বিদেশেও ভালো দল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ঘরের মাঠের দাপট ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এবার বিদেশে পরীক্ষার পালা। ফাইল ছবি
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ঘরের মাঠের দাপট ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এবার বিদেশে পরীক্ষার পালা। ফাইল ছবি
>বিশ্বকাপের বছরে দেশের বাইরে অনেক খেলা। সাকিব আল হাসানের প্রত্যাশা, এবার বিদেশের মাটিতেও ‘ভালো দলে’র পরিচিতি পাবে বাংলাদেশ।


২০১৯ সালে সাকিব আল হাসানের জন্য কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? মেয়ে আলাইনার স্কুলে ভর্তি হওয়া নাকি ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ?
প্রশ্ন শুনে মৃদু হেসে ক্ষণিকের জন্য চিন্তার সাগরে হারিয়ে গেলেন টেস্টের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের খোলা চত্বরে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে এনে সাকিব যেন খুঁজে পেলেন উত্তর, ‘দুটিই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাবা হিসেবে মেয়ের স্কুলে ভর্তিটা গুরুত্বপূর্ণ, আর খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ।’
'
গত নভেম্বরে তিন পেরিয়ে চারে পা দিয়েছে সাকিবকন্যা আলাইনা। গুলশানের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে বাবা সাকিব বেশ রোমাঞ্চিত। বছরটাও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠতে পারে ক্রিকেটার সাকিবের কাছে। সে জন্য ২০১৯ সাল নিয়ে যে স্বপ্নটা তিনি দেখছেন, পূরণ হতে হবে সেটি।
এ বছর বাংলাদেশ দল দেশের বাইরেই খেলবে বেশি। এ মাসের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে শুরু। এরপর আয়ারল্যান্ড সফর ও ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। সম্ভাব্য সূচিতে আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফরও। বিদেশের মাটিতে বেশি খেলা—সাকিবের চোখে বাংলাদেশের জন্য এটিই বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর চ্যালেঞ্জের পিঠেই থাকে নতুন উচ্চতায় ওঠার হাতছানি। একেকটি চ্যালেঞ্জ জেতা মানেই হলো নিজেদের আরেক ধাপ ছাড়িয়ে যাওয়া। ২০১৯ সেই সম্ভাবনার দুয়ারই কি খুলে দিচ্ছে না বাংলাদেশ দলের সামনে!

সাকিব অন্তত সেভাবেই নিচ্ছেন নতুন বছরটাকে, ‘বছরটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং...আমি বলব অনেক বেশিই চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ বিশ্বকাপসহ বেশির ভাগ খেলাই আমাদের দেশের বাইরে খেলতে হবে’—এটুকু বলে জানালেন চ্যালেঞ্জ জয়ের লক্ষ্যের কথাও, ‘এটা একটা সুযোগ আমাদের জন্য। বাইরের কন্ডিশনে আমরা কখনো ভালো করিনি। ব্যক্তিগত কিছু ভালো পারফরম্যান্স হয়তো আছে, কিন্তু দেশের বাইরে দল হিসেবে ভালো ফলাফল খুব একটা করিনি। এবার যেহেতু বাইরে অনেক ম্যাচ খেলব, সেগুলোতে ভালো ফলাফল পেলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে।’

ভিন্ন কন্ডিশনের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াইয়ে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়কের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিটনেস। আঙুলের সামান্য চোট কী মারাত্মক ভোগান্তিতে ফেলতে পারে, সেটি তো নিজেই দেখেছেন গত বছর! বছরের শুরুতে তাই দলের সবার উদ্দেশে বলেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবাইকে ফিট থাকতে হবে এবং খুব ভালো অবস্থায় থাকতে হবে। ভালো খেলার জন্য এটাই সবার আগে দরকার।’ সঙ্গে মাথায় রাখতে বলেছেন ভিন্ন কন্ডিশনে যাঁর যাঁর দুর্বলতার কথাও, ‘আমাদের সব জায়গায়ই উন্নতি করতে হবে। বিদেশের মাটিতে আমরা ভালো খেলি না, সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে উন্নতির অনেক জায়গাই আছে। আমি মনে করি ব্যক্তিগতভাবেও সবাইকে যার যার মতো প্রস্তুতি নিতে হবে। বাইরের কন্ডিশনে ভালো খেলার জন্য যার যেখানে উন্নতি করা দরকার, সেভাবে কাজ করতে পারলে দল হিসেবেও আমরা সেটার সুফল পাব।’

বছর শুরু হবে নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে। অনেকের ধারণা, বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপের চেয়েও কঠিন হতে পারে এই সফর। নিউজিল্যান্ডে সর্বশেষ সফরের অভিজ্ঞতাও সেই শঙ্কা জাগায়। কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বাদ দিলে সফরটা ছিল তিক্ত অভিজ্ঞতার। তবে পুরোনো স্মৃতি মনে করে এখনই ‘ব্ল্যাক ক্যাপ’ জুজুতে আক্রান্ত হতে রাজি নন সাকিব, ‘নিউজিল্যান্ড সফর আমাদের জন্য সব সময় চ্যালেঞ্জিং থাকে, এবারও হয়তো তা–ই হবে। তারপরও ভালো করার আশা তো থাকবেই।’

সাকিবের আশাটা বিশ্বকাপ নিয়েই বেশি। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা আগেই বলেছেন, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অন্তত সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশের। কাল সাকিবও বলছিলেন, ‘ছয়টা ম্যাচ জিতলে খুবই ভালো, তবে সেমিফাইনালে খেলতে হলে আমাদের কমপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ তো জিততেই হবে। চেষ্টা থাকবে যেন ছয়টি ম্যাচ জিততে পারি। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে পারলে খুবই ভালো অর্জন হবে আমাদের জন্য।’

সে যাত্রায় নিজের সেরাটা ঢেলে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা সাকিবের। ২০১৯ সালে ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য না থাকলেও দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারাটাই তাঁর কাছে হবে বড় অর্জন! বছরটা যা দিয়ে শুরু হচ্ছে, সেই বিপিএল নিয়েও ঢাকা ডায়নামাইটসের সাকিবের আছে বড় স্বপ্ন, ‘আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইনের মতো টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ আছে আমাদের। স্থানীয় এবং বিদেশিদের নিয়ে দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

কাল শেষ বিকেলে একাডেমি মাঠে ঢাকা ডায়নামাইটসের খেলোয়াড়দের বৃত্তে মধ্যমণি হয়ে সাকিব হয়তো সে আশার কথাই শোনাচ্ছিলেন। আশা আছে আরও। ২০১৯ সালে বিদেশের মাঠে উজ্জ্বল বাংলাদেশের ছবি ফুটিয়ে তুলবেন সাকিব-মাশরাফিরা।