আবাহনীর ত্রাতা ফয়সাল, ভিনিসিয়ুসে সওয়ার বসুন্ধরা

আবাহনীকে প্রথমে এগিয়ে দিয়েছেন রুবেল। ছবি: প্রথম আলো
আবাহনীকে প্রথমে এগিয়ে দিয়েছেন রুবেল। ছবি: প্রথম আলো

মৌসুমের প্রথম দুটি টুর্নামেন্টেই ছিল বিদেশিদের দাপট। ফেডারেশন কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬টি) চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে সিজোবা। স্বাধীনতা কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা আরামবাগের পল এমিলি (৪ গোল)। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের প্রথম দিনটা নিজেদের করে রেখেছে স্থানীয় ফুটবলাররাই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ দুটি ম্যাচে হয়েছে ৪ গোল। এর মধ্যে তিনটিই দেশি ফুটবলারদের।

দিনের প্রথম ম্যাচে লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ২-১ গোলে হারিয়েছে নোফেল স্পোর্টিংকে। আবাহনীর দুটি গোল করেছেন রুবেল মিয়া এবং ফয়সাল আহমেদ শীতল। নোফেলের গোলদাতা কামরুল ইসলাম। সন্ধ্যায় পরের ম্যাচে লিগ রানার্স আপ শেখ জামাল ধানমন্ডিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। একমাত্র গোলটি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্কোস ভিনুসিয়ুসের। ফেডারেশন কাপে জ্বলে উঠেছিলেন আবাহনীর সানডে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আকাশি নীল দলটি। কিন্তু স্বাধীনতা কাপে দুই ম্যাচে অল্প সময়ের জন্য সুযোগ পেয়ে নিজেকে মেলে ধরেন ফয়সাল আহমেদ। আজ আবারও বদলি হিসেবে নেমে দলকে জেতালেন।

দলকে জিতিয়েছেন বদলি নামা ফয়সাল। ছবি: প্রথম আলো
দলকে জিতিয়েছেন বদলি নামা ফয়সাল। ছবি: প্রথম আলো

আবাহনী কাঙ্ক্ষিত স্ট্রাইকার খুঁজে পেল কিনা সেই উত্তরটা না হয় সময়ের হাতেই তোলা থাক। আপাতত ফয়সাল আহমেদের দিকে একটু নজর দেওয়া যেতেই পারে। সর্বশেষ টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপে চোটের কারণে মাঠে তেমন পারফরম্যান্স করতে পারছিলেন না সানডে সিজোবা। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মারামারির জেরে নিষিদ্ধ নাবিব নেওয়াজ জীবন। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে গোলের জন্য আবাহনী অপেক্ষায় ছিল ৭৫ মিনিট পর্যন্ত। ওই ম্যাচে জুয়েল রানার বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোল করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। সেই ফয়সাল আজও বদলি হিসেবে নেমেই আবাহনীকে এনে দিলেন মূল্যবান ৩ পয়েন্ট।

আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের নজরটা শুরুর দিন থেকেই ছিল ফয়সালের ওপর। বিকেএসপির সাবেক ছাত্র ফয়সাল ২০১৪ সালে তৃতীয় বিভাগে করেন ১৪ গোল। পরের মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার হয়ে ছিল ৭ গোল। এরপর ফেনী সকার, উত্তর বারিধারা হয়ে এবার ঠিকানা আবাহনীতে।

স্বাধীনতা কাপে আবাহনীর প্রথম ম্যাচের দিন ঢাকায় এসেই কোচ দেখেছিলেন ফয়সালের সামর্থ্য। সেদিন বদলি হিসেবে নামার পরই জোড়া গোল করেন ফয়সাল। এরপর টুর্নামেন্টে আর একটি ম্যাচে সুযোগ পান। আজ ৮৫ মিনিটে নামেন মামুনুল ইসলামের বদলি হিসেবে। নামার মিনিট দু-একের মধ্যেই একটি মাত্র সুযোগ পান, সেটাই কাজে লাগিয়ে আবাহনীকে উপহার দেন জয়।

প্রিমিয়ারে নবাগত নোফেল স্পোর্টিং অভ্যন্তরীণ সমস্যায় লিগের প্রস্তুতি সেভাবে নিতে পারেনি। মাত্র ১০ দিনের অনুশীলনেও আবাহনীকে বলতে গেলে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। যদিও ম্যাচের ৮ মিনিটে রুবেল মিয়ার গোলে বেশ নির্ভার হয়েই খেলছিল আবাহনী। কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে আবাহনীকে চেপে ধরেছে নোফেল। চোটের কারণে হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড কারভেন্স বেলফোর্ট মাঠে নামেননি। নাবিব নেওয়াজ জীবনের সঙ্গে সানডে জুটি গড়লেও সুবিধা করতে পারছিলেন না। চোট থেকে ফেরা মামুনুলও ততটা ছন্দে খেলতে পারেননি। তাছাড়া দলের প্রধান গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল চোটের জন্য দর্শক। দ্বিতীয় গোলরক্ষক সুলতান আহমেদ শাকিলের ভুলেই সমতায় ফেরে নোফেল। ৪৫ মিনিটে সমতায় ফেরানো গোলটি করেন নোফেলের ডিফেন্ডার কামরুল ইসলাম। 

বসুন্ধরার লিগের সূচনা শুভ হয়েছে ভিনিসিয়ুসের সুবাদে। ছবি: প্রথম আলো
বসুন্ধরার লিগের সূচনা শুভ হয়েছে ভিনিসিয়ুসের সুবাদে। ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয়ার্ধে ৮৭ মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে রুবেল মিয়ার আক্রমণ, দারুণ একটা ক্রস এসে পড়ে বক্সের সামনে। জটলায় থাকা সানডে ও ফয়সাল একই সঙ্গে লাফিয়ে ওঠেন। ফয়সালের দারুণ হেড জমা হয় নোফেলের গোলরক্ষক আপেল মাহমুদের গ্লাভসে। কিন্তু আপেল নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। বল নিয়েই ঢুকে পড়েন গোল পোস্টের ভেতর। আবাহনীকে জেতাতে পেরে উচ্ছ্বসিত ফয়সাল ম্যাচ শেষে বলছিলেন,‘আমার ওপর কোচ আস্থা রেখেছিলেন, সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরে ভালো লাগছে।’

বসুন্ধরা কিংস ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ। স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু প্রিমিয়ারে নবাগতদের আসল পরীক্ষা শুরু হলো আজ। শিরোপা প্রত্যাশী দলটি অবশ্য শুরুটা ভালোই করেছে। স্বাধীনতা কাপের গ্রুপ পর্বে এই শেখ জামালকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল। অবশ্য শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি সুযোগ পায় শেখ জামাল । কিন্তু গোল করতে পারেননি সলোমন কিং, সাইনি বোজানরা। অথচ ৬৯ মিনিটে পাওয়া প্রথম সুযোগটা ভালোমতো কাজে লাগান বসুন্ধরার মার্কোস ভিনিসিয়ুস। এরপর ম্যাচের শেষ দিকে এসে গোলরক্ষক সামিউল ইসলামকে একা পেয়েও বাইরে বল পাঠালেন বসুন্ধরার বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান ফুটবলার দানিয়েল কলিনদ্রেস।