সাকিব, তামিমদের কাছে প্রত্যাশাটা কেমন বোঝেন মুশফিক

বিপিএলে দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকই সবচেয়ে ধারাবাহিক। ছবি: প্রথম আলো
বিপিএলে দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকই সবচেয়ে ধারাবাহিক। ছবি: প্রথম আলো
বিপিএলে ব্যাটিংয়ে বিদেশিরাই রান করছেন বেশির ভাগ সময়। দেশিদের মধ্যে একমাত্র উজ্জ্বল মুশফিকুর রহিম। তিনিই বললেন, দেশি ক্রিকেটাররা সবাই ভালো করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি খুব ভালো করেই বোঝেন দেশিদের কাছে ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশাটা কেমন।


এ এক চিরন্তন অভিযোগ। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির গড় মিলের এক অতৃপ্তি। বিপিএলে জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকারা কেন বিদেশিদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন না। তারকাখ্যাতি বিচারে তো অনেক বিদেশিদের চেয়েই তারা এগিয়ে। নিজেদের মাঠ, পরিচিত পরিবেশে কেন তাঁদের সামর্থ্যের পুরোটা প্রকাশিত হয় না— এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই ক্রিকেটপ্রেমী মানুষদের।

বড় তারকাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিজেদের সুনাম অনুযায়ী খেলেন, কিন্তু তুলনামূলক তরুণেরা প্রায় সবাই অসম্ভব (!) অধারাবাহিক। একদিন উজাড় করে দেন তো বাকি তিন দিন নিষ্প্রভ! কেন এমন হচ্ছে? প্রশ্নটা কাল ছুটে গেল এবারের বিপিএলে বাংলাদেশি তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক যিনি, সেই মুশফিকুর রহিমের দিকেই। তিনি নিজের সতীর্থদের জন্য দাঁড়িয়েছেন ঢাল হয়েই। বললেন, ‘জাতীয় দলে যারা আছে তারা সবাই চেষ্টা করে। সেদিক দিয়ে কোনো ত্রুটি নেই।’

চেষ্টা অবশ্যই তারা করেন, এটা তো কেউ অস্বীকার করছে না। কিন্তু বেশির ভাগ ম্যাচেরই যে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সাফল্যের মূল নিয়ামক হচ্ছেন বিদেশি তারকারা। শীর্ষ রান সংগ্রহকারী ক্রিকেটারদের তালিকার দিকে চোখ ফেললে দেখা যাবে, এতে শীর্ষ পাঁচে আছেন কেবল মুশফিকুর রহিম। নির্দিষ্ট করে বললে এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত প্রোটিয়া তারকা রাইলি রুশোর পর মুশফিকই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, শীর্ষ পাঁচে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিক ছাড়া যিনি আছেন, সেই জুনায়েদ সিদ্দিক অনেক দিন আগেই জাতীয় দলের বাইরে চলে গেছেন। এবারের বিপিএলটা তাঁর জন্য ক্যারিয়ারের নতুন মোড়ই মনে করা হচ্ছে। প্রায় বিস্মৃত অবস্থা থেকে বিপিএলের রান সংগ্রাহকদের তালিকার চার নম্বরে থাকাটা জুনায়েদের জন্য অবশ্যই বড় কৃতিত্বের। কিন্তু এই তালিকায় ক্রিকেটপ্রেমীরা খুব করেই খুঁজে ফিরছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, ইমরুল কায়েন, মোহাম্মদ মিঠুনদের। কিন্তু এরা সবাই আছেন শীর্ষ দশের বাইরে। দশে আছেন তামিম, এগারোতে সাকিব, বারোতে মাহমুদউল্লাহ। এর পর তের, চৌদ্দ আর পনেরোতে আছেন যথাক্রমে মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন ও সাব্বির। তবে সুখবর হচ্ছে শীর্ষ দশে ইয়াসির আলী ও আফিফ হোসেন আছেন, যাদের দুজনকেই জাতীয় ক্রিকেট দলের আগামীর তারকা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

ব্যাটিংয়ে যেমনই হোক। বোলিংয়ের তালিকাটা দেখলে মন ভরে যাওয়ারই কথা ক্রিকেটপ্রেমীদের। ব্যাটিংয়ে যেমন রান সংগ্রহের শীর্ষ স্থানগুলিতে রাইলি রুশো, নিকোলাস পুরান, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যালেক্স হেলসরা জায়গা করে নিয়েছেন, ঠিক তেমনই সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছেন পাঁচ বাংলাদেশি তারকা—১৮ উইকেট নিয়ে শীর্ষে তাসকিন আহমেদ, পরের চারটি স্থানে আছেন সাকিব আল হাসান (১৭), মাশরাফি বিন মুর্তজা (১৬) আরাফাত সানি (১৩), শফিউল ইসলাম (১৩)। ছয় নম্বরে চিটাগং ভাইকিংসের রবি ফ্রাইলিংক ১২ উইকেট নিয়ে থাকলেও পরের তিনটি জায়গা নিয়েছেন ফরহাদ রেজা, আবু জায়েদ, খালেদ আহমেদ। জায়েদ, খালেদ উদীয়মান বোলার। তবে এখানেও একটা আফসোস আছে। খুব ভালো করছেন না জাতীয় দলের মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ৯ ম্যাচে মাত্র ৮ উইকেট নিয়েছেন। উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজের স্থান আঠারোতে!

মুশফিক মনে করেন নিজেদের সুনামের কথা বিবেচনা করেই দেশি ক্রিকেটার বা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ভালো করা উচিত, ‘জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের যে সুনাম বা নাম ডাক, সেটি বিবেচনা করেই সবার ভালো খেলা উচিত। আমাদের কাছে বিপিএলের যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই অনেক কিছুর প্রত্যাশা রাখে।’

তবে মুশফিক আবেগের জায়গা এক পাশে রেখে নিখাদ ক্রিকেটীয় দিকটাকেও বিবেচনা করতে বললেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আমি ১০ করি আর ৭০ করি আমার টিম যেন জেতে। আর দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রানটা আমি করতে চাই। সেদিক থেকে মনোযোগী থাকার চেষ্টা করি এবং সেভাবেই পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করি।’

মুশফিকের আশা বিপিএলের বাকি ম্যাচ গুলিতে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা ভালো খেলবেন, ‘দলগুলির (বিপিএলের) তিন-চারটা করে ম্যাচ বাকি আছে। আমার মনে হয় জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা বা বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা সবাই নিয়মিত রান করবে। আর আমি চেষ্টা করব যেভাবে রান করছি সেভাবেই আরও বড় কিছু রান করতে।’

এটা কেবল মুশফিকের আশাই নয়, দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা। যত বড় বিদেশি ক্রিকেটারই আসুক। বিপিএলের শোভা কিন্তু দেশিরাই। দিন শেষে সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহরা রান করুক, দর্শকেরা কিন্তু সেটিই খুব করে চায়।