চারে উঠেও শেষ চার নিশ্চিত নয় রাজশাহীর

>১৯০ রানের লক্ষ্যও কী অনায়াসে পেরোল রাজশাহী কিংস। সিলেট সিক্সার্সকে হারাল ৫ উইকেট আর ১২ বল হাতে রেখে। উঠে এল টেবিলের চারে। তবু শেষ চার নিশ্চিত হয়নি

বিপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচটা জয় দিয়েই শেষ করতে চেয়েছিল রাজশাহী কিংস। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এ পর্বের শেষ ম্যাচে সে লক্ষ্যটা পূরণ হয়েছে। সিলেট সিক্সার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের কাজটা সেরে রেখেছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। এখন তাদের প্রার্থনা থাকবে পরের দুটি ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের হার। ঢাকায় গিয়ে সাকিব আল হাসানের দলের শেষ দুটি ম্যাচ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে। এর একটিও ঢাকা জিতে গেলে রাজশাহীর বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।

রাজশাহীর দুর্ভাগ্য বলতেই হবে। আজকের ম্যাচটা তো দারুণ ব্যাটিংয়েই জিতেছে তারা। এমন ব্যাটিং গোটা টুর্নামেন্টে হলে নিজেদের ভাগ্যটা নিজেরাই গড়ে নিতে পারত রাজশাহী। কিন্তু তা হয়নি। বিপিএলে টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ভুগিয়েছে। দুই দেশি তারকা মুমিনুল হক আর সৌম্য সরকার রান পাননি। ইংলিশ তারকা লরি ইভানস দেরিতে ফর্মে এসেছেন। প্রথম দিকে টপ অর্ডার নিয়ে এন্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্ষতিই করেছে তাদের। নেতিবাচক রান রেটটা শেষ পর্যন্ত সর্বনাশের কারণ হয়ে যেতে পারে। ঢাকাকে শেষ দুই ম্যাচের একটিতে জিতলেও শেষ চার দেখাচ্ছে এই দুই দলের রান রেট।

তার পরেও আশা এখনো আছে। ক্রিকেটে ঘটে যেতে পারে অনেক কিছুই। আশায় বুক বাঁধতে তো আর ক্ষতি নেই রাজশাহীর। ঢাকা এক ম্যাচে যাচ্ছেতাইভাবে হারলেও দৃশ্যপটটা বদলে যেতে পারে। খুলনার পর এবার সিলেটের বিদায়ও নিশ্চিত হয়ে গেল।

সিলেট আজ প্রথমে ব্যাটিং করে বড় স্কোরই গড়েছিল। শিশির যতই হাত বাড়িয়ে দিক, ভাগ্য নির্ভর করছে এমন স্নায়ুর ম্যাচে ১৯০ রান তাড়া করা কঠিন। রাজশাহী সে কঠিন কাজটাই করেছে সাফল্যের সঙ্গে। করতে পেরেছে আসলে ইভানস ও রায়ান টেন ডেসকাটের ব্যাটিংয়েই। মাত্র ৪৪ বলে এই দুই ব্যাটসম্যান ১০৯ রানের জুটি গড়েই সিলেটকে ছিটকে দেন ম্যাচ থেকে। ইভানস ৩৬ বলে ৭৬ আর ডেসকাট করেন ১৮ বলে ৪২। ইভানসের ব্যাটে ছিল ১০টি চার ও দুটি ছক্কা। ডেসকাট মেরেছেন ৩ চার ও ২ ছক্কা।

দলের বোলারদের বেধড়ক মার খেতে দেখে আর ব্যাটিংয়ের শুরুটা দেখে রাজশাহী সমর্থকেরা কতটা আশাবাদী ছিলেন, বলা কঠিন। দলীয় ১৪ রানে ফেরেন জাকির হাসান। তাসকিন আহমেদের বলে এবাদত হোসেনের ক্যাচ। টুর্নামেন্টে তাসকিনের ২১তম শিকার।

এরপর জনস্টন চার্লস শাহরিয়ার নাফীসকে সঙ্গে নিয়ে ৪২ রানের একটা জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরান রাজশাহীকে। ২৬ বলে ৩৯ করে অলক কাপালির বলে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দেন চার্লস। শাহরিয়ার ১৩ বলে ৯ রান করে কাপালির বলেই আফিফের হাতে ক্যাচ দেন। এই সময় সিলেট কিন্তু জয় দেখছিল। কিন্তু ইভানস আর ডেসকাট সব হিসাব পাল্টে দেন। জয় থেকে ১৬ রান দূরে প্রথমে ডেসকাট আর ১৩ রান দূরে ইভানস ফিরলেও ততক্ষণে ম্যাচের অনেক বাইরে সিলেট। বাকি কাজটা ক্রিস্টিয়ান জঙ্কার আর সৌম্য সরকার সেরে ফেলেন খুব সহজেই। কোনো চাপে না পড়েই।

সিলেটের ১৮৯ রানের ইনিংসে সবচেয়ে বড় অবদান নিকোলাস পুরানের। তিনি রীতিমতো তাণ্ডবই চালিয়েছেন রাজশাহীর বোলারদের ওপর। ৩১ বলে ৭৬ রান করেছেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি করে বাউন্ডারি ও ছক্কার মার! বাংলাদেশের সাব্বির রহমান শুরুটা করেছিলেন। তিনি ৩৯ বলে ৪৫ করে আউট হন। লিটন দাস আর আফিফ হোসেনের ওপেনিং জুটিতে মাত্র ১০ রান এলেও ইংলিশ তারকা জেসন রয়কে সঙ্গে নিয়ে আফিফ পাল্টা লড়াইটা ভালোই করেছিলেন। আফিফ করেন ২৫ বলে ২৯ আর জেসন ৮ বলে ১৩।

রাজশাহীর পক্ষে কামরুল ইসলাম রাব্বি ৩০ রান দিয়ে নিয়েছে ২ উইকেট। আরাফাত সানি, মিরাজ, মোস্তাফিজরা খরচে বোলিংয়ে নিয়েছেন একটি করে উইকেট। সিলেটের বোলাররাও ছিলেন খরচে। সোহেল তানভীর অবশ্য ২৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। কিন্তু বাকিরা সোহেলের মতো বোলিং করতে পারেননি। তাসকিন একটি উইকেট নিয়েছেন। এবাদত, নাবিল সামাদরা ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে অভিজ্ঞ অধিনায়ক কাপালি নিয়েছেন ২ উইকেট।

দিনটা শেষ পর্যন্ত ছিল লরি ইভানসের। ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান এবার একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আজ তৃতীয় সত্তরের ইনিংস খেললেন। সদ্যই বিয়ে করেছেন। তবে এখনই ঘরে ফেরার সুযোগ হচ্ছে না ইভানসের। রাজশাহীর ম্যাচ শেষ হলেও ঢাকার দুটি ম্যাচ দেখতে হবে। কে জানে, হয়তো ঢাকার পরের ম্যাচেই নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে রাজশাহীরও ভাগ্য!