১৮ বছরের ভিনিসিয়ুসকেই 'রোনালদো' মানছে রিয়াল!

টানা দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন ভিনিসিয়ুস
টানা দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন ভিনিসিয়ুস

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য গ্যারেথ বেলকে ভরসা মেনেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তাঁর সঙ্গী হিসেবে করিম বেনজেমা, মার্কো অ্যাসেনসিও আর ইসকোরা তো ছিলেনই। কিন্তু মৌসুমের অর্ধেকটা পেরোতেই দেখা গেছে, ওসব ছিল ছলনা। পাঁচ বছর পর বেল নিশ্চিত করেছেন, রোনালদোর আড়ালে থাকার জন্য আর কেউ নন তিনি নিজেই দায়ী। রিয়ালের মতো ক্লাবের ভার নেওয়ার ক্ষমতা নেই তাঁর, যে ক্ষমতা এখন ১৮ বছর এক কিশোরের কাঁধে দিয়েছে বার্নাব্যু।

কোপা দেল রের শেষ ষোলোতে কাল লেগানেসের বিপক্ষে প্রথম লেগ খেলেছে রিয়াল। নিজেদের মাঠে এ ম্যাচের জন্য গ্যালারিতে অর্ধেক লোকও টানতে পারেনি লস ব্লাঙ্কোরা। রোনালদোর বিদায়ের পর থেকেই শুরু হয়েছে দর্শক কমা। লিগে হতাশাজনক একের পর এক পারফরম্যান্স দিন দিন দর্শক কমিয়ে আনছে। পুরো দলের খেলাতেই কেমন যেন হাল ছেড়ে দেওয়া ভাব। একমাত্র ব্যতিক্রম ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। লেগানেসের বিপক্ষে তাঁর প্রদর্শনী মুগ্ধ করেছে সবাইকে। সেটার পূর্ণতা এসেছে দুর্দান্ত এক ভলিতে করা গোলে। নিষ্প্রাণ এক দলে একমাত্র ভিনিসিয়ুসই খেলার আনন্দ ফিরিয়ে দিচ্ছেন সমর্থকদের।

সপ্তাহের শুরুতে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে ২-০ গোলে হেরেছে রিয়াল। সে ম্যাচে দুয়ো শুনেছে প্রায় পুরো দল। একমাত্র ভিনিসিয়ুসের মধ্যেই ম্যাচের গতিপথ পাল্টানোর চেষ্টা ছিল। রেফারি ভুল না করলে দলকে একটি পেনাল্টিও এনে দিতে পারতেন। তাঁর একক প্রচেষ্টায় এত টাই মুগ্ধ ছিল দর্শক যে শেষ দিকে বাজে এক শট খেলার পরও তালি পেয়েছেন। কারণ, সমর্থকেরা এর আগে ৯০ মিনিট একাই খেটে বেড়ানো একজনের মূল্য বুঝতে পেড়েছে।

মৌসুমের শুরুতে রোনালদো চলে যাওয়ার পর ভাবা হয়েছিল ১৮ বছরের এই ব্রাজিলিয়ানকে ভালোভাবেই দেখা যাবে রিয়ালের জার্সিতে। কিন্তু হুলেন লোপেতেগি তাঁকে দ্বিতীয় দলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। লোপেতেগির চাকরি হারানোর একটি কারণ ছিল এ সিদ্ধান্ত। বার্নাব্যুতে টানা দুই ম্যাচে শুরু থেকে নেমে ভিনিসিয়ুস দেখিয়ে দিয়েছেন, রোনালদোবিহীন এ দলে দর্শককে মাঠে যদি কেউ ফেরাতে পারেন তবে সেটা তিনিই। গতকাল লেগানেসের বিপক্ষে তাঁর প্রতিটি পাস, প্রতিটি ছোঁয়াতে দর্শকের চিৎকার করে অংশ নেওয়াতেই এটা বোঝা গেছে।

ক্লাব কিংবদন্তি ও বর্তমান পরিচালক বুত্রেগুয়েনোও স্বীকার করেছেন ভিনিসিয়ুস তাঁকে মুগ্ধ করেছে, ‘এই স্টেডিয়ামে এভাবে খেলতে পারার মানে হচ্ছে আপনার মাঝে সে ব্যক্তিত্ব আছে। বিশেষ করে একজন স্ট্রাইকারের জন্য। আমাদের ভুললে চলবে নাওর বয়স মাত্র ১৮।’

রিয়ালের এখন এমনই অবস্থা যে এই ১৮ বছরের কাঁধেই সব দায়িত্ব দিয়ে দেওয়ার অবস্থা। রোনালদোর বিদায়ের পর একজন মহাতারকা দরকার তাদের। তার চেয়েও বেশি দরকার আক্রমণে একজন নেতার। বেল মাঠে যেমন নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ, মাঠের বাইরেও তাই। সোসিয়েদাদের বিপক্ষে রিয়াল ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় গ্যালারি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বেল। একজন খেলোয়াড়ের এমন আচরণ ক্লাব মানতে পারেনি, এর মাঝেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ওদিকে হতাশ এক দলকে আশা দেখাচ্ছিলেন ভিনিসিয়ুস। একের পর এক গোলের সুযোগ করে দিয়েছেন। আক্রমণে সত্যিকারের একজন গোল স্কোরার থাকলেই দুটি ম্যাচেই রিয়ালের স্কোরকার্ড ব্যতিক্রম কিছু দেখাত।

মাঠে সরাসরি ফুটবল দেখতে না পারায় নিজেদের সর্বনিম্ন দর্শকের রেকর্ড গড়ছে। রোনালদোর মতো মহাতারকার বিদায়ের পর অন্য কোনো তারকাকে দলে না আনার ভুলটা এখানেই টের পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমের মাঝপথে ভিনিসিয়ুসকে দলে নিয়মিত দেখতে পাওয়ার পর আবার আশা পাচ্ছেন সমর্থকেরা। গোলে শটে নেওয়া, প্রতিপক্ষের রক্ষণকে সব সময় ভয়ে রাখা এবং সঙ্গীদের গোল করানোর ইচ্ছা দেখিয়ে সবার মন কেড়ে নিয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান।

নেইমার, এমবাপ্পে কিংবা হ্যাজার্ডের মতো তারকা আপাতত পাচ্ছে না রিয়াল মাদ্রিদ। তবে আগামী জুন পর্যন্ত সমর্থকেরা অন্তত ভিনিসিয়ুসের পায়ের কাজ দেখার আশা করতেই পারেন। রোনালদোর গোল দেখতে না পারার দুঃখ ১৮ বছরের এক কিশোরের সাহসিকতায় ভুলতে পারেন তাঁরা। অন্তত দর্শক ফিরে পেতে আকুল রিয়াল সে আশাতেই থাকছে।