সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য সংসদে পা রাখলেন তিনি। ৩০ তারিখের পর থেকে এভাবেই চলছে দেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জীবন। কখনো তিনি ক্রিকেটার, কখনো তিনি জাতীয় সংসদে নিজ এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার উদাহরণ আছে অনেক গুলিই। পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান তো রাজনীতি করতে করতে গত বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীই হয়ে গেলেন। ক্রিকেটের পিচ থেকে রাজনীতির ‘স্পিচে’ আগ্রহী হয়ে ওঠার তালিকায় আরও রয়েছেন শ্রীলঙ্কার অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনৎ জয়াসুরিয়া, হাসান তিলকরত্নে, ভারতের মনসুর আলী খান পতৌদি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, নভজোৎ সিং সিধু, বিনোদ কাম্বলি, মনোজ প্রভাকর, কীর্তি আজাদ, পাকিস্তানের সরফরাজ নাওয়াজ, আমির সোহেল প্রমুখ। ভারতের রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারও। আমাদের দেশেও কিন্তু মাশরাফিই প্রথম ক্রিকেটার নন যিনি রাজনীতির ময়দানে পা রেখেছেন। ২০১৪ সাল থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ হিসেবে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান।

কিন্তু এক দিকে সনৎ জয়াসুরিয়া ছাড়া বাকি সবার থেকে মাশরাফি কিন্তু আলাদা। সেটি কোন জায়গায়?
সবাই রাজনীতির মাঠে নেমেছিলেন ক্রিকেটের ময়দান থেকে পুরোপুরিভাবে অবসর নেওয়ার পর। মাশরাফি আর জয়াসুরিয়াই এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম, খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেটকে পুরোপুরি বিদায় জানানোর আগেই তাঁরা সংসদ সদস্য হয়েছেন। ২০১০ সালে নিজের এলাকা মাতারা থেকে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন জয়াসুরিয়া। সাংসদ হওয়ার পরেও ২০১১ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার হয়ে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে খেলে গেছেন তিনি। খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস, রুহুনা রাইনোস ও কান্দুরাতা ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি। এদিকে নড়াইল-২ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েই বিপিএলের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন মাশরাফি। এই টুর্নামেন্টে তিনি তো রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক।

রাজনীতিতে নেমেই বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। তবে এখনো ক্রিকেটার পরিচয়টাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে মাশরাফির কাছে। নির্বাচনের মাত্র দুই দিনের মধ্যে নিজ এলাকা আর ভোটারদের ছেড়ে ঢাকায় ফেরার সেটিই কারণ। ঢাকা ফেরার পথে কাল মুঠোফোনে মাশরাফি বলছিলেন, ‘কাল (আজ) থেকে বিপিএলে আমাদের অনুশীলন শুরু হওয়ার কথা। আমি চাচ্ছি অনুশীলনের শুরু থেকে দলের সঙ্গে থাকতে। খেলাটাই তো আমার পেশা।’

বিপিএলের অনুশীলনে জাতীয় দলের মতো কড়াকড়ি নেই। মাশরাফি তাতে এক-দুই দিন পর যোগ দিলেও কারও কিছু বলার ছিল না। কিন্তু খেলার মাঠে সেরাটা দিতে হলে যে অনুশীলনের বাইরেও কিছু করতে হয়! মাশরাফি যেমন এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নিজের খেলাকেই। তা ছাড়া একজন খেলোয়াড় মাঠ থেকে কত দিন আর দূরে থাকতে পারেন! মাশরাফির রক্তেও নির্বাচন শেষ হতেই ফুটতে শুরু করেছে ক্রিকেট, ‘আগে যেভাবে খেলেছি, অনুশীলন করেছি...এখনো সেভাবেই সময়মতো সবকিছু করব। ফিটনেসের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমার শরীরের অবস্থা তো আর সবার মতো নয়। কাজেই এটার ওপর জোর দিতেই হবে।’