ওয়ার্নারকে বিদায়ী উপহার দিলেন সাব্বির?

বহুদিন পর বড় রানের দেখা পেলেন সাব্বির। ছবি: প্রথম আলো
বহুদিন পর বড় রানের দেখা পেলেন সাব্বির। ছবি: প্রথম আলো
>রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান তুলেছে সিলেট সিক্সা্র্স

তাঁর প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন ওঠে কর্মকাণ্ড নিয়ে। বিতর্কিত সব কর্মকাণ্ডের জন্য কদিন পরপরই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম। নিষেধাজ্ঞা, আর কত সব নেতিবাচক কথা! খেলোয়াড় এমন হলে তাঁর ভক্তদের শ্বাস নেওয়াও দুষ্কর। সাব্বির রহমান অবশ্য আজ তাঁর ভক্তদের বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগটুকু করে দিলেন। বিপিএলে টানা ছয় ম্যাচ রান খরায় ভোগার পর এই ব্যাটসম্যান আজ যে ইনিংস খেললেন, তাতে তাঁর সমালোচকরাও প্রশ্ন তুলতে পারেন—এত দিন লুকিয়ে ছিলে কোন কোটরে?

অবশ্যই বাজে ফর্মের কোটরে। সাব্বির যেন নিজেই নিজেকে বন্দী করেছিলেন! গত ছয় ম্যাচের মধ্যে দু-তিনটিতে ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। অথচ শুধু বিপিএল নয়, গোটা সংক্ষিপ্ত সংস্করণই তো সাব্বিরের ক্রিকেট। মার মার কাট কাট ব্যাটিং। সাব্বির আজ ফিরে পেলেন সেই ব্যাটিং। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। খেলেছেন ১৯.১ তম ওভার পর্যন্ত। ৬ ছক্কা ও ৫ চারে তাঁর ৫১ বলে ৮৫ রানের ইনিংসটি ভক্তদের জন্য সত্যিই ভীষণ খরতাপে এক পশলা বৃষ্টির মতো। কত দিন পর তিনি রানের দেখা পেলেন!

বিসিএলে গত বছরের নভেম্বরে নর্থ জোনের হয়ে ফিফটির মুখ দেখেছিলেন সাব্বির। এরপর ছোট বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ মিলিয়ে ১০ ইনিংস পর সাব্বির দেখা পেলেন আরেকটি ফিফটির। সেঞ্চুরির সুবাস ছড়ানো তাঁর এই ইনিংসে ভর করে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান তুলেছে সিলেট। ২৭ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন পুরান। ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ইনিংসটি সাজান তিনি।

দলটির সংগ্রহ দুই শ টপকে যেত যদি টপ অর্ডার সাব্বিরকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারত। ওপেনে তাঁর সতীর্থ লিটন ১১ রানে ফেরার পর সাব্বির এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন নিজ দায়িত্ব। শুধু আগলে রাখা নয়, বাজে বল পেলে কিংবা ভালো বলকে বানিয়ে দুর্দান্ত সব স্ট্রোক খেলেছেন সাব্বির। এ যেন সেই পুরোনো সাব্বির!

মিডল অর্ডারে আফিফ হোসেন ও ডেভিড ওয়ার্নার দুজনেই আউট হয়েছিলেন ১৯ রান করে। নিকোলাস পুরান যা একটু সঙ্গ দিয়েছেন সাব্বিরকে। ৭৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। ১৩তম ওভারে রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফির বলে লং অনে ক্যাচ দেন ওয়ার্নার। এবার বিপিএলে এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। ওয়ার্নার ফেরার সময় সিলেটের স্কোর ৩ উইকেটে ১০৩। সাব্বির ততক্ষণে ফিফটি তুলে নিয়েছেন। সেটিও মাত্র ৩৪ বলে। ঝড় যে উঠেছিল তা তো বোঝাই যাচ্ছে। ফিফটির আগেই সোহাগ গাজী, নাহিদুল ইসলাম, ফরহাদ রেজাদের কখনো ডাউন দ্য উইকেট আবার কখনো জায়গায় দাঁড়িয়ে উড়িয়ে মেরেছেন সাব্বির। বল বাতাসে ভেসে পৌঁছেছে সীমানার বাইরে।

ফিফটির পর এই সাব্বির আরও আক্রমণাত্মক। ১৪তম ওভারে গেইলকে মারলেন এক ছক্কা ও এক চার। ধারাভাষ্যকারেরা বলেছেন, সাব্বির আজ ডাউন দ্য উইকেট আসা মানেই বল সীমানার বাইরে! ঠিক তাই। ক্রিজ ছেড়ে দু পা এগিয়ে প্রায় সব ডেলিভারিই ব্যাটের মাঝে লাগিয়েছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা এবং এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ এই ব্যাটসম্যান।

১৭ ও ১৮তম ওভারে সাব্বির ও পুরানের যৌথ প্রযোজনায় মোট ৩৫ রান তুলেছে সিলেট। গেইলের করা পরের ওভারে সাব্বির একাই তুলেছেন ১৪ রান। তখনই সাব্বিরের ব্যাটে আরেকটি বিপিএল সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু হঠাৎ করেই স্বপ্নভঙ্গ। শেষ ওভারের প্রথম বলে শফিউলকে লং অফে ছক্কা মারতে গিয়ে সাব্বির রাইলি রুশোর তালুবন্দী। ততক্ষণে অবশ্য সিলেট সমর্থকদের পয়সা উশুল। দলটির ঘরের মাঠে রান পেয়েছেন তাঁদের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। আর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গড়া সিলেট এত দিন চুপটি মেরে পরে থাকার পর ফিরল স্বরূপে। স্বাগতিক সমর্থকদের পয়সা উশুল হতে আর কি লাগে!