'শূন্য'তে এগিয়ে দেশি ক্রিকেটাররাই!

তামিম তিন ম্যাচে কোনো রান করতে পারেননি। ছবি: প্রথম আলো
তামিম তিন ম্যাচে কোনো রান করতে পারেননি। ছবি: প্রথম আলো

দুজনের হাতেই এখনো এক ম্যাচ বাকি। সেই ম্যাচটি আবার বিপিএলের ফাইনাল। শূন্য মারার প্রতিযোগিতায় একে-অপরকে ছাপিয়ে যেতে আদর্শ মঞ্চ-ই বটে!

শূন্য মারা—কথাটা ঠিক ব্যাটসম্যানসুলভ নয়। আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস সমর্থকেরা শুনলে তো তেড়ে আসবেন। কী, আমাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে রসিকতা! তাও এমন দুজন খেলোয়াড় যাঁরা কালই কুমিল্লাকে তুলেছেন ফাইনালে। কাল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে তামিম ইকবাল হয়তো (১৭) তেমন ভালো করতে পারেননি। তবে এনামুল হকের ৩৯ রানের ইনিংস কুমিল্লার ফাইনালে উঠতে ভালোই কাজে লেগেছে। আবার এ দুজন ব্যাটসম্যান একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ তালিকায়ও কুমিল্লাকে তুলেছেন শীর্ষে। ‘শূন্য’ মারার তালিকা—এবার বিপিএলে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার শূন্য রানে আউট হওয়ার এই তালিকায় কুমিল্লা শীর্ষে, এ দুজনের কল্যাণে (!)।

কুমিল্লার এই দুই ব্যাটসম্যান বিপিএলে এবার সমান ১৩টি করে ম্যাচ খেলেছেন। শূন্য রানে আউট হওয়ার হিসেবেও তাঁরা দুজন সমান। সর্বোচ্চ ৩বার করে ‘ডাক’ মেরেছেন দুজন। রসিকতাটা তাই হতেই পারে। বিশেষ করে বিপক্ষ দলগুলোর সমর্থকেরা বলতেই পারেন, ফাইনালে কে কাকে ছাপিয়ে যাবেন? কীসে ছাপিয়ে যাবেন, থাক তা আবারও বয়ান না করাই ভালো। কুমিল্লার সমর্থকদের মনের অবস্থাও তো বুঝতে হবে।
ব্যাটসম্যান হতে গেলে ‘ডাক’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হতেই হবে। যদিও ব্যাটসম্যানদের প্রতিজ্ঞা থাকে ঠিক তার উল্টো। জীবনেও ‘ডাক’ মারব না। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটেছে তার উল্টো। ক্যারিয়ারে অন্তত একবার হলেও গোল বৃত্তটি হজম করতে হয়েছে বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানকে। আর তামিম এবার বিপিএলে তো এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন যা আগে কখনো ঘটেনি। টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট—যা তাঁর ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো। চিটাগং ভাইকিংস ও সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে কোনো রান না করেই আউট হয়েছিলেন তামিম। আর সর্বশেষ শূন্য রানে আউট হয়েছেন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে।

এনামুল অবশ্য এ ক্ষেত্রে তামিমের চেয়ে অভিজ্ঞ (!)। তবে সেটি বিপিএলে, আন্তর্জাতিক ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে নয়। এ দুটি সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে শূন্য রানে ফেরায় তামিমের অবস্থান বেশ উঁচুতে। কিন্তু বিপিএলে এনামুল তামিমের চেয়ে এগিয়ে তবে ইমরুল কায়েসের পেছনে। এবার তিনটি ‘ডাক’ মেরে এনামুল টপকে গেছেন মাশরাফি, সাব্বির, রুবেলদের। মোট ৮টি ‘ডাক’ নিয়ে এনামুল বসেছেন ইমরুলের পরেই—দুইয়ে। আর ইমরুলকে বিপিএলের প্রথম ‘শূন্যধিরাজ’ বলাই যায়, —ওই যে ‘রাজাধিরাজ’ শব্দটির অনুকরণ করে। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ‘ডাক’সংখ্যাকে দুই অঙ্কে উন্নীত করা প্রথম ব্যাটসম্যান যে ইমরুল! তাঁর ঝুলিতে মোট ১০টি ‘হাঁস’—মানে ডাক।

তামিমের মতো এনামুলও তিন ম্যাচে ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। ছবি: প্রথম আলো
তামিমের মতো এনামুলও তিন ম্যাচে ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। ছবি: প্রথম আলো

সে যাই হোক, কথা হচ্ছিল তামিম ও এনামুলের পাশে দেশি ভাই-বেরাদারদের থাকা নিয়ে। সেটি আসলে এবার বিপিএলে ‘ডাক’ মারার খেরোখাতা। অন্তত ২টি ‘ডাক’ মেরেছেন এমন ক্রিকেটারদের নিয়ে শীর্ষ দশের তালিকাটি একবার দেখুন। তাহলেই দেশি ক্রিকেটারদের একে-অপরের প্রতি টান বোঝা যায় বিলক্ষণ। পরিসংখ্যান বলছে এই শীর্ষ দশে বিদেশি ক্রিকেটার যে মাত্র দুজন! লরি ইভান্স ও অ্যালেক্স হেলস। দুজনেই এই বিপিএলে সেঞ্চুরিয়ান, দুজনের ‘ডাক’সংখ্যাও দুটি। বাকি ৮জনই বাংলাদেশি।

সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা—তামিম ও ইমরুল ছাড়া এই শীর্ষ দশের বাকি ছয় ক্রিকেটার। দেখে মনে হতেই পারে আহা, রসগোল্লার প্রায় পুরোটাই দেশি ফ্লেভার!

বিপিএলে এবার সবচেয়ে বেশি শূন্যতে আউট হয়েছে যাঁরা:

    খেলোয়াড়

         দল

ম্যাচ

ইনিংস

শূন্যসংখ্যা

এনামুল হক

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

১৩

১৩

তামিম ইকবাল

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

১৩

১৩

মাশরাফি বিন মুতর্জা

রংপুর রাইডার্স

১৩

রুবেল হোসেন

ঢাকা ডায়নামাইটস

১৩

অ্যালেক্স হেলস

রংপুর রাইডার্স

মেহেদী হাসান মিরাজ

রাজশাহী কিংস

১২

১০

লরি ইভান্স

রাজশাহী কিংস

১১

১১

লিটন দাস

সিলেট সিক্সার্স

১১

১১

ইমরুল কায়েস

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

১৩

১২

সাকিব আল হাসান

ঢাকা ডায়নামাইটস

১৩

১৩